আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ২২ এপ্রিল ২০২৫ ● ৯ বৈশাখ ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ২২ এপ্রিল ২০২৫

অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রয় করা মায়ের পাশে ইউএনও

শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩, রাত ১০:১০

Advertisement

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: অভাবের কারণে সন্তান বিক্রয় করে সেই মা শিল্পি বেগমের পাশে দাড়িয়েছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন। শিল্পি বেগমকে সরকারী আশ্যয়ন প্রকল্পের একটি ঘর দেওয়া হয় সেই সাথে তার বাচ্চাকে ফিরিয়ে দিয়ে কর্মসংস্থানের আশ^াস দেন ইউএনও।

দেনা পরিশোধ ও চরম অভাবে নিজের ২ দিন বয়সের সন্তান বিক্রয় করে দিয়েছিলেন মা শিল্পি বেগম এমন সংবাদ প্রচার হওয়ার পরেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে উদ্যেগ গ্রহন করা হয়।

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সকালে সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের বাতেন মোড় এলাকায় শিল্পী বেগমের হাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের চাবি তুলে দেন ইউএনও বেলায়েত হোসেন। ঘর পেয়ে মহাখুশি তিনি।

জানাযায়, ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের গোয়ালপাড়া এলাকার বাসিন্দা শিল্পী বেগম ও রায়হান দম্পতি। শিল্পীর স্বামী পেশায় একজন মোটর গ্যারেজ শ্রমিক। সে আয়ে সংসারের ভরণপোষণ চালানো যেখানে কষ্টসাধ্য সেখানে আরো সন্তান নেওয়া ছিল বিলাসিতা। নিয়তি মেনে নিলেও নতুন সন্তানের খবরে যেন এ এক মরার উপর খরার ঘা। আরেক সন্তান আসছে শুনে নিজেকে তৃতীয় লিঙ্গ (হিজরা) বানিয়ে তিন সন্তান আর স্ত্রীকে ছেড়ে ঢাকা পাড়ি জমান স্বামী রায়হান।

এরপর থেকেই অভাবের সংসার নিয়ে বিপাকে পরে যায় শিল্পী বেগম। সন্তান গর্ভে থাকার সময় থেকে বাড়ি ভাড়া ও পাশের দোকান মিলে প্রায় ৫ হাজার সাতশত টাকা বাকি হয় শিল্পীর। অন্য সন্তানদের যতœও বা খাবার যোগার করতে হিমশিম খেতে হয়। পেটে সন্তান থাকায় মানুষের বাসায় কাজ করতেও পারে না শিল্পি।

অবশেষে গত বুধবার ২৫ অক্টোবর বিকালে শিল্পি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। স্বাভাবিক ভাবেই সন্তানের জন্ম হয় তবে জন্মের পরেই বাচ্চার জ¦র ও অসুস্থ হয়ে পরে। পরের দিন বৃহস্পতিবার সেই বাচ্চাকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয় শিল্পি। একে তো অভাবের সংসার তার উপরে সন্তানের চিকিৎসা খরচ চালানো কোনভাবেই সম্ভব নয় শিল্পির।

চিকিৎসার অভাবে বাচ্চাটির অবস্থা যখন খুবই খারাপ তখন হসপিটালেই নি:সন্তান এক মা শিল্পির বাচ্চাটি নিতে ইচ্ছা পোষন করে। সেই মোতাবেক শিল্পি তার বাচ্চাটি সেই মা কে দিতে রাজি হয় এবং ষ্ট্যাম্পে লেখালেখির মাধ্যমে সন্তান হস্তান্তর করা হয়।

এই বিষয়ে শিল্পি বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার আরো তিনটি সন্তান রয়েছে। স্বামী নাই ওই বাচ্চাগুলো নিয়ে সংসার চালাতে পারি না। মানুষের বাসায় কাজ করে খরচ চালাই। এই নবজাতক বাচ্চা নিয়ে কিভাবে মানুষের বাসায় কাজ করবো। আবার বাচ্চাটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাহিরে অনেক দেনা আছে। সেজন্য বাচ্চাটা আমার যেন ভালো থাকে তাই ওই মা কে দিয়ে দিছি। একবারে লেখাপড়া করে দিয়েছি। সেজন্য উনি আমাকে সহযোগীতা করেছে। সেই টাকা দিয়ে আমি বাসা ভাড়া দিয়েছি ও চাল কিনেছি। এই বাচ্চাটি লালন পালন করা সম্ভব না আমার পক্ষে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন জানান, অভাবের তাড়নায় কোন মা সন্তান বিক্রয় করেছে এমনটা খবর পাওয়ার পরেই আমরা সেই মায়ের পাশে এসে দাড়াই। আজ তাকে একটি ঘর উপহার দেওয়া হইলো। পরবর্তিতে তার সন্তান তার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হবে।

মন্তব্য করুন


Link copied