স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার(৬ মার্চ) সকাল ১১টা থেকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে দুইঘন্টাব্যাপী ওই কর্মসূচি পালিত হয়। সর্বস্তরের জনগণ ও শিক্ষার্থীর ব্যানারে ওই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে নীলফামারী জেলা ব্লকেট ঘোষণার হুশিয়ারী দেওয়া হয় কর্মসূচি থেকে।
মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে একাত্বতা প্রকাশ করে অংশ নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নার্সিং ইনস্টিটিউট সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অঙ্গ সংগঠন, আইনজীবী সহকারি সমিতি, বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি, নীলফামারী প্রেসক্লাব সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সহ পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহন করেন।
মানববন্ধন শেষে সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তৃতা দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী অধ্যাপক আন্তাজুল ইসলাম, নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আব্দুর রহিম, ডাঃ কারিমুল ইসলাম দর্পন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি সোহেল পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক শেফাউল জাহাঙ্গীর আলম সেপু, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. আল ফারুক আব্দুল লতিফ, আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ্যাড. আবু মোহম্মদ সোয়েম, পৌর বিএনপির সভাপতি মাহবুব-উর-রহমান, নীলফামারী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুর আলম, ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) নীলফামারীর সভাপতি ডা. সোহেলুর রহমান সোহেল, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা শাখার আহবায়ক সৈয়দ মেহেদী হাসান আশিক, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মারুফ পারভেজ প্রিন্স, নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক সোহানুর রহমান, কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী অর্পিতা চৌধুরী, হরিমোহন রায়, বাধন আচার্য, চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাজী রাহাতুল জান্নাত, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রেহা ফেরদৌস সহ আরও অনেকে।
এসময় মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলফামারী সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল বন্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ, অবিলম্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জমিতে নীলফামারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মান কাজ শুরু এবং বর্তমান ক্যাম্পাসের সার্বিক অবস্থা যাচাই ও উন্নয়নের জন্য বিশেষজ্ঞদল কর্তৃক সরেজমিন পরিদর্শন সহ তিনদফা দাবি তুলে ধরেন।
সমাবেশে বক্তাদের দাবি ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজ এ জেলাসহ আশপাশের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর এবং লালমনিরহাট মানুষের স্বাস্থ্যসেবা এবং চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে অবকাঠামো ও আবাসন সমস্যা থাকলেও বর্তমানে বর্তমানে সে সমস্যা নেই। নবনির্মিত সরকারি আইএইচটি ভবনের দুইটি লেকচার গ্যালারী, ১০টি শেণিকক্ষ একটি লাইব্রেরী, একটি কনফারেন্স রুম, অফিস কক্ষসহ অধ্যক্ষের কার্যালয় এবং বিভিন্ন বিভাগের অফিস রুমসহ একটি একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবনে কার্যক্রম চলছে। ওই ভবনের পাশে চারতলা ভবনে ১৫০জন ছাত্র এবং পাঁচ তলা ভবনে ২০০ জন ছাত্রীর মানসন্মত আবাসিক সুবিধা রয়েছে। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে কার্যক্রম চলছে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। ইতিমধ্যে ওই অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সঙ্গে লাগোয়া স্বাস্থ্য বিভাগের নামে থাকা ২৭ দশমিক ৪৬ একর জমি বরাদ্দ হয়েছে অবকাঠামো নির্মানের জন্য। মাস্টার প্লানে প্রস্তাবিত ৩৫টি স্থাপনার নির্মান কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রশাসনিক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। এরপরও একটি মহল অবকাঠামো এবং আবাসন সুবিধার অজুহাতে প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধের পায়তারা চালাচ্ছে।
বক্তারা নীলফামারী মেডিকেল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সেদিন থেকে নীলফামারী জেলা ব্লকেট ঘোষণা করা হবে। সারা দেশের সঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হবে, আকাশ পথ, রেল পথ ও সড়ক পথ।
নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী অর্পিতা চৌধুরী বলেন, নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজ নীলফামারী ও আশপাশের জেলার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। সম্প্রতি দেশের কিছু সরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধের আলোচনা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে। যেখানে সুনাম অর্জন করা আমাদের প্রতিষ্ঠানও অন্তর্ভক্ত। তিনি আরো বলেন, শুরুর দিকে কিছু জনবল ও অবকাঠামোগত ঘাটতি থাকলেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরলস ও ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত পেশাগত পরীক্ষাগুলোতে নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজ বরাবরই প্রশংসনীয় ফলাফল অর্জন করেছে। বিশেষভাবে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ২৪টি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে পাশের হারে নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজ প্রথম স্থান অর্জন করেছে।
সমাবেশ শেষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা বরাবরে দেয়া স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাইদুল ইসলাম।
নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ জিম্মা হোসেন বলেন, আগামী ১১ মার্চ মন্ত্রনালয়ে সভা রয়েছে। নতুন মেডিকেল কলেজগুলোর সমস্যা চিহিৃতকরণ ও সম্ভাবনা বিষয়ক এই সভা আহবান করা হয়েছে। এর আগে দুইদিন সভা আহবান করা হলেও তা স্থগিত করা হয়। আসা করছি এই সভায় নীলফামারী মেডিকেল কলেজের সমস্যার সমাধাণ হবে।