নিয়াজ আহমেদ সিপন, লালমনিরহাটঃ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার ও প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নার দ্বন্দ্বের জেরে দুই শিক্ষকের শাস্তির দাবি তুলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাশ বর্জন করে কলেজে তালা ঝুলিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
রোববার(২৭ অক্টোবর) দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শেষে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাশ বর্জন ঘোষনা করে কলেজের মুল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারকে অপসরন, মাসিক বেতন ও বোর্ড ফি ব্যাতিত অন্য কোন টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গ্রহন করা যাবে না, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোন ধরনের হয়রানী করা যাবে না, দ্রুত কলেজে ছাত্রসংসদ গঠনসহ ৮টি দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্ট কালের জন্য সকল ক্লাশ বর্জনের ঘোষনা দেন শিক্ষার্থীরা। সর্বস্তরের ছাত্র সমাজের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে এমন ঘোষনা দিয়ে কলেজের মুল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও উত্তরবাংলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মোজাম্মেল হোসেনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হেয় করায় প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না শাস্তির দাবি করেছেন।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার গত ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যোগদান করেন। যোগদানের পর ওই কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পরেই অধ্যক্ষের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অভিযোগ তুললে ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নাকে গত ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ সাময়িক বরখাস্ত করেন। এরপরে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হতে শুরু করে। গত বছর থেকেই উত্তরবাংলা কলেজকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। একই সালের ৮ এপ্রিল রংপুর সাইবার ট্রাইবুনালে একটি মামলা করেন। পরবর্তিতে শিক্ষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না গত ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী উচ্চ আদালত রীটপিটিশন করলে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং চলতি বছরের ২১ মার্চ স্থগিত আদেশ দেন আদালত।
একই সাথে গত ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও তদন্ত করে অনিয়ম দুর্নীতির সত্যতা পেয়ে অধ্যক্ষ আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে সুপারীশ করেন। আওয়ামী ক্ষমতার জোরে সব কিছুই হজম করে অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে ২০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন নির্যাতিত শিক্ষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না।
এদিকে গত জুলাই আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীরা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালিন আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ঘটায়। বিষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিবন্ধি প্রজন্ম উল্লেখ করে গত ১৮ জুলাই নিজের ফেসবুকে পোষ্ট করে আওয়ামী প্রেমকে প্রমানীত করেন অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতার বিজয় হলেও আওয়ামী দোষর অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সপদে বহাল রয়েছেন। অধ্যক্ষের এমন আচরনে ক্ষুব্ধ হয়ে তার গ্রেপ্তার দাবিতে ২০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনশন করেন প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না।
অবশেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্দেশে শুক্রবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের কটাক্ষ করায় অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোবাশ্বের হোসেন।
মানববন্ধনের শিক্ষার্থীরা বলেন, অধ্যক্ষ ও প্রভাষকের দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষার কার্যক্রমে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তাই তাদের দুজনেরই বিচার দাবি জানিয়েছি। দ্রুত অধ্যক্ষকে অপসারণ ও প্রভাষক কে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার দাবি জানাই।
অধ্যক্ষ ও প্রকাশকের এসব কাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাই সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের অপসরন ও উত্তর বাংলা কলেজের প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নাসহ দুজনেরই ৮ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাশ বর্জন ঘোষনা করে কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বক্তব্য রাখেন উত্তর বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী বখতিয়ার খলজি, রফিকুল ইসলাম, রাতুল হাসান, জেমস হাসান, শাহারিয়ার ও সিয়াম।
উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার বলেন, ফেসবুকের পোষ্ট বিষয়টি অনেক আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সাথে বসে আপোষ হয়েছে। ওই আন্দোলনে নিহতদের উদ্দেশ্যে কলেজ মিলাদ করা হয়েছিল। আবারও কেন তারা ফুসে উঠেছে তা জানা নেই। তবে একটি গোষ্ঠি অনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটির সুনামক্ষুন্ন করার পায়তারা করছে। ৎ
উত্তর বাংলা/ নিয়াজ আহমেদ সিপন