নিউজ ডেস্ক: বিপদে বন্ধু চেনা যায়। প্রবাদটা বেশ পুরনো। তবে পুরনো এই প্রবাদটাই এখন সবচেয়ে বেশি মানানসই সাকিব-তামিমের বন্ধুত্বের গল্পে। একটা সময় এই দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠলেও নানা কারণে আর সেটা আগের মতো থাকেনি। দুজনের পথ দুদিকে গিয়েছিল বেঁকে। সেটা ক্রিকেটীয় কারণে যেমন তেমনি অক্রিকেটীয় কারণও কম নয়।
তবে এই দুজনের বিরোধে লাভ হয়নি কারো। আখেরে বড় ক্ষতি হয়েছে দেশের ক্রিকেটের। সাকিব-তামিম দ্বন্দ্বে ড্রেসিং রুমে প্রভাব পড়েছে। দুভাগে ভাগ হয়েছে ড্রেসিং রুম। হয়েছে গ্রুপিং। যা বহুবার বহুভাবে গণমাধ্যমে এসেছে। তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ক্ষতি হয়েছে বই লাভ হয়নি। তবে এবার সেই দূরত্ব ঘুচার আভাস মিলছে।
জীবনে চলার পথে যেমন হঠাৎ থমকে দাঁড়াতে হয়। পেছনে ফিরে তাকাতে হয়। সাকিব বোধহয় এখন পেছনে ফিরে তাকাচ্ছেন। তামিম নিজেও জীবনের বহু পথ পেরিয়ে এখন চরম সত্যের সামনে দাঁড়িয়ে। কিছুদিন আগে ডিপিএলে খেলতে নেমে মাঠেই হার্ট অ্যাটাক হয় তার। এরপর যেতে হয়েছে হাসপাতালে। হার্টে রিং পরাতে হয়েছে তাকে। আর সেই দিনটি ছিল দেশের ক্রিকেটের পোস্টারবয় সাকিব আল হাসানের জন্মদিন।
বন্ধুর এমন খবরে বিষাদে পুড়েছে সাকিবের মন। মান অভিমান এক নিমিষেই ভুলে গিয়েছেন তিনি। মুহূর্তেই কঠিন বরফ গলে গিয়েছে। জানিয়েছেন, দিনটা তার জন্য বিশেষ হলেও মনে আনন্দ নেই তার। ফেসবুক বার্তায় বন্ধু তামিমের জন্য দোয়া চেয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে বলেছেন, তামিমের জন্য দোয়াই হবে আমার জন্মদিনে তামিমের জন্য সেরা উপহার।
সাকিব তামিমকে নিয়ে লিখেছেন, আজ আমার জন্য বিশেষ দিন, কিন্তু মনটা পুরোপুরি আনন্দে নেই, কারণ আমার প্রিয় সতীর্থ ও বন্ধু তামিম ইকবাল অসুস্থ। মাঠে আমরা একসঙ্গে অনেক লড়াই করেছি, অনেক স্মৃতি রয়েছে, আর সবসময় চাইব আমাদের এই পথচলা আরও দীর্ঘ হোক।
তামিম, তুমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম বড় শক্তি। তোমার দ্রুত সুস্থতা ও মাঠে ফিরে আসার জন্য দোয়া করছি। ইনশাআল্লাহ, তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।
তামিমের জন্য আপনার দোয়াই হবে, আমার জন্মদিনের সেরা উপহার । দোয়া করবেন—আমার ভাই তামিম যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার মাঠে ফিরতে পারে!
এমন একটা পোস্ট যেকোনো কঠিন হৃদয়ের মানুষকেও বড়সড় ধাক্কা দিতে পারে। তামিম তো সেখানে সাকিবের দীর্ঘ দিনের বন্ধু। যার সঙ্গে দীর্ঘ প্রায় দুই দশক একসঙ্গে খেলেছেন। বহুবার বহু ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ক্রিকেটের ২২ গজে জুটি গড়েছেন। কারণে অকারণে ছুটে গেছেন। গল্পের পসরা সাজিয়েছেন। ঘুরে বেড়িয়েছেন। চাইলে কি এতসব স্মৃতি ভুলে যাওয়া যায়? তাই সেই সুতোটা ছিঁড়ে যায়নি কখনোই। যার প্রমাণ মিলল সাকিবের এক পোস্টে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব-তামিমের পাঠ এখন চুকে গেছে। এটা বাস্তবতা। তবে দুজন চাইলে দেশের ক্রিকেটকে এখনও নানাভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন। সেই সামর্থ্য আছে দুজনেরই। আর যদি আলাদাভাবে না হয়ে আবারও দুজনে এক হয়ে চেষ্টা করেন। এক হয়ে লড়েন, যেমনটা ক্রিকেটের ২২ গজে লড়েছেন বহু ম্যাচে। তাহলে কিন্তু জিতে যাবে বাংলাদেশেই। জিতে যাবে দেশের ক্রিকেট।