আর্কাইভ  সোমবার ● ৩১ মার্চ ২০২৫ ● ১৭ চৈত্র ১৪৩১
আর্কাইভ   সোমবার ● ৩১ মার্চ ২০২৫
শুভেচ্ছাবার্তা:
উত্তর বাংলা ডটকম পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক ।

রংপুরে জমে উঠেছে ফুটপাতের ঈদবাজার

বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, সকাল ০৫:০৯

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদুল ফিতর আসতে আর মাত্র ৫-৬ দিন বাকি। এরই মধ্যে রংপুরবাসী ঈদের কেনাকাটা সেরে নিচ্ছে। নামিদামি শপিংমলের পাশাপাশি ফুটপাতের বাজারগুলোতেও চলছে জমজমাট কেনাবেচা। রংপুরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে এসব স্থান।

বিগত কয়েকদিন রংপুর শহরের বিভিন্ন ফুটপাত ঘুরে ফুটপাতগুলোতে ঈদের কেনাকাটায় ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা গেছে। সিটি বাজার সংলগ্ন, নবাবগঞ্জ বাজার সংলগ্ন, হনুমান তলা, সুরভী উদ্দ্যান সংলগ্ন, সালেক মার্কেট , জামাল মার্কেট সংলগ্ন ও ষ্টেশন বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতের দোকানগুলোতে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে জমজমাট বেচাকেনা। বিক্রেতাদের মতে, দিন যত যাচ্ছে, ক্রেতাদের ভিড় ও কেনাকাটার পরিমাণ ততই বাড়ছে।

ফুটপাতের দোকানগুলো সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষের প্রধান কেনাকাটার স্থান হলেও, ঈদের সময়ে এখানে নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্তরাও পণ্য কিনতে আসেন। ঈদ উপলক্ষে ফুটপাতের বাজারগুলোতে নজরকাড়া পণ্যের সমারোহ এবং সুলভ মূল্যে ভালো জিনিস পাওয়া যায় বলে এ সময়ে এখানে চোখে পড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য। ক্রেতা-বিক্রেতাদের গলাগলি আর রঙবেরঙের পণ্যের সমাহার ফুটপাতের ঈদ বাজারগুলোকে করে তোলে নগরবাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুটপাতের দোকানগুলোতে নানা ডিজাইন ও রঙের পোশাক ও অন্যান্য পণ্যের সমাহার রয়েছে। শার্ট, প্যান্ট, জুতা, সালোয়ার, থ্রি-পিস, কামিজ, পাজামা-পাঞ্জাবি, কসমেটিকস, গেঞ্জি, টুপি থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর জিনিসপত্র পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও, এক্সপোর্ট কোয়ালিটির বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রীও পাওয়া যায়। স্বল্প আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির ক্রেতারা নামিদামি মার্কেটের চেয়ে কম দামে মানসম্মত পণ্য কিনতে পারছেন, যা তাদের যেমন সন্তুষ্ট করছে, তেমনি দোকানিরাও ভালো বিক্রি করে খুশি।

এখানে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হকারদের নানা হাঁকডাকও শোনা যায়। যেমন, ঐ কিরে ঐ কিরে.... মধু মধু .. রসমালাই ‘দেইখ্যা লন আড়াইশ, বাইছ্যা লন তিনশ, বুইঝ্যা লন পাঁচশ, একদাম পাঁচশ এ ধরনের নানা ডাকে ক্রেতারা আকৃষ্ট হচ্ছেন। সিটি বাজার জেলা পরিষদের সামনের ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করছিলেন সোহাগ মিয়া, যিনি একটি বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করেন। তিনি উত্তর বাংলা ডটকমকে বলেন, এবার ঈদে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটে যাব। মা-বাবা ও ভাইয়ের জন্য কিছু কিনছি। বাবা ও ভাইয়ের জন্য শার্ট-লুঙ্গি, মায়ের জন্য শাড়ি কিনেছি। ফুটপাত থেকে ভালো জিনিস কম দামে পাওয়া যায়।

ষ্টেশন মার্কেটের সামনের ফুটপাতে রিয়াজুল করিম মানিক নামের এক দারোয়ানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি উত্তর বাংলা ডটকমকে জানান, অনেক চেষ্টার পর এবার ঈদের ছুটি পেয়েছি তাই বাড়িতে মা-বাবা, স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারবো । এজন্য তিনি পরিবারের জন্য কেনাকাটা করছেন। রিয়াজুল করিম মানিক উত্তর বাংলা ডটকমকে আরো বলেন, আগেও এখান থেকে জিনিস কিনেছি, যা ভালো ছিল। এবারও ঈদের কেনাকাটা করছি, কারণ পণ্যের মান ভালো এবং দামও কম। তবে তিনি পরামর্শ দেন, কেনার সময় পণ্য ভালোভাবে দেখে নেওয়া জরুরি।

রংপুর নগরীর সুরভী উদ্যানের দিকে আসার রাস্তায় সাজেদুল নামের এক তরুণ ভ্যান গাড়িতে করে পাঞ্জাবি ও পাজামা বিক্রি করছিলেন। তিনি উত্তর বাংলা ডটকমকে বলেন, ঈদের এক সপ্তাহ বাকি থাকতেই বিক্রি শুরু হয়ে গেছে এবং বিক্রি ভালো হচ্ছে। তিনি আশা করেন, ঈদ যত কাছে আসবে, বিক্রি তত বাড়বে।

কুড়িগ্রাম শহরের স্টেশনারি ব্যবসায়ী সোহেল রানা রিপন ব্যক্তিগত কাজে রংপুর শহরে এসেছিলেন। কাজ শেষে ফেরার আগে তিনি পাঁচ পীরের দরগাহ ( সিটি বাজার সংলগ্ন ) ও গুদরি বাজারের আশে পাশের ফুটপাত থেকে ঈদের কেনাকাটা সেরে নেন। তিনি উত্তর বাংলা ডটকমকে বলেন, রংপুর শহরে এলে ফুটপাতের দোকান থেকে কিছু না কিছু কিনে নেন, কারণ এখানে মানসম্মত জিনিস কম দামে পাওয়া যায়। তিনি বালিশের কভার ও বিছানার চাদর কিনেছেন, যা সেন্ট্রাল রোড থেকে  ১৫০০-১৭০০ টাকায় কিনতে হতো, কিন্তু এখানে মাত্র ১ হাজার টাকায় পেয়েছেন। ঈদের জামা-কাপড়ও তিনি এখান থেকে বা সালেক মার্কেট  থেকে কিনবেন, কারণ ঈদের আগে আর রংপুর শহরে আসার সুযোগ হবে না।

রিপন উত্তর বাংলা ডটকমকে আরও বলেন, শুধু এখানেই নয়, ঢাকায় কোন কাজে গেলে রাজধানীর মিরপুর ও মোহাম্মদপুরের ফুটপাত থেকেও তিনি নিয়মিত জিনিস কিনে থাকেন। এসব ফুটপাতের দোকানে কম দামে মানসম্মত কাপড় পাওয়া যায়, যা ব্যবহার করে তিনি সন্তুষ্ট। তিনি পরিবারের সদস্যদের জন্যও এখান থেকে কাপড় কিনে নেন।

হকার্স মার্কেটের সামনে বিছানার ছাদর ও বালিশের কভার বিক্রেতা সাজ্জাদ ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, মার্কেটের কাপড়ের সঙ্গে ফুটপাতের কাপড়ের মানে তেমন পার্থক্য নেই। তবে ফুটপাতের দোকানগুলোর এসি বা লাইটের খরচ না থাকায় তারা কম দামে পণ্য বিক্রি করতে পারে। একই চিত্র দেখা গেছে রংপুর শহর সহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতের মার্কেটগুলোতে।

হনুমানতলার জুতার শোরুমের এক কর্মচারী রাকিব হোসেন উত্তর বাংলা ডটকমকে বলেন, আমাদের আয় কম, তাই বড় মার্কেটে যাওয়া সম্ভব হয় না। ফুটপাতের দোকান থেকে পোশাক কিনি, কারণ এখানে দাম কম এবং ভালো জিনিসও পাওয়া যায়। তিনি আরও জানান, গত দুই-তিন বছর ধরে তিনি ফুটপাতের দোকান থেকে পোশাক কিনছেন এবং পরিবারের জন্যেও এখান থেকে কেনাকাটা করেন।

হাড়িপট্টি রোডে ফুটপাতের মার্কেটে ঘুরে দেখা যায়, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, পায়জামা, শিশুদের পোশাক, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শাড়ি, লেহেঙ্গা, ট্রাউজার, জুতা, বেল্ট, ঘড়ি, মানিব্যাগ, চশমা সবই পাওয়া যাচ্ছে। কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল মানিক বলেন, আমার দোকানে নতুন কালেকশনের পোশাক রয়েছে, তাই ক্রেতারা ফিরে যায় না। আমি কম দামে পণ্য বিক্রি করি, প্রতি জামায় ৩০-৪০ টাকা লাভ হলেই সন্তুষ্ট।

মজিবুল হক নামের এক ক্রেতা উত্তর বাংলা ডটকমকে বলেন, এখানে দাম তুলনামূলক কম। ৪০০ টাকায় দুই মেয়ের জন্য দুটি জামা কিনেছি, যা দেখতে সুন্দর। এখন শুধু স্ত্রীর জন্য একটি জামা কিনলেই কেনাকাটা শেষ। গঙ্গাচড়া থেকে আসা পারভিন আক্তার মনি উত্তর বাংলা ডটকমকে বলেন, হাড়িপট্টিতে ভালো জিনিস পাওয়া যায়। ছেলের জন্য ৩০০ টাকায় পাঞ্জাবি এবং ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে শার্ট-প্যান্ট কিনেছি। স্বামির জন্য একটা লুঙ্গি কিনেছি ৪৫০ টাকায় এবং পাঞ্জাবি কিনেছি ৪০০ টাকায় । পাশাপাশি আমার নিজের জন্য সামান্য কিছু কসমেটিক কিনেছি নিয়মিত ব্যবহারের জন্য। 

হাড়িপট্টি, সালেক মার্কেট অন্যান্য এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, এবার কম বাজেটে ক্রেতাদের পছন্দের বাহারি নকশা ও রঙের পোশাক রাখা হয়েছে। তাদের দোকানে নিম্ন আয়ের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও বেশি কেনাকাটা করতে আসছেন।

উবাড/ তান

মন্তব্য করুন


Link copied