আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১১ এপ্রিল ২০২৫ ● ২৮ চৈত্র ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১১ এপ্রিল ২০২৫
শুভেচ্ছাবার্তা:
উত্তর বাংলা ডটকম পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক ।

শিক্ষকতা শুধুমাত্র মহান পেশা নয়, এটি একটি ব্রত বা  শিল্প

শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বিকাল ০৬:৩৩

Advertisement

শেখ মাজেদুল হক

শিক্ষকতা মহান পেশা। এটিকে চাকরি ধরে নিলে চলবে না। এর মধ্যে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি মানবসেবার সুযোগ রয়েছে। তাই এটি একটি ব্রত। ‘প্রাথমিক পর্যায়ে যাঁরা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, তাঁরাই আমার মহান শিক্ষাগুরু প্রিয় শিক্ষক। উনাদের কাছে চীর ঋণী। তাঁরা কাদামাটির মতো করে প্রাথমিক ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র দাস স্যার ছিলেন আমার জীবনের সবচাইতে দেখা শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। যিনি তার দায়িত্ববোধ, সচেতনতা ,কর্মদক্ষতা এবং শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের জন্য ছিলেন অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব ।আমার এই প্রিয় স্যার পরলোক গমন করেছেন ।আমি উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি । এখনো আমি সেই স্যারকে স্বপ্নে দেখি ।আমার স্যার শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র দাস শুধুমাত্র আমারই শিক্ষক ছিলেন না তিনি আমার মায়ের ও শিক্ষক ছিলেন। আমার জীবনের যত প্রিয় শিক্ষক আছেন তারা অধিকাংশই সনাতন ধর্মের অধিকারী ছিলেন। অনুভব করেছি সত্যিকার অর্থেই এই মহান পেশাটাকে উনারা উনাদের ধর্মের মত পালন করা চেষ্টা করতেন।।

শিক্ষকতা কিন্তু আর পাঁচটা পেশার মতো নয়। মানুষ গড়ার কারিগর হলেন শিক্ষক। তাই শিক্ষকতা শুধুমাত্র পেশা নয়, এটি একটি শিল্প। যেখানে শিক্ষকেরা ছাত্রদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করেন এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করেন। একজন ভালো শিক্ষকের ধ্যানজ্ঞান হচ্ছে তাঁর শিক্ষকতা, তিনি তাঁর ভেতরেই বাস করেন। করতে হয়, কারণ যে গুরুদায়িত্ব তিনি কাঁধে নিয়েছেন, সেটা যদি তিনি সঠিকভাবে করতে চান, তাহলে এটা ছাড়া তাঁর উপায় নেই। শিক্ষকতা বা অধ্যাপনা একটি মহান পেশা। এই পেশার মানুষের মধ্যে কে প্রিয়, আর কে প্রিয় নন, তা বাছাই করা কঠিন। এমন একদিন আসুক, যেদিন প্রিয় শিক্ষক বাছাই করতে হবে না, দেশের প্রতিটি শিক্ষক হয়ে উঠবেন সবার কাছে প্রিয় মানুষ। শিক্ষক মানেই তো সবার প্রিয় হওয়ার কথা ছিল। তাঁদের খুঁজে বের করার কথা ছিল না। পরিতাপের বিষয়, আজ প্রিয় শিক্ষকদের খুঁজতে হচ্ছে। শিক্ষকেরা প্রিয় শিক্ষক হওয়ার জন্য শিক্ষকতা করেন না। তাঁরা নৈতিকভাবে তাঁদের মহান দায়িত্বটা পালনের চেষ্টা করেন। যে যতো নিজের বিবেকের তাড়নায় সুচারুরূপে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব এবং কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারবেন তিনি এমনিতেই প্রিয় শিক্ষক হয়ে যাবেন।

বাবা মার পরে একমাত্র শিক্ষক যিনি অন্যের সন্তানের সফলতা দেখে আনন্দে উদ্বেলিত হন। একজন শিক্ষকই শুধু বুঝেন তার শিক্ষার্থীর সফলতায় তিনি কতটা পরম শান্তি লাভ করেন। আর অন্য কোন পেশায় এই শান্তি পাওয়া যায় না। খুব সাধারণভাবে বোঝালে যিনি তোমাকে একদিনের জন্যও কোনো বিষয়ের শিক্ষা প্রদান করেছেন তিনিই শিক্ষক। শিক্ষক, শিক্ষা ও শিক্ষার্থী শব্দগুলো পারস্পরিক নির্ভরশীল ও একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষকবিহীন শিক্ষা যেমন কল্পনা করা যায় না তেমনি শিক্ষার্থীবিহীন শিক্ষাও অর্থহীন। শিক্ষক তার কাছে আসা শিক্ষার্থীদের জীবনে বেঁচে থাকার, জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার মন্ত্র শিখিয়ে দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মনের আবেগ নিয়ন্ত্রণের দীক্ষা দেন। তিনি চান যেন তার শিক্ষার্থী জীবনের সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিজয়ী হোক। আবার একজন শিক্ষককে বলা হয় আজীবন ছাত্র। জ্ঞান অন্বেষণ তার তৃষ্ণা অপরিসীম। নিজে না শিখলে অন্যকে কী শেখাবেন। তাই তো তাকে পড়তে হয়, জানতে হয় এবং জানাতে হয়। জানানোর কাজটি হচ্ছে শিক্ষকতার জীবনের সব থেকে পরিশ্রমী এবং কঠিন কাজ। কারণ, তার জানানোর কাজটি সফল হয়েছে কিনা তা বুঝতে পারাও একটি বড় দক্ষতার ব্যাপার। একজন শিক্ষক হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যার মধ্যে পরামর্শক হওয়ার, শিক্ষা সহায়ক ব্যক্তি, শিক্ষক নিজেই শিক্ষা সহায়ক সামগ্রীর উন্নয়ন সাধন করবেন, তার আচরণ হবে রোল মডেল, তিনি সমাজের দর্পণ, কারিকুলাম প্রস্তুতকারক ও মূল্যায়নকরণ, শিক্ষা সংগঠক এবং নির্দেশক ইত্যাদি গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ।

বেশির ভাগ পেশাজীবীর কাজ হচ্ছে ‘প্রোডাক্ট’ তৈরি করা, আর শিক্ষকেরা তৈরি করেন মানুষ। এই দুইয়ের পার্থক্য বলতে গেলে সেটা বাহুল্য হবে। অন্যদের ভুলে যে ক্ষতি হয়, সেটা আংশিক, পূরণীয়। আর শিক্ষকদের ব্যর্থতায় যে ক্ষতি হয়, সেটা সার্বিক, অপূরণীয়। একজন ভালো শিক্ষক এটা জানেন। তাই তিনি কখনো তাঁর বেতন অনুপাতে কাজ করেন না। সারা দিন কাজ করলেও তিনি কখনো ওভারটাইমের কথা চিন্তা করেন না। তিনি যা করেন, নিজ দায়িত্বেই করেন। শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাইয়ে দিলেই হয়তো শিক্ষার্থী বা অভিভাবক খুশি, কিন্তু তিনি কখনোই শুধু পরীক্ষায় পাস করানোর জন্য পড়ান না। শিক্ষার্থীকে শাসন করলে অজনপ্রিয় হতে পারেন জেনেও তিনি প্রয়োজনে শাসন করতে ছাড়েন না। নিজে পড়াশোনা না করলে কেউ তাঁকে কিছু বলবে না, কিন্তু তিনি সেই সুযোগ নেন না। পরীক্ষার খাতা দেখা কিংবা ক্লাসে ফাঁকি দিলে কারও কিছু বোঝার উপায় নেই, কিন্তু তিনি তা দেন না। এ রকম আরও বহু বিষয় আছে। অর্থাৎ যিনি ভালো শিক্ষক হন, নিজের তাগিদেই হন। জোর করে তাঁর কাছ থেকে কিছু আদায় করা যায় না।

শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকদের পায়ের নিচে তাঁদের স্বপ্ন বিছিয়ে দেয়। ফলে, রাষ্ট্র ও সমাজকে খেয়াল রাখতে হবে, শিক্ষকেরা যেন সেখানে খুব সাবধানে হাঁটতে পারেন। সেটা না পারলে শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের সঙ্গে আমাদের পুরো জাতির স্বপ্নও ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। সত্যি কথা বলতে একদিক থেকে শিক্ষক একজন সত্যিকারের অতিমানব যাদের থাকে সহজেই আকৃষ্ট করার ক্ষমতা। আবার একদিক থেকে শিক্ষকরা খুব সাধারণ একজন মানুষ যারা তৈরি করেন অসাধারণ সব মানুষ। শিক্ষা কোনো পেশা নয় বরং একটি সেবা। সমাজে অনেক সেবামূলক কাজ রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। শিক্ষা হচ্ছে একটি ব্রত। যে ব্রত দিয়ে তিনি তার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটান। শিক্ষকের এই কাজটির সফলতা ও ব্যর্থতার মধ্যে রয়েছে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। যোগ্য শিক্ষক তৈরি করতে হলে শিক্ষকের মর্যাদা বাড়াতে হবে।

লেখক:  সহযোগী অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ; বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। 

Email: smh.mkt@brur.ac.bd 

মন্তব্য করুন


Link copied