ডেস্ক: বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর আগে ভারত, নেপাল ও ভুটানে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির কাজে ব্যবহার হতো। বর্তমানে চতুরদের্শীয় এই স্থল বন্দর দিয়ে পঞ্চগড়সহ কয়েকটি জেলার মানুষও যাতায়াত করছেন।
সহজ যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে এই বন্দর ব্যবহার করে এ অঞ্চলের মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছেন। নেপাল ও ভুটানের মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এই পথ দিয়ে সহজে যেতে পারছেন। মানুষের যাতায়াত এবং পণ্য আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে সরকার। এ ছাড়া, বন্দরকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় এই জেলায় বেকারত্বের হারও কমেছে। এই এক বন্দরের জন্য বদলে গেছে পঞ্চগড়ের চিত্র। এক কথায় বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর ঘিরে এখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে ১৯৯৭ সালে বন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে এবং ২০১৭ সালে ভুটানের সঙ্গে এই বন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২০১৬ সালে এই বন্দরে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর চতুরদের্শীয় যাতায়াত ব্যবস্থা চালু হয়। এই বন্দরের মাধ্যমে ভারত থেকে পাথর, ভুট্টা, খৈল, আদা, গম, চাল, ফল এবং নেপাল ও ভুটান থেকে উৎপাদিত ও বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানি করা হয়। এছাড়াও দেশ থেকে পার্টস, গ্লাস শিট, ওষুধ, আলু, জুস, কর্টন ব্যাগ ও খাদ্য সামগ্রী রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে এ বন্দরের কলেবর আরও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এটিকে আধুনিক বন্দরে রূপান্তরের জন্য মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করে বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি বাংলাদেশের একমাত্র চতুরদের্শীয় সংযোগস্থল। মানুষের দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এর প্রভাব খুবই উল্লেখযোগ্য। এখানে বন্দরকেন্দ্রিক প্রায় ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। পঞ্চগড়ের ১২ লাখ মানুষের জীবনমান উন্নতি হয়েছে। এ বন্দরকে আরও আধুনিক এবং অন্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগকে আরও সহজ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সড়কপথ উন্নতি করা হয়েছে। ফলে এ বন্দর ব্যবহার করে অনেকে ভারত, নেপাল ও ভুটানে যাচ্ছেন। আমাদের দেশের বিভিন্ন পণ্য আমরা রপ্তানি এবং এই বন্দর ব্যবহার করে আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিস আমরা সহজে আমদানি করছি।’
পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও জেলার বাসিন্দারা আগে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতেন। কেউ কেউ ভুরিমারী কিংবা হিলি বন্দর দিয়ে ভারতে যেতেন। এতে তাদের খরচ বেশি হতো, অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। ২০১৬ সালে বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর চালু হওয়ার পর থেকে এসব জেলার বাসিন্দারা এখন সহজে ভারতে যাচ্ছেন। কেউ কেউ সকালে গিয়ে আবার বিকেলে দেশে ফিরছেন।
গত বুধবার স্ত্রী সোমা আক্তারকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান ঠাকুরগাঁও বাসিন্দা মাজেদুল ইসলাম। চিকিৎসা শেষে গত শনিবার এ বন্দর দিয়ে দেশে ফিরেন তারা। শনিবার দুপুরে বাংলাবান্ধা বন্দরে কথা হয় তাদের সঙ্গে। মাজেদুল জানান, ভুরিমারী বন্দর দিয়ে যেতে অনেক খরচ। আবার ভোগান্তি। বাংলাবান্ধা দিয়ে সহজে, অল্প খরচে বেশ কয়েকবার চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছেন। ঢাকা যেতে যে খরচ, এর চেয়ে কম খরচে ভারতে যেতে-আসতে পারছেন।