বিশেষ প্রতিনিধি,নীলফামারী॥ নীলফামারী আদালতে হাজির হতে এসে জনরোসের মুখে পড়লেন নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার। আজ রবিবার(৬ এপ্রিল) দুপুরে নীলফামারী আদালতে ডোমারের পৃথক দুইটি মামলায় হাজিরা দিতে এলে বিক্ষুব্ধ জনতার জনরোসের মুখে পড়েন সাবেক এই সংসদ সদস্য। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে নীলফামারী জেলা কারাগার থেকে কঠর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নীলফামারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর বিচারক দেলোয়ার হোসেনের আদালতে বীরমুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকারকে হাজির করে পুলিশ।
এসময় আদালত চত্বরে বিক্ষুব্ধ কিছু মানুষ ভূয়া এমপি, ভোট চোর ও খুনি স্লোগান দিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকারকে কিলঘুষি মারার চেষ্টা করেন। তবে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা আফতাব উদ্দিন সরকারকে নিরাপদে আদালতে হাজির করান। এরপর আদালত থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে বিক্ষুব্ধ লোকজন পুনরায় তাকে কিলঘুষি মারা ও জুতা ও স্যান্ডেল নিক্ষেপের চেষ্টা করে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ দ্রুত তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেন। এসময় প্রিজন ভ্যান লক্ষ করে ধুলাবালি নিক্ষেপ করেন বিক্ষুদ্ধরা।
নীলফামারী জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আল মাসুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, রংপুরের বৈষ্যম ছাত্র আন্দোলনে মাহমুদুল হাসান মুন্না হত্যা মামলার ৬০ নম্বর নামীয় আসামী হিসাবে চলতি বছরের গত ৫ মার্চ রাতে রংপুর বিভাগীয় শহরের নিউ সেনপাড়ার স্কুলের পাশে ভাড়াবাসার তিনতলা থেকে ভোটচোর সরকারের এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। নীলফামারীর দুইটি মামলায় পুলিশ তাকে শোন এ্যারেস্টের আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে আজকে(রবিবার) এই এমপিকে আদালতে হাজির করে তাকে শোন এ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। এই শোন এ্যারেস্টের পরে নীলফামারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর বিজ্ঞ বিচারক দেলোয়ার হোসেন তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ২৩ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীর্ষ প্রতীকের প্রার্থী বেগম খালেদা জিয়ার ভগ্নীপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের নির্বাচনী প্রচারণার গাড়ীবহরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আফতাব উদ্দিন সরকার সহ আওয়ামী লীগের ৪৩ জনকে নেতাকর্মীকে নামীয় ও অজ্ঞাত আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন জোড়াবাড়ী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রবিউল ইসলাম। এছাড়াও ২০১৫ সালের ১৪ মার্চ উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মাসুদ বিন আমিন সুমনকে ডোমার শহরের কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন একটি চায়ের দোকান থেকে আফতাব উদ্দিন সরকারের নির্দেশে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর তাকে থানায় ব্যাপক নির্যাতন সহ ওসির মাধ্যমে ১০লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন সাবেক সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সাবেক আফতাব উদ্দিন সরকার ও ডোমার থানার তৎকালিন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের নাম উল্লেখ করে এবং ৩০ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন যুবদল নেতা সুমন।
উল্লেখ যে, আফতাব উদ্দিন সরকার ডিমলা সদর উপজেলার বাবুরহাট এলাকার মৃত এমাজ উদ্দিন সরকার ছেলে। তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা দুইবার ও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সময় তিনি আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। এসময় গত(২০২৪) ৫ আগষ্ট তার ডিমলা শহরের বাড়ি ভাংচুর ও পেট্রোলপাম্পে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
