নিউজ ডেস্ক:
রাষ্ট্রপতি অপসারিত হলে সৃষ্টি হতে পারে সাংবিধানিক সংকট, এমন আশঙ্কা বিএনপির শীর্ষমহলে। আওয়ামী লীগ বা যে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে বিএনপি দাবি করলে দায়মুক্ত থাকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। দলটির নেতারা মনে করেন, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে সম্প্রতি যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তাতে সরকার চাইলে যে কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকেও দেশে বিদ্যমান অনেক আইনেই নিষিদ্ধ করা সম্ভব। তাই বিএনপি এ দুই ইস্যুতে নিজেরা কোনো দায়দায়িত্ব নেবে না। তারা চায় না বিএনপির কাঁধে দায় চাপিয়ে সরকার তার ইচ্ছা পূরণ করুক। এ দুটি ইস্যুতে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন। এ সরকার ব্যর্থ হোক তা কোনো অবস্থাতেই চায় না বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে জুলাই বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জিত হবে না। গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। সে কারণেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো দায় নেবে না বিএনপি। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, রাষ্ট্রপতির অপসারণ ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দায় নেবে না বিএনপি। দুটি ইস্যুকেই তারা দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছেন। দেশবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান দলটির। সংবিধানের শূন্যতা চায় না বিএনপি। রাষ্ট্রপতির অপসারণের মাধ্যমে দেশে কোনো সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হোক, আর এটা নিয়ে কোনো পক্ষ ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করুক, বিএনপি এটা কিছুতেই চায় না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগসহ কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হোক, এটাও চায় না দেশের এই বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। দলের সিনিয়র নেতাদের মতে, পতনের পর ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও দেশ-বিদেশ থেকে তাদের দোসররা চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে। দেশের ভিতরেও এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদপদবিতে ঘাপটি মেরে আছে অনেকে। তারা চাচ্ছে, এ ধরনের ইস্যু সামনে এনে দেশে একটা চরম বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ রুদ্ধ করতে। যা বিএনপি কিছুতেই হতে দেবে না। ষড়যন্ত্রকারীদের দেশ, গণতন্ত্র ও অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী কোনো ষড়যন্ত্রের সুযোগ দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ চায় না। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ইস্যুকে আরেকটি চক্রান্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি। মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার আমরা কারা? জনগণই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’ তিনি আরও বলেন, এটা আরেকটি চক্রান্ত। দেশে একটি অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য এসব কথা বলা হচ্ছে। যেটা কোনো ইস্যুই না, সেটাকে ইস্যু বানানো হচ্ছে। এ বিষয়ে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এসব চক্রান্ত সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্যা হিন্দু’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। বিএনপিও চায় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ অবশ্যই থাকতে হবে। এর মধ্য দিয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি তার রায় দিয়ে দিয়েছে। ড. ইউনূস বলেন, ‘একটি বড় দলের মতামতকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন রাষ্ট্রপতির অপসারণ এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা এখনো নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার বলেই মনে করি। দায়িত্ব তাদের, যত দাবি আসে সংবিধানকে সমুন্নত রেখে পূরণ করুক। কিন্তু সংবিধানের শূন্যতা সৃষ্টি করা যাবে না। এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, যাতে দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়।’ এসব বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে যাতে নতুন করে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। রাষ্ট্রপতির অপসারণের মাধ্যমে দেশে কোনো সাংবিধানিক শূন্যতা কিংবা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক এটা কাম্য নয়। দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ এই মুহূর্তে বিএনপি চায় না। এতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হবে। তাই এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চায় না বিএনপি। এটি হলে দেশে গণতন্ত্র উত্তরণের পথ বাধাগ্রস্ত করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক নীতিনির্ধারকের মতে, রাষ্ট্রপতিকে সরানোর পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি। সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরির কথা খোলামেলা বললেও ভিতরে ভিতরে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে দলটি। এই শঙ্কা থেকেই মূলত রাষ্টপতির পক্ষে দলটির কঠোর অবস্থান। এ পরিস্থিতিতে যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও দৃঢ় অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নেতাদের প্রশ্ন, সংবিধানের কোন প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা হবে? কী উদ্দেশ্যে সরানো হবে? রাষ্ট্রপতিকে সরানোর উদ্যোগের সঙ্গে পর্দার আড়ালে অন্য কেউ নির্বাচন প্রলম্বিত করতে অন্য খেলা খেলছে কিনা? এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করেই বিএনপি নেতারা বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক অবস্থান নিয়েছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলার আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি আছে কিন্তু আমরা নিষিদ্ধ চাই না। আমরা নিষিদ্ধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। বিএনপি চায় সব প্রতিপক্ষ নির্বাচনে আসুক। জনগণ আমাদের পক্ষে আছে, আমরা ভয় পাই না। আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাই না।’