জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের পর জেলায় দীর্ঘদিন উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। প্রায় অনাবৃষ্টির পর গত মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে বুধবার (২৯ এপ্রিল) ভোর পর্যন্ত কখনও হালকা আবার কখনও মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
জেলার দুই বৃহত্তম উপজেলা সদর ও শিবগঞ্জে গড়ে ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে কৃষি বিভাগ। জেলার অন্য তিন উপজেলা গোমস্তাপুর, নাচোল ও ভোলাহাটে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। বজ্রসহ বৃষ্টি হলেও ঝড় বা শিলাবৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন দিনে চৈত্রর তীব্র ক্ষরাক্রান্ত জেলাবাসী ও কৃষকরা।
এ দিকে, পরিবর্তিত আবহাওয়ায় ফাল্গুনের পর চৈত্র মাসের প্রথম তিন সপ্তাহ পর্যন্ত রাতে, ভোরে ও সকালে শীতল আবহাওয়া বিরাজ করেছে। ভোরে কখনও পড়ে কুয়াশা। এমতাবস্থায় বৃষ্টিতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তারা আশা করছেন আবহাওয়ার এই অবস্থা এখন কেটে যাবে। বাম্পার ফলন হবে আমের।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমির ৮১ লাখ ৪৫ হাজার ৪০টি আমগাছের ৯২ শতাংশে মুকুল আসার পর গুটি বেশ বড় হয়েছে। আমের জন্য চলতি মৌসুমের আবহাওয়া শুরু থেকেই যথেষ্ট অনুকূল বলছেন সংশ্লিষ্ট সবাই। মৌসুমে শীতের তীব্রতা কম থাকায় বেশিরভাগ মুকুল এসেছে আগাম ও সময়মত। চলতি মৌসুমের ডিসেম্বরে জেলার সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও জানুয়ারি থেকে তা ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, চলতি বছর হেক্টর প্রতি ১০ দশমিক ৩ মেট্রিক টন হিসেবে তিন লাখ ৮৬ হাজার ২৯০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই আরও বেশি উৎপাদনের ব্যাপারে আশাবাদী।
গত মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে তিন লাখ টন ও উৎপাদন হয় তিন লাখ ৪৮ হাজার ২৭৮ টন। গত মৌসুমে ৭৩ থেকে ৭৫ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল।
গত বছর ২০২৪ সালে ১৩৩ টন আম রফতানি হয়েছে মূলত: ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে। এর আগের বছর ২০২৩ সালে হয়েছিল ৩৭৬ টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘হালকা বৃষ্টি হলে এ সময় তা আম-ধানসহ সব ফসলের জন্য উপকার বয়ে আনবে। আপাতত আম চাষে বড় কোনো সমস্যা নেই।’
আমচাষি ও রফতানিকারক ইসমাইল খান শামীম বলেন, ‘গুটি ঝরার মুখে বৃষ্টির পর কয়েকদিন ফসলে কোনোরূপ বালাইনাশক দিতে হবে না। আমের বোঁটা শক্ত হবে। আম ঝরা কমে যাবে। আম বৃদ্ধির হার বাড়বে। আকার-আকৃতি ভালো হবে। প্রকৃতির ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের আক্রমণ কমে আসবে। তবে গাছের গোড়ায় সেচের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে জানান তিনি।
চাষি শফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে ব্যাপক মুকুল আসলেও বৃষ্টি না থাকায় ও খরার কারণে ঝরে পড়েছে ব্যাপক। এমন অবস্থায় এই বৃষ্টি অনেক কাজে দেবে। আমের গুটির দ্রুত বৃদ্ধি ঘটবে। ঝরে পড়া রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই বৃষ্টি৷
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘এ বছর আম বাগানে মুকুল ভালো এসেছে। কিছু মুকুল প্রথম দিকে নষ্ট হলেও গুটিও বেঁধেছে ভালো। বর্তমানে আম মার্বেল আকৃতির। আর কিছু গুটি মার্বেল আকৃতি পার হয়েছে। এই সময় বৃষ্টির দরকার ছিল বেশি। বৃষ্টি না হলে গুটি ঝরে পড়ে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত বাগানের সেচ দেয়া জরুরি। ভালোমতো বৃষ্টিপাত না হলেও কৃষকদের অবশ্যই বাগানে সেচ দিতে হবে। যাতে বাগানের পরিবেশ ঠান্ডা থাকে। এ সময় গাছে পানি স্প্রে করতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে দুই মিলিগ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে স্প্রে করলে গুটি ঝরার প্রবণতা কমবে। এটা গাছে শুধু একবার স্প্রে করা যায়।’
মোখলেসুর রহমান আরও বলেন, আম মার্বেল আকার অতিক্রম করলে আম ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ খেয়াল রাখতে হবে। ছিদ্রকারী প্রকার আক্রমণের শুরুতে কীটনাশক সুমিথিয়ন প্রতি লিটার পানিতে দুই মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আমের আঁটি হওয়ার আগ পর্যন্ত ছিদ্রকারী করা পোকার দমনে ২-৩ বার এ স্প্রে চালিয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।