আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২০ মার্চ ২০২৫ ● ৬ চৈত্র ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২০ মার্চ ২০২৫

ওয়াসার পানির তীব্র সংকট, মিলছে না সুরাহা

বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, রাত ০৮:৪১

Ad

Advertisement

নিউজ ডেস্ক:  রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রান্নাবান্না করা এমনকি হাত-মুখ ধোয়ার পানি পর্যন্ত নেই। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। ঢাকা ওয়াসাকে বারবার এই পানি সমস্যার কথা জানানোর পরও মিলছে না কোনও সুরাহা। কবে নাগাদ এই সমস্যা দূর হবে তাও নিশ্চিত নন ওয়াসার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে পানির পাম্প মেরামতের কাজ করছে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৮০০ ফুট গভীর পাইপকে ১৮০ ফুট বর্ধিত করে ৯৮০ ফুট গভীর করতে চলছে খনন কাজ। যার কারণে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

পানি সরবরাহ চালু হতে কতদিন লাগতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াসার মেরামত কাজ করা শ্রমিকরা জানান, পানির সমস্যা সমাধান হতে হতে রোজা শেষ হবে। এখনও ন্যূনতম ১২-১৩ দিন কাজ চলবে বলে জানান শ্রমিকরা।

এদিকে পানি না থাকায় রমজানে নিত্যদিনের রান্না, গোসল ও টয়লেটের কাজ সম্পন্ন করতে এলাকাবাসীকে অধিক টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে বোতলজাত পানি। লাইনে ঠিকভাবে পানি না পেলেও ওয়াসার গাড়িতে করে ঠিকই চওড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পানি। উপায় না দেখে রান্নাবান্নাসহ জরুরি কাজ সারতে সেই পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন এলাকাবাসী।

এদিকে ওয়াসার মেরামত কাজে ধীরগতির অভিযোগ এনে ক্ষোভ জানান শেওড়াপাড়া ও পীরেরবাগের বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, সেবার নামে জনগণের সঙ্গে তামাশা ও প্রতারণা করছে ওয়াসা।

জিহাদ হোসেন নামের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘৮ দিন ধরে বাসায় পানি নাই। প্রথম কয়েকদিন ওয়াসার গাড়ি পানি দিয়ে গেলেও এখন সিরিয়াল পাওয়া যায় না। ফলে পানির ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। তাদের কাজ হচ্ছে সেবা দেওয়া, অথচ তারা সেবার নামে আমাদের সঙ্গে রঙ-তামাশা করছে।’

শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় মেসে থাকেন সুলতান মাহমুদ রিপন নামে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। গত কয়েকদিন পানির অভাবে ঠিকভাবে গোসল থেকে শুরু করে কোনও কাজই করতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে রাজধানীর শুক্রাবাদ এলাকায় আত্মীয়ের বাসায় এসে থাকছেন।

বাংলা ট্রিবিউনকে রিপন বলেন, ‘পড়াশোনা এবং পার্টটাইম চাকরির সুবাদে শেওড়াপাড়ায় থাকা হয়। আপাতত ভার্সিটি বন্ধ থাকায় শুধু চাকরি করছি। কিন্তু কাজে যাওয়ার সময় বিপত্তিতে পড়তে হয়। বাসায় পানি থাকে না। গোসল করতে পারি না। উপায় না দেখে এদিকে খালার বাসায় চলে এসেছি।’

শেওড়াপাড়ার আরেক বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘চাকরির সুবাদে এক মাস আগে এই এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছি। এখন পানির সমস্যায় বেকায়দায় পড়েছি। গত দুই সপ্তাহ ধরে পানির সমস্যা, পানি নেই। ঠিকমতো গোসল করে অফিসে যেতে পারি না। ওয়াস রুমে পানি থাকে না। ঠিকমতো হাত-মুখ ধুতে পারি না। রান্নার জন্য পানি পাই না। খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। শুনছি আরও অনেকদিন পানির এই সমস্যা থাকবে।’

মিরপুরের যে কয়েকটি এলাকায় পানির তীব্র সংকট তার মধ্যে অন্যতম উত্তর পীরেরবাগ। গত এক মাস ধরেই এখানে ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ। যার ফলে পানির সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের।

পীরেরবাগের বাসিন্দা রোকসানা রশীদ বলেন, ‘এমন একটা রমজান মাসে বাসায় বাসায় পানি নেই। ঠিকমতো ওজু পর্যন্ত করতে পারছি না। প্রতিদিন পানি কিনে আনতে হয়। রোজার আগে থেকেই পানির এই সমস্যা। ওয়াসার লোকজনদের বারবার বলার পরেও কোনও সমাধান করেনি। এমনকি ওয়াসার হেল্প লাইনে কল দিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার পীরেরবাগ-৪ পাম্প-এর একজন কর্মকর্তা  বলেন, ‘এখানে পানির প্রোডাকশন প্রায় জিরো। এই সমস্যা গত এক মাস ধরে। লাইনে পানি সরবরাহ করতে আমাদের কাজ চলমান আছে। তবে রোজার মধ্যে এই সমস্যা সমাধান হবে কিনা তার নিশ্চয়তা দিতে পারবো না।’

শেওড়াপাড়া এবং পীরেরবাগ এলাকায় পানি সংকটের বিষয়ে ওয়াসার মডস্ জোন-০৪ মিরপুর অঞ্চলের (রোকেয়া সরণি পশ্চিমাংশ) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বদরুল আলমকে (নির্বাহী প্রকৌশলী) একাধিকবার কল করলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ডিএমডি (ও অ্যান্ড এম) একেএম সহিদ উদ্দিন বলেন, ‘শেওড়াপাড়ায় এখন পানির সমস্যা নেই। শুক্রবার পর্যন্ত ছিল। অন্যদিকে পীরেরবাগে এলাকায়ও সমস্যা নিরসনে আমরা রেশনিং করে পানি দিচ্ছি। পানির চাহিদা বেশি হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। একটা টিউবওয়েল দিয়ে আমি সর্বোচ্চ ২৫ হাজার মানুষকে পানি সাপ্লাই দিতে পারবো। সেখানে যদি ১ লাখ মানুষ হয় তাহলে তো এমন হিমশিম খেতেই হবে।’

ওয়াসার এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পীরেরবাগের ওদিকে যদি আরেকটা টিউবওয়েল হতো তাহলে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করা যেতো। আমরা টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য জায়গা খুঁজছি। কিন্তু সেই জায়গা পাচ্ছি না। কেউ যদি আমাদের জায়গা দেয় তাহলে ঢাকা ওয়াসা তাৎক্ষণিক সেখানে টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করে দেবে, এই প্রতিশ্রুতি আমি দিচ্ছি।’

মন্তব্য করুন


Link copied