আর্কাইভ  সোমবার ● ৩১ মার্চ ২০২৫ ● ১৭ চৈত্র ১৪৩১
আর্কাইভ   সোমবার ● ৩১ মার্চ ২০২৫
শুভেচ্ছাবার্তা:
উত্তর বাংলা ডটকম পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক ।

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্বেগ-শঙ্কার ঈদ

শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, দুপুর ১২:৩৫

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: গত বছর ঈদুল ফিতর আওয়ামী লীগ নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের কেটেছে মহাউৎসবে। কেউ ঢাকায়, কেউ নিজ এলাকার মানুষ ও কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে ছিলেন। ঈদ উপহার দেওয়াসহ ছিল নানা আয়োজন। পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে শুভেচ্ছা জানানোরও কমতি ছিল না। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসায় উৎফুল্ল ছিলেন তৃণমূলের নেতাকর্মীও। সেই চিত্র পাল্টে গেছে সরকার পতনে। গত ৫ আগস্টের পর থেকেই আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আত্মগোপনে। 

আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপির বেশির ভাগ দেশ ছেড়েছেন। এ ছাড়া অনেকে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীও অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া একটা বড় অংশ আট মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। একই রকম অবস্থা দলের সব সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরও। পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন অনেকেই। তাদের এবারের ঈদ কাটবে নানা শঙ্কা আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। 

সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশির ভাগ নেতা এবং মন্ত্রী-এমপি আত্মগোপন করেন। তাদের মধ্যে গত কয়েক মাসে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৮ জন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ গুরুতর অসুস্থ হয়ে নিজ বাড়িতে শয্যাশায়ী। 

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কাজী জাফরউল্লাহ, ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, শাজাহান খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দারসহ অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী সরকার পতনের পর মারা গেছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম, আওয়ামী লীগের জোট ১৪ দলের দুই শীর্ষ নেতা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সাবেক এমপি এনামুল হক, আবুল কালাম আজাদসহ অনেকেই।

সম্প্রতি যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর আওতায় যে ২০ হাজার মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন– তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। এদিকে পালিয়ে যারা দেশের বাইরে গেছেন, তাদের বেশির ভাগের আস্তানা হয়েছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ভারতেই রয়েছেন ২০০ থেকে ৩০০ জন। আবার কিছু নেতা অন্য দেশ থেকে ভারতে আসা-যাওয়া করেন। অনেক নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং নানা অনুষ্ঠানে সক্রিয় রয়েছেন। কেউ কেউ মাঝেমধ্যে ভার্চুয়াল বক্তৃতা দেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। তারা দেশ-বিদেশে অবস্থানকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। তারা দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলেও জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ে দিল্লি চলে যান। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেশ কিছুদিন দেশে আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি পরে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত চলে গেছেন বলে জানা গেছে। তবে ওবায়দুল কাদের অনেকটাই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। 

দিল্লি, কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে আশ্রয় নিয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা, সাবেক এমপি পংকজ দেবনাথ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, সাবেক এমপি ডা. মনসুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিপুল সংখ্যক কেন্দ্রীয়, জেলা ও অন্যান্য পর্যায়ের নেতা। 

যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুর রহমান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ অনেকেই। এর মধ্যে আবদুর রহমান ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিভিন্ন অনলাইন আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। আবদুর রহমান লন্ডনে দলের পক্ষে প্রচারপত্র বিতরণ করেছেন এবং খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সেখানে একটি কর্মিসভায় যোগ দেন বলে জানা গেছে। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত নেতা একেএম শামীম ওসমানকে সর্বশেষ দুবাইতে দেখা গেছে।  

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ কানাডা এবং আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বেলজিয়ামে রয়েছেন। দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ কিছু নেতা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। এই নেতারা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং দলের বিষয়ে সক্রিয় আছেন বলে প্রচার রয়েছে। পালিয়ে যারা দেশছাড়া, তাদের সমর্থক-কর্মীরা এর আগে ঈদের সময় আর্থিক সহযোগিতা পেলেও এবার বঞ্চিত হচ্ছেন। পলাতক কোনো কোনো নেতা কর্মী-সমর্থককে জানিয়েছেন, তারা নিজেরই জীবনরক্ষা করতে পারছেন না। বাড়িঘর সব হারিয়েছেন। এমন অবস্থায় টিকে থাকাই মুশকিল।  

কেমন ঈদ কাটবে– এ প্রশ্নে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘গর্তে থেকে যতটুকু ভালো থাকা যায়, সেটাই চেষ্টা করছি আমরা। ঈদ কীভাবে কাটবে, সেটা নিয়ে চিন্তা করব কীভাবে?’ দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঈদ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘সারাদেশের লাখ লাখ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় কারাগারে অথবা আত্মগোপনে। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। এ অবস্থায় ঈদের যে আনন্দের অনুভূতি, সেটা আমাদের মধ্যে আসবে কীভাবে? তারপরও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে যতটুকু সম্ভব ঈদ পালনের চেষ্টা করব আমরা।’    খবর-সমকাল

মন্তব্য করুন


Link copied