আর্কাইভ  রবিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৫ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৫

বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট; টার্গেট জননেত্রী শেখ হাসিনা

সোমবার, ২২ আগস্ট ২০২২, দুপুর ১২:১২

Advertisement

শেখ মাজেদুল হক

আজ রক্তাক্ত বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। আঠারো বছর আগে এক শনিবারে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জড়ো হয়েছিলেন সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিলে অংশ নেবেন বলে। তারাই সেদিন দলীয় কার্যালয়ের সামনে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসের শিকার হন, যার মূল লক্ষ্য ছিলেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।

সেদিন শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত হন, ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার শ্রবণশক্তি। সেদিনের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ সবমিলিয়ে মারা যান ২৪ জন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন ৫ শতাধিক নেতা-কর্মী। আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ অগাস্ট মারা যান। প্রায় দেড় বছর পর মৃত্যু হয় ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ আর ২১ আগস্ট ২০০৪ আলাদা কিছু নয়। একই সূত্রে গাঁথা। ১৫ আগস্টের চক্রান্তকারীরাই ঘটাতে চেয়েছিল ২১ আগস্ট। ১৫ আগস্ট টার্গেট ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর ২১ আগস্টের টার্গেট ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শেষ ঠিকানা শেখ হাসিনা। তাঁর একক বিশাল ইমেজই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই বঙ্গবন্ধুর মেয়ের আবার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা চিরতরে শেষ করতেই ঘটানো হয় ২১ আগস্টের নারকীয়তা। সেদিন

শেখ হাসিনা আল্লাহর রহমতে রক্ষা পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের জন্য আল্লাহ তাঁকে আরও বড় অনেক কাজ করাতে চান বলেই বাঁচিয়ে রেখেছেন। জনসভা হওয়ার কথা মুক্তাঙ্গনে। পুলিশ সেখানে অনুমতি দিল না। সভা পাঠিয়ে দেওয়া হলো ২৩ বঙ্গবন্ধুতে। শেখ হাসিনা সভামঞ্চে বক্তৃতা শেষ করলেন। মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আইভি রহমান ছিলেন ট্রাকের সামনে। তিনি অপেক্ষায় ছিলেন দলীয় সভানেত্রীকে হাত ধরে পরম স্নেহে নিচে নামিয়ে আনবেন। ঘাতকরা সেই সুযোগ দেয়নি। তাদের ছোড়া গ্রেনেডে প্রাণ হারান বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন ৫ শতাধিক নেতা-কর্মী। এত শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ব্যবহার করা গ্রেনেড কী করে জঙ্গিদের হাতে গেল? কারা সেই গ্রেনেড তুলে দিলেন? কারা টানা বৈঠক করলেন মাওলানা তাজউদ্দিন আর মুফতি হান্নানের সঙ্গে? ঘটনার আগে-পরে গোয়েন্দা সংস্থা কেন এত বাড়াবাড়ি করেছিল? কেন পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ল আওয়ামী লীগ কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে? অনেক প্রশ্নের জবাব এখনো মেলেনি। ইতিহাসের আড়ালে থাকা অনেক কিছু বের হওয়া প্রয়োজন। 

২১ অগাস্ট হামলায় নিহত অন্যরা হলেন শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রহমান, হাসিনা মমতাজ, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। একজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে গিয়ে সেদিন গ্রেনেডের অসংখ্য স্প্লিন্টার বিদ্ধ হন তারেক আহমেদ সিদ্দিক, নজিব আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শোয়েব মো. তারিকুল্লাহসহ নেতাকর্মীদের অনেকে। আকস্মিক হামলার মুখে প্রাণ তুচ্ছ করে তারা যে মানবঢাল তৈরি করেছিলেন, সেই দুঃসাহসিক চেষ্টায় সেদিন বেঁচে যায় বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রাণ। আহত হন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। আহত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অনেকে এখনও স্প্লিন্টারের আঘাত নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এর মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে সন্ত্রাসের নজিরবিহীন নৃশংসতা দেখে বিশ্ব। রক্তমাখা বিভীষিকাময় রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ঠায় হলো ২১ আগস্ট। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর মোট ২১ বার প্রাণনাশের হামলা চালানো হয় ।বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোন মহান নেতার উপর এতবার হত্যা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়নি । কারণ বঙ্গবন্ধুর  খুনিরা ও পাকিস্তানি দোসররা খুব ভালো করেই জানে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরী বঙ্গবন্ধুর রক্ত জননেত্রী শেখ হাসিনাকে শেষ করতে পারলে তাদের অশুভ জঙ্গিবাদ ,সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সব সময় টার্গেট ছিলেন একজনই। তিনি শেখ হাসিনা। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা বুঝি না, জানি না অনেক কিছু। কিন্তু খুনিরা জানে-বোঝে শেখ হাসিনাকে শেষ করতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চিরতরে শেষ হয়ে যাবে। যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ হামলার মূললক্ষ্য ছিল দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করা, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করে হত্যা, ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

email: smh.mkt@brur@ac.bd 

 

মন্তব্য করুন


Link copied