আর্কাইভ  বুধবার ● ২ এপ্রিল ২০২৫ ● ১৯ চৈত্র ১৪৩১
আর্কাইভ   বুধবার ● ২ এপ্রিল ২০২৫
শুভেচ্ছাবার্তা:
উত্তর বাংলা ডটকম পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক ।

ঈদের দিন পাঁচ জেলার সড়কে ঝরল ১২ প্রাণ

সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, রাত ১০:৪১

Advertisement

নিউজ ডেস্ক:  ঈদের দিনে দেশের পাঁচ জেলায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। এর মধ্যে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামের লোহাগড়ায়। সেখানে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বগুড়ায়। সেখানে পৃথক তিনটি দুর্ঘটনায় বাবা-মেয়েসহ নিহত হয়েছেন তিনজন। এছাড়া গাজীপুরে বাসের সঙ্গে অটোরিকশার সংঘর্ষে দুইজন এবং নওগাঁ ও পিরোজপুরে একজন করে মারা গেছেন।

সবকটি দুর্ঘটনাই ঘটেছে সোমবার (৩১ মার্চ) বিভিন্ন সময়ে। ঢাকা মেইলের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

লোহাগড়ায় দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ৫

সকাল সাতটার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ছয়জন। 

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, লোহাগাড়ার জাঙ্গালিয়া মাজার গেট এলাকায় সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে একটি মিনিবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পাঁচজন নিহত হয়। মিনিবাসটি কক্সবাজারের দিক থেকে লোহাগাড়ায় যাচ্ছিল। আর সৌদিয়া পরিবহনের বাসটি কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছিল।

নিহতরা হলেন- লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের আধার মানিক এলাকার মো. আলমের ছেলে রিফাত হোসেন (১৯), একই এলাকার সোনা মিয়ার ছেলে আরফাত হোসেন (২১), একই ইউনিয়নের চকোরিয়া পাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে নাজিম উদ্দিন (২৫), একই উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ি মৌলভী পাড়ার আমির হোসেনের ছেলে জিসান হোসেন (২২) ও সাতকানিয়া উপজেলার ডেলিপাড়া এলাকার মো. সাত্তারের ছেলে মো. সিদ্দিক (২০)।

বগুড়ায় বাবা-মেয়েসহ নিহত ৩

বগুড়ার শেরপুরে পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুইজন।

স্থানীয়রা জানান, মোটরসাইকেলে চড়ে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিন বন্ধু। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের ঝুপুনিয়া সেতুর মোড়ে তাদের মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে একটি গাছে ধাক্কা লাগে। এতে গুরুতর আহত হন উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের হিন্দু পানিসাড়া গ্রামের অলোক সরকার (২০), জয়ন্ত সরকার (২০) ও শুভ সরকার (১৯)।

স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অলোক সরকারকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত জয়ন্ত সরকারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুভ সরকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এর দেড় ঘণ্টার পর দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর উপজেলার মহিপুর জামতলা এলাকায় আরেকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

সেখানে ঢাকাগামী একটি বাস বাইকে থাকা শরিফুল ইসলাম (৩২) ও তার তিন বছর বয়সী মেয়ে সেজদাকে চাপা দিয়ে দুজনই গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়া দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়কের মহিপুর ফায়ার সার্ভিসের সামনে ঢাকাগামী একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাইভেটকারের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং গাড়ির দুই আরোহী মো. লিখন (২৮) ও মো. জীবন (৩০) আহত হন। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।

গাজীপুর দুর্ঘটনায় ফুফু-ভাতিজি নিহতের পর বাসে আগুন

সকাল ১০টার দিকে গাজীপুরের শিববাড়ি এলাকায় বাসের সঙ্গে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এক নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অটোরিকশা চালকসহ চার যাত্রী। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি আটক করে আগুন ধরিয়ে দিলে মুহূর্তেই সেটি পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নেভায়।

সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, সকালে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে একটি অটোরিকশা গাজীপুর শহরের দিকে যাচ্ছিল। যানটি গাজীপুর শহরের শিববাড়ি মোড়ে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাস অটোটিকে চাপা দেয়। এ সময় সেখানে থাকা শিশু তাবাসসুম (৫) ও তার ফুফু ঘটনাস্থলেই মারা যান।

গাজীপুরে বাস দুর্ঘটনায় ফুফু-ভাতিজি নিহত হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
স্থানীয়রা অটোরিকশা চালক ও অপর যাত্রীদের উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি আটক করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়।

নওগাঁয় বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে যুবক নিহত

নওগাঁর সাপাহারে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় শাহিন আলম (১৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দু’জন। 

বেলা ১১টার দিকে উপজেলার কালাইবাড়ী-দিঘিরহাট আঞ্চলিক সড়কের মিরাপাড়া নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহত শাহিন আলম (১৭) পোরশা উপজেলার পশ্চিম হরিপুর গ্রামের মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ছেলে। 

আহতরা হলেন - সাপাহার উপজেলার আলাদীপুর গ্রামের তাহিরের ছেলে আহসান আলী (১৭) এবং জামিরুল (১৭)। জামিরুল পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল গ্রামের মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে।

জানা যায়, তিন বন্ধু মিলে ঈদে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন। অতিরিক্ত গতির কারণে মোটরসাইকেলটি মিরাপাড়া নামক স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলে শহিন আলম নিহত হন। আহত হন অন্য দুইজন। তাদের সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আহসান আলীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

সাপাহার থানার ওসি আব্দুল আজিজ বলেন, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

পিরোজপুরে ঘুরতে বেরিয়ে যুবক নিহত, স্ত্রী আহত

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে মোটরসাইকেলে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মহিউদ্দিন তুহিন নামে এক যুবক। আহত হয়েছেন তার স্ত্রী মিম আক্তার।

দুপুর ২টার দিকে উপজেলার ইন্দুরকানী-চন্ডিপুর সড়কের ফকির বাড়ি জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত মহিউদ্দিন তুহিন ইন্দরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

পুলিশ জানায়, দুপুরে মহিউদ্দিন তুহিন ও তার স্ত্রী মিম আক্তার মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে বের হন। উপজেলার চন্ডিপুর ও ইন্দুরকানী সড়কের ফকির বাড়ি জামে মসজিদ এলাকায় সড়কের বাক ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে সড়ক বাতির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে তুহিন ও তার স্ত্রী সড়কে পড়ে যান। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তুহিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

ইন্দুরকানী থানার ওসি মারুফ হোসেন বলেন, নিহতের স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ নিয়ে যেতে আবেদন করেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন


Link copied