স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ গণ অধিকার পষিদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, আওয়ামী লীগ যদি আবার ফিরে আসে এরচেয়েও ভংঙ্কর পরিস্থিতি হবে। কাজে আওয়ামী লীগের প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগকে এই দেশের রাজনীতিতে আর মাথাচারা দিতে দেওয়া যাবে না। যে আওয়ামী লীগ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দিদেশী শক্তির ওপরে নির্ভর করে, বিদেশি শক্তির সহযোগিতায় এ দেশে গণহত্যা চালিয়ে মায়ের বুক খালি করে, স্ত্রীকে বিধবা করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে সেই শেখ হাসিনা নরঘাতকে পরিণত করেছে, সেই আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার এই দেশের রাজনীতিতে ছাড় হবে না।
শনিবার(১৮ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২৪ এর গণঅভুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আয়োজিত গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, হাসিনার পতনের পরে আমাদের প্রতিবেশি দুষ্ট রাষ্ট্র ভারত আমাদের প্রতি বন্ধুসুলভ আচরণ করছে না। তারা অসহিষ্ণু আচরণ করছে। সীমান্তে উস্কানি দিচ্ছে। কাটাতারের বেড়া দেয়ার চেষ্টা করছে। কোথাও কোথাও শূন্য রেখার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে, উস্কানি দিচ্ছে। ভারত যদি আগুন নিয়ে খেলে, যা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করবে, অস্থিরতা তৈরি করবে। ভারতকে আমরা হুশিয়ারি দিতে চাই। আপনাদের সেভেন সিস্টার্স কিন্তু স্থির থাকবে না। বন্ধুসুলভ আচরণ করবেন, আমরা বন্ধু সুলভ আচরণ দেখাবো।
আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে উল্লেখ করে ভিপি নুর বলেন, পচাত্তরে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পরে ছেয়ানব্বইয়ে ২১ বছর পরে ক্ষমতায় এসেছিল। এসে কি প্লান পরিকল্পনা করেছিল আপনারা দেখেছেন ? ভারতের সহযোগিতায় ২০০৮ সালে আরেকটি নীলনক্সা নিয়ে ক্ষমতায় এসে এ দেশের গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে, মানুষের ভোটাধিকারকে হরণ করে এই দেশটাকে ভারতের করকরাজ্যে পরিণত করেিেছল। যার ফলে কাটাতারে ফেলানীরা ঝুলেছিল, সীমান্তে প্রতিরত লাশ পড়েছিল, আমরা নিজ দেশে পরাধীর হয়েছিলাম।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কথায় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিদেশি শক্তির উপরে নির্ভর করে এদেশে গণহত্যা চালিয়ে মায়ের বুক খালি করে বিধবা করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে শেখ হাসিনা। নরঘাতক পরিণত করেছে সেই আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার এই দেশের রাজনীতিতে কবর রচিত হয়েছে তাদের রাজনীতিতে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথায় নুর বলেন, এই সরকারের অধীনে যদি স্থানীয় নির্বাচন হয় সেটা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন। রাজনৈতিক দল যেই সরকারই ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করেছে তাদের প্রার্থীদের কারণে অন্য প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণায় ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি। যেহেতু জাতীয় নির্বাচন আমরা এই সরকারের হাতে দিয়েছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করলে সমস্যা আছে ?
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব আপনাদের। জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছেন আপনারা। কাজেই এক দল পেশীশক্তি দেখাবে, আরেক দলের মুখোমুখি দাঁড়াবেন না। যদি মিলেমিশে থাকতে পারি তবেই আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারব। গণ অধিকার পরিষদ সব সময় দেশ ও জাতির বৃহত্তর দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে, আগামিতেও করবে। আমরা কোন রাজনৈতিক বিভাজন চাই না। আমাদের কারো প্রতি বিদ্বেষ নাই। কিন্তু একটা জায়গায় আমরা কমিটেড। গতানুগতিক এবং পুরানো রাজনীতি দিয়ে নতুন বন্দোবস্ত হবে না। নেতৃবৃন্দের পরিষ্কার ঘোষণা ছিল পুরানো রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে তরুণদের নেতৃত্বে আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করব। ভিন্নমতের রাজনীতি করার কারণে মানুষকে হামলার শিকার হতে হবে না। অন্যায় অবিচারের শিকার হতে হবে না। এখন সময় মানুষকে নিয়ে রাজনৈতিক নতুন বন্দোবস্ত গড়ে তোলার’।
বিভিন্ন রাজতৈতিক দলের মতানৈক্যের কথায় বলেন, আজকে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। বিএনপি জামায়াত. গণঅধিকার পরিষদ নিজেদের মধ্যে অনেক জায়গায় মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে। এইটা কিন্তু আমাদের জন্য শুভ লক্ষণ না; অশুভ লক্ষণ ? আন্দোলনের অংশীজন গণ অভ্যুত্থানের শরিক দলসমূহ তারা যদি মুখোমুখি হয়, ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঘটবে, মাথা চাড়া দিবে’।
সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবেনা উল্লেখ করে বলেন,‘দলমত নির্বিশেষে সকলের সরকার এই সরকারের সফলতার উপরে নির্ভর করে আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। এই সরকারের ব্যর্থতার উপরে নির্ভর করবে আগামী এই জাতির ভবিষ্যৎ। সরকারকে কোনভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। সফল করতে হলে প্রশাসনকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ পাই যে, তারা আগের মতো কেউ আওয়ামী লীগ নিয়ে চলছে’।
তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তদের উদেদেশ্যে বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে হুশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, প্রশাসনে যারা দলবাজি করবেন তারা চাকরি ছেড়ে রাজনীতি করুন। প্রশাসনে কোন দলবাজি চলবে না।
গণ অধিকার পারিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. সোহাগ হোসাইনের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তার বক্তৃতা দেন দলের সিনিয় সহসভাপতি ও মুখপাত্র মো. ফারুক হাসান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা দেন দলের কেন্দ্রীয় উচ্চ পরিষদের সদস্য হানিফ খান সজিব, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুদ মোন্নাফ, সহ দপ্তর সম্পাদক ও রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক ইব্রহিম খোকন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি মো. বিন ইয়ামিন মোল্লা, যুব অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল হক, ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মামনুর রশিদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শিশির, গণ অধিকার পরিষদের জেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, জলঢাকা উপজেলা শাখার সভাপতি মো. তাইজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মতিন স্বাধীন প্রমুখ।