স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ অবিলম্বে তিস্তা নদীর পানি চুক্তি এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে উত্তরাঞ্চলের তিস্তাপাড়ে শুরু হচ্ছে অবস্থান কর্মসুচি। আগামী দুইদিন ব্যাপী সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ও মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এই অবস্থান কর্মসুচির ডাক দিয়েছেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি। যার প্রধান সমন্বয়কের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু।
তিস্তা নদীর পানি নিয়ে বৈষম্যের বিষয়টি গোটা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে তিস্তাপাড়ের ১১টি পয়েন্টে ২০ লাখ মানুষদের সমাগম ঘটবে বলে আয়োজনকরা আশাবাদী। এজন্য কর্মসুচিতে গান-কবিতা-অভিনয় ও স্মৃতিচারণের আয়োজন রাখা হয়েছে।
রবিবার(১৬ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তাপাড়ের ১১টি পয়েন্টে মঞ্চ, তাবু স্থাপন ও খাওয়া দাওয়ার আয়োজনের প্রস্তুতিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। এসময় নীলফামারী জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক জহুরুল আলম বলেন, আমরা আশা করছি নীলফামারীর পয়েন্টের ডালিয়ায় ৫ লাখ মানুষের সমাগম হবে। এ ছাড়া লালমনিরহাটের বিভিন্ন পয়েন্টে ৫ লাখ মানুষজন কর্মসুচিতে অংশ নেবে বলে জানান বিএনপি নেতা রাকিব হাসান রাজু। তিনি বলেন, সব মিলে দুইদিনের অবস্থান কর্মসুচিতে ২০ লাখ মানুষ থাকবে। তাবু স্থাপন খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে আমরা নেতাকর্মীরা সবাই আজ ব্যস্ত।
“জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও” শ্লোগানে তিস্তাপাড়ে এই ৪৮ ঘন্টার কর্মসুচি সোমবার দুপুর ২টায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু করা হবে। তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বিকাল ৪টায় কর্মসুচির উদ্ধোধন করার কথা রয়েছে। এসময় বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান দুদু বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন। এর আগে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে দাবী উপস্থাপন সহ বক্তব্য দিবেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক স¤পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু। এছাড়া নদীভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর ৩জনকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
আয়োজকরা জানান, প্রথম দিনের কর্মসুচিতে খেলা ধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,নাটক,পালা গান, ভাওয়াইয়া গান, ঘুড়ি উড়ানো, হা-ডু-ডু খেলা সহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসুচী চলবে রাত ২টা পর্যন্ত। কর্মসুচির দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় লালমনিরহাট তিস্তা ব্রীজ থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত গণপদযাত্রা এবং তিস্তা নদীতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হরে। এরপর বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্পিদের অংশগ্রহনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। সন্ধ্যা ৭টায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দিবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওইদিন নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এরপর রাত ৮টায় ব্লাক ডায়মন্ড খ্যাত বেবী নাজনীন সঙ্গীত পরিবেশনা করবেন ও তিস্তাপাড়ের জীবন মান নিয়ে তৈরী সিনেমা ‘সাঁতাও’ প্রদর্শনের মাধ্যমে রাত ১২টায় দুইদিন ব্যাপী অবস্থান কর্মসুচির সমাপনী ঘটবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল তিস্তা ইস্যুতে ঢাকা থেকে নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে লংমার্চ কর্মসুচি পালন করেছিল বিএনপি। এরপর নীলফামারীর ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারেজের পৌছে সমাবেশের মধ্য দিয়ে দুই দিনের লংমার্চ কর্মসূচি শেষ হয়েছিল তখন। তিস্তা নদীবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বরাবরই অভিযোগ, নদীটির অন্তত ১১৫ কিলোমিটার এলাকার প্রায় কোথাও পানি নেই। প্রতি বছর বর্ষায় নদীটির ক্ষতি হয় এক লাখ কোটি টাকার উপর। স্থানীয়রা মনে করেন, ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।