উত্তর বাংলা ডেস্ক : বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে ২০২৪। দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন বছর ২০২৫। শোবিজ জগতের জন্য বছরটি ছিল বেশ ঘটনাবহুল। বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও সোশ্যাল মিডিয়া ছিল অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী। একের পর এক ভাইরাল কন্টেন্টে বিনোদনে মজে ছিলেন মানুষ।
প্রতিবারের মতো এবারও বেশ কিছু সংলাপ ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। গোটা বছরজুড়ে বাংলার মানুষদের মাঝে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল এই সংলাপগুলো। সাধারণ মানুষ মুখে মুখে যেমন শোনা গেছে এসব, তেমনি ফেসবুকের টাইমলাইনে বছরজুড়ে ছিল এসব সংলাপের চর্চা।২০২৪ সালের তেমনই ১০টি সংলাপ তুলে আনা হলো পাঠকদের উদ্দেশে।
হাউন আঙ্কেল
চলতি বছর একটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বিনোদন জগতের জনপ্রিয় তারকা সিমরিন লুবাবারও একটি ডায়ালগ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়। ডিবিপ্রধান হারুণকে তিনি ‘হাউন’ উচ্চারণ করায় নেটপাড়ায় বেশ ট্রলের শিকার হন এই শিশু তারকা। এর আগে, ২০২৩ সালে তার ‘কেন্দে দিয়েছি’ ডায়ালগটিও নেটপাড়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছিল।
উহু মুরুব্বি
মাওলানা মোস্তাক ফয়েজীর একটি বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন তোলে। একটি ওয়াজ মাহফিলে বয়ান দিচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ সে মাহফিল ছেড়ে একজন উঠে চলে যেতে চাইলে মাওলানা মোস্তাক ফয়েজী তার বয়ানের মাঝেই বলেন—মুরুব্বি, উহু উহু। তার ‘এই সোনামণি, বসো, উহু উহু’ ডায়ালগটিও ব্যাপক ভাইরাল হয় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আপনি প্লিজ উত্তেজিত হবেন না
‘মেট্রো টু দ্য পয়েন্ট’ নামে একটি টকশোর একটি ভিডিও ক্লিপ এ বছরই নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়। যেখানে উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরী ও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একসময় বিচারপতি মানিক দীপ্তির উদ্দেশে বলেন, আপনি কথা বলবেন না। প্রতি উত্তরে দীপ্তি বলেন, ‘আপনি, প্লিজ, উত্তেজিত হবেন না।’
এই ওয়েট ওয়েট
দেশে কোটা আন্দোলনের সময় ভাইরাল হন শিক্ষার্থী ফারজানা সিঁথি। তার বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি বলার ধরন বেশ বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছিল নেটিজেনদের। এক সেনা সৈনিকের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডাতার ভিডিও নেটপাদায় ভাইরাল হয়। সেখানেই সে সেনা সৈনিককে তিনি বলেন, এই ওয়েট ওয়েট, ইটস মাই টার্ন বলেন। এ ডায়ালগ টিকটকাররাও তাদের ভিডিও তৈরিতে বেশ লুফে নেন চলতি বছর।
শেখ হাসিনা পালায় না
ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলার সময় থেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন বক্তব্য নেটপাড়ায় বেশ ভাইরাল হতে শুরু করে। আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে তিনি যখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ ডায়ালগ।
পালাব না, কোথায় পালাব
শেখ হাসিনার মতো ওবায়দুল কাদেরের ‘পালাব না, কোথায় পালাব’ ডায়ালগও বেশ ভাইরাল হয় এ বছর। নেটিজেনদের অনেকেই তাকে মজা করে ‘কাউয়া কাদের’, কাক্কু বলে মজা পান। তার আরও কিছু ভাইরাল ডায়ালগ হলো ‘সি হ্যাজ মেইড আস’, ‘একটু অপেক্ষা করা যায় না, একটুও বলব না, একটা শব্দও বলব না’, ‘মাসুদ তুমি কি কোনোদিনই ভালো হবে না’ ইত্যাদি।
প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও
গ্রামের এক শিশুর ‘প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও’ ডায়ালগটিও চলতি বছর ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়। এ বক্তব্য এতই জনপ্রিয় হয়েছিল অনেকে এ ডায়ালগকে ডিজে গান বানিয়ে নেচে ভিডিও তৈরি করেছিলেন।
আমার আবেগ কাজ করেছে, বিবেক কাজ করেনি
চট্টগ্রামে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার মো. হাসানের হত্যার তদন্তে বেরিয়ে আসে শ্বশুরকে খুন করেন তার পুত্রবধূ (অভিযুক্ত নারী আসামি) আনার কলি। সংবাদমাধ্যমে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আনার কলি বলেন, ‘আমি দোষী, আমি কি আপনাদের একবারও বলেছি আমি নির্দোষ। তখন আমার আবেগ কাজ করেছে, বিবেক কাজ করেনি।’ চলতি বছর খুনির এ ডায়ালগও সারা বছর নেটপাড়া ও লোকমুখে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।
এই মেয়ে চুপ করো
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বেশকিছু ভিডিও নেটপাড়ায় ভাইরাল হয় এ বছরই। এসব ভাইরাল ভিডিওর বেশির ভাগ ডায়ালগই টিকটকার লুফে নেন তাদের ভিডিও তৈরি করার জন্য। যার মধ্যে অন্যতম ‘এই মেয়ে চুপ করো’। ‘এই যে মহিলা এখন মুখটা বন্ধ কেন’ এ ডায়ালগটিও লোকমুখে বেশ জনপ্রিয় ছিল।
নাইস অ্যান্ড অ্যাট্রাক্টিভ
চলতি বছর সোশ্যাল মিডিয়ায় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের ভাইরাল ডায়ালগ ছিল এটি। দেশের ২২তম এ রাষ্ট্রপতি চলতি বছর সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে সাংবাদিক ও গায়িকা নবণীতা চৌধুরীর একটি ছবির নিচে নাইস অ্যান্ড অ্যাট্রাক্টিভ লেখেন। এরপর থেকেই দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ছবির কমেন্ট বক্সে, কথাবার্তার মাঝপথে ব্যবহার করতে শুরু করে রাষ্ট্রপতির এ ডায়ালগ।
এদিকে, ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল সময়ের প্রেক্ষাপটে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করে ছাত্রজনতার আরও রোষের কারণ হয়েছিলেন। আন্দোলন চলাকালে সারদেশে পুলিশের নির্যাতন ও সহিংসতায় প্রাণ হারায় অনেক শিক্ষার্থী, যা জনতাকে আন্দোলনে আরও একত্রিত করে তোলে। পাশাপাশি এ মন্তব্যের কারণে বেশ ট্রলের সম্মুখীন হন।
শহীদ আবু সাঈদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আরাফাত তখন বলেছিলেন, প্রমাণও পাওয়া গেছে যে, আন্দোলনকারীদের অনেকে ড্রাগড ছিল। তাদের ড্রাগ করা হয়েছে, যেন তারা বুক পেতে পুলিশের সামনে চলে আসতে পারে।
এছাড়া নাটক কম করো পিও, একটু নিচে পিও, স্বজন হারানোর বেদনার মতো আরও অনেক সংলাপই সাধারন মানুষের মুখে মুখে ছিল ২০২৪ সালে।