স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ কাটাতারের বেড়া স্থাপনকে কেন্দ্র করে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে বেশ কয়দিন থেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিএসএফ ও বিজিবি এবং দুই দেশের সীমান্তের গ্রামবাসীও যেন উত্তাল। মূলতো পাঁচ আগষ্টের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে বেড়েছে দুরত্ব। তবে সময় যত গড়িয়ে যায়, অর্থনীতির চাকাও সীমান্তের স্থলবন্দর গুলোকে চাঙ্গা করার পথ খুঁজতে থাকে। তেমনি ঘটনার জন্ম দিয়েছে বাংলাবান্ধা ও ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে। এই স্থলবন্দরে লেগেছে উৎসবের ছোঁয়া।
দীর্ঘ তিন বছর বন্ধ থাকার পর ভারতের পাথরবোঝাই ট্রাকের চাকা গড়ায় বাংলাদেশের দিকে। রবিবার (১২ জানুয়ারী) বিকেল পর্যন্ত ভারতের ফুলবাড়ি থেকে ৬৩টি পাথরবোঝাই ট্রাক এবং ৪টি চালবোঝাই গাড়ি সহ মোট ৬৭টি গাড়ি আসে বাংলাদেশে বাংলাবান্ধায়। সোসবারও ভারতের ৫৬ ট্রাক এসেছে পাথর নিয়ে। এ নিয়ে এলাকার মানুষকে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে দেখা যায়। অনেকের মতে এমনটা চলতে থাকলে পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে স্থানীয় অর্থনীতি।
আমদানী রপ্তানী ইউনিয়ন গুলোর নেতারা মনে করেন পুনরায় কর্মসংস্থান বজায় থাকবে কয়েক হাজার গাড়িচালক ও খালাসির। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এতে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় বাড়তে শুরু করেছে।
ইউনিয়নের সভাপতি জামির বাদশার বক্তব্য, দীর্ঘদিন পর রবিবার থেকে ভারতীয় পাথর বাংলাদেশের প্রবেশ করছে। এলাকার কয়েক হাজার মানুষের যখন উপার্জন বৃদ্ধি পায় তখন সেটা স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। বিষয়টা ফুলবাড়ি ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ব্যবসার ওপর প্রত্য ও পরোভাবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের আয় রোজগারের স্বার্থ জড়িত। এলাকার কয়েকশো ছোট দোকানের ব্যবসা ধুঁকছিল। সে সবের প্রভাব পড়েছিল স্থানীয় হাটবাজার, রিকশা-অটো- চালক ও অন্য ব্যবসায়ীদের ওপর। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাটা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায় বলেই মনে করছে স্থানীয় মহল। তবে সেই সমস্যা মিটছে বলে আশা করছেন অনেকেই।
বাংলাদেশে আমদানির ক্ষেত্রে চাহিদা রয়েছে ভারত এবং ভুটানের পাথরের। দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে এই নিয়ে ওই স্থলবন্দরে জটিলতার সৃষ্টি হয়। ভারতের পাথরবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে যেতে হলে সরকারি কোষাগারে কয়েক হাজার টাকা কর দিতে হতো। কিন্তু ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ভুটানের ট্রাক বাংলাদেশে গেলে এতদিন সেই কর দিতে হত না। ফলে ভারতীয় পাথর আসা বন্ধ ছিল বাংলাদেশে। এই সমস্যার কারণে বাংলাদেশে চাহিদা কমতে থাকে ভারতের পাথরের গাড়ির।
অপরদিকে, ভুটানের ট্রাক বাংলাদেশে যেতে থাকায় প্রভাব পড়ছিল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ওপর। সেই নিয়ে কয়েক বছর আগে থেকে আন্দোলন শুরু করে ট্রাক মালিক-চালক, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি। ভুটানের ট্রাক বাংলাদেশে যেতে হলে কর দিতে হবে বলে ঘোষণা করা হয়। পাথর আমদানী কারক জুয়েল জানালেন রবিবার থেকে সেবক ও তোর্ষা নদীর পাথর আসছে। তবে আপাতত আমদানী বন্ধ রয়েছে ভুটানের পাথর।
জুয়েল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার থেকে ভারতের পাথরবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে পাঠাতে শুরু করে ওপারের ব্যবসায়ীরা। এতে সীমান্ত ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মহম্মদ সুলতান, খাইরুল মহম্মদ, গফুর খানের মতো অনেকেই উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সীমান্ত পেরিয়ে গাড়িগুলি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশের পাথর আমদানীকারকগন বলেন ভুটানের পাথরে কর আরোপ হওয়ায় ভুটানের পাথর আসা কমেছে। যেহেতু ভারতের পাথর আসা শুরু হলো সেহেতু ভুটানের পাথরও আসবে অচিরেই বলে তারা মনে করছে।
অপর পাথর আমদানী কারন হিজবুল্লা বাহার জানান, পাথর আমদানী বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে দাম অনেক গুনে বেড়ে গিয়েছিল। এখন পাথরের বাজার কমে আসবে।