খায়রুল ইসলাম, গাইবান্ধা থেকে :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দান দুর্যোগ সহনীয় সুন্দর রং করা আধা পাকা একটি বাড়ি। যা পেয়েছে গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ৩০৬টি দুঃস্থ গৃহহীন পরিবার। একসময় যারা অন্যের জায়গায় ভাঙ্গাচোরা ছাপড়া এবং খড়ের ঘরে বসবাস করতো। তাদের যে এমন সুন্দর একটি আধা পাকা বাড়ি হবে যা তারা কখনই কল্পনাও করতে পারেনি। অথচ প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে তেমন একটি বাড়ি পেয়ে তারা আজ আনন্দিত এবং উচ্ছসিত। প্রাণ ভরে তাই তাদের সবার দোয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণ এবং তাঁর দীর্ঘ জীবন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের পিয়ারাপুর গ্রামের প্রয়াত সুখ চরন রবিদাসের স্ত্রী বুলবুলি রানী পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া একটি দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি। সুখ চরন রবিদাস গ্রামেই জুতা-স্যান্ডেল সেলাই করে সংসার চালাতেন। নিজের জায়গা জমি বলতে বাপের দেয়া দেড় শতক জমি এবং সেই জমিতে ছিল ভাঙ্গাচোরা টিনের একটি ঘর। তাদের ছিল না কোন রান্না ঘর এবং টয়লেট। তার উপর স্বামীর অকাল মৃত্যুতে তাদের সংসার জীবনে নেমে আসে আরও দুর্ভোগ। এমতাবস্থায় এই ভাঙ্গাচোরা ঘরেই ঝর, বৃষ্টি ও বন্যায় মানবেতর জীবন যাপন করছিল এই পরিবারটি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে এখন সে পেয়েছে দুর্যোগ সহনীয় এই বাড়ি। আধা পাকা এই বাড়িতে রয়েছে দুটি শোয়ার ঘর, একটি রান্না ঘর, পায়খানা ও টিউবওয়েল। এমন প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা বলে জানা গেছে। এই বাড়ি পেয়ে এখন বুলবুলি রাণী রবিদাসের সমস্ত দুঃখ কষ্ট দুর হয়ে গেছে। এই পরিবারটি এখন ভালোভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে।
এই বুলবুলি রাণী রবিদাসের মতো জেলার আরও গৃহহীন দুঃস্থ পরিবারদের মধ্যে একই রকম বাড়ি যারা পেয়েছেন তারা হলো- সদর উপজেলার লক্ষীপুরের মাহবুব, জুলেখা বেগম, মালিবাড়ি ইউনিয়নের রাজিব, আপ্পর আলী, আমজাদ, কুপতলা ইউনিয়নের নুরুন্নবী ও সবুজ মিয়া, সাহাপাড়ার সামাদ ও নুরবানু, বল¬মঝাড় ইউনিয়নের মানিক ও ইয়াসিন ব্যাপারী, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের আয়তন বেওয়া ও নেপেন্দ্র চন্দ্র, বাদিয়াখালী ইউনিয়নের রোশনা বেগম ও হালিমা বেগম, বোয়ালী ইউয়িনের বুলবুলি, মিরারানী, ওহাব মিয়া, খোলাহাটি ইউনিয়নের মোখলেস আলী, নাজমা বেগম, মোস্তফা, আজিমা, শাহিনা বেগম, ঘাগোয়া ইউনিয়নের হায়দার আলী ও রফিকুল, গিদারী ইউনিয়নের জেলেখা, জমিলা, আবেদা ও কবির হোসেন, কামারজানি ইউনিয়নের সমিতি রানী, মোল¬ারচর ইউনিয়নের জিয়ারুল হক ও খোকন সহ সদর উপজেলায় ৪০ জন।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, এই কর্মসুচীর আওতায় সদর উপজেলা ছাড়াও অন্যান্য উপজেলাগুলোর মধ্যে এই বাড়ি পেয়েছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৪৩টি পরিবার, সাদুল¬াপুরে ৪৬টি, পলাশবাড়িতে ৩৯টি, গোবিন্দগঞ্জে ৪১টি, সাঘাটায় ৪৬টি ও ফুলছড়িতে ৫১টি সহ মোট ৩০৬ টি পরিবার। এই বাড়ি পেয়ে ঘাগোয়া ইউনিয়নের হায়দার আলী জানান, আমার ভাগ্য অনেক ভালো। কপালে এতো ভালো রঙিন বাড়ি জুটেছে এবং সেই ঘরে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শান্তিতে ঘুমাবো- এ এক স্বপ্নের মত।
এব্যাপারে জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলী বলেন, অনেক মানুষকে ঘর দিতে পেরে তিনিও খুশি। রঙিন পাকা ঘর দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি গ্রামের মানুষগুলোর মনও রঙিন হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করছি। এক সময় দেখবেন যাদের জমি আছে ঘর নাই তারা সবাই ঘর পাবে।
জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মতিন বলেন, গত অর্থ বছরের বরাদ্দ থেকে গাইবান্ধা জেলায় ৭ কোটি ৮৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩০৬টি বাড়ি নির্মাণ করে বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। চলতি অর্থ বছরে জেলায় ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও ৪২০টি দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ করে হস্তান্তর করা হবে। এবার প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা। ৩০৬টি ঘর বন্যা ও নদী ভাঙন কবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গাইবান্ধার এসব বাড়ি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।