আর্কাইভ  বুধবার ● ২ এপ্রিল ২০২৫ ● ১৯ চৈত্র ১৪৩১
আর্কাইভ   বুধবার ● ২ এপ্রিল ২০২৫
শুভেচ্ছাবার্তা:
উত্তর বাংলা ডটকম পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক ।

রাজু-সাজুদের ঈদ কাটছে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে

সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, দুপুর ০৪:৩৭

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: রাজু ,সাজু ও আলিফ তিন ভাই। ঈদ যেন ভিন্নরূপে ধরা দিয়েছে ওদের কাছে। কারো পরনে নেই নতুন পোশাক। বাবা-মার সঙ্গে তিন ভাইয়ের ঈদ কাটছে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। ঈদের দিন ফাঁকা প্ল্যাটফর্মে খেলাধুলায় মেতে উঠেছে ওরা। কখনো কখনো প্ল্যাটফর্মের পাশের ইয়ার্ডে গিয়ে ট্রেনে চড়ছে, আবার কখনো ইয়ার্ড জুড়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। এভাবে সকাল থেকে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওরা।

সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের দিন সকাল ১১টায় ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দক্ষিণপ্রান্তে রাজুর বাবা শারীরিকভাবে অসুস্থ আব্দুস সালাম ও মা বাকপ্রতিবন্ধি হামিদা খাতুন বসে লুচি, সেমাই ও খিচুরি দিয়ে নাস্তা করছেন। স্টেশনের পাশের এলাকা থেকে তারা এসব খাবার সংগ্রহ করেছেন বলে জানান।

 

দশ বছর বয়সী রাজু জানায়, স্টেশনের প্ল্যাফর্মে ওরা রাতে থাকে। বাবা-মা দুজনই ভিক্ষা করেন। তিন ভাই স্টেশনে বসে সময় কাটায়। ঈদের দিন ট্রেন চলছে না, পুরো স্টেশন ফাঁকা। তাই স্টেশনের বিশাল ইয়ার্ডজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের বগিতে চড়ে খেলাধুলা করতে পারছে এটিই বড় আনন্দ।

ঈদের নতুন পোশাক পেয়েছে কি-না জানতে চাইলে রাজু বলে, শুধুমাত্র আলিফের জন্য বাবা একটা পাঞ্জাবী কিনেছেন। কিন্তু এখনো আলিফ সে পাঞ্জাবী পড়েনি। আমাদেরতো কোন নতুন পোশাক নেই। তাই আগের পোশাক পড়েই ঘুরছি।

সাজু (৮) বলেন, সকালে লুচি আর সেমাই খাওয়ার পর এখন খেলাধুলা করছি। আজতো ঈদ তাই স্টেশনে লোকজন নেই। ফাঁকা স্টেশনে খেলাধুলা করতে ভালই লাগছে।

রাজু-সাজুর বাবা আব্দুস সালাম বলেন, রাতে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকি। তিন ছেলে ও স্ত্রীর খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাই। আগে স্টেশনের পাশে একটি বাড়িতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। এখন ঘর ভাড়া বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা করায় আর থাকা সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে স্টেশনে থাকি। স্টেশনের পাশে রান্না করে খাওয়াদাওয়া করি। আর রাতে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঘুমাই। আমার স্ত্রী বাকপ্রতিবন্ধি ও মানসিক রোগী। সন্তানরা সব ছোট ছোট। আমার একার আয় দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর।

ঈদ কিভাবে কাটছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার ইচ্ছে ছিল নিজ গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের মুলাডুলি উপজেলার কালিগঞ্জ যাবো। কিন্তু টাকা জোগাড় করতে না পারায় যাওয়া হয়নি। ছেলেদের ঈদের পোশাক কিনে দিতে পারিনি। শুধু ছোট ছেলের একটি পাঞ্জাবী কিনেছিলাম। সকালে আশপাশের বাড়ি থেকে লুচি, সেমাই ও খিচুরি এনে খেয়েছি। দুপুরে হয়ত রান্না করে খেতে হবে। আমাদের মতো গরীবের ঈদ এভাবেই কাটছে।

মন্তব্য করুন


Link copied