নিউজ ডেস্ক: রাজধানী ঢাকায় চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। রাত বাড়তেই সবকিছু অশান্ত হয়ে উঠছে, আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন নগরবাসী। অফিস-আদালত, বাসাবাড়িতে, দোকান বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চুরি-ডাকাতি হচ্ছে। বাসে ডাকাতি হচ্ছে। রাস্তায় চলাচলকারী পথচারীরা ছিনতাইয়ের কবলে পড়া যেন নিত্যদিনের ঘটনা। বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটছে রাতে। রাত ১১টার পর নগরীতে পুলিশের তেমন তৎপরতা থাকে না। পুলিশ বক্সেও পুলিশ থাকছে না। ফলে রাত যত গভীর হয় ততই অনিরাপদ ও আতঙ্ক বাড়ে নগরবাসীর মধ্যে। পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত তৎপরতা না থাকায় ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে পড়ছে রাতের ঢাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সশস্ত্র চুরি, ছিনতাই ও ডাকাত চক্র এসব কাজে ব্যবহার করছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। ডাকাতির জন্য বেছে নিচ্ছে গভীর রাতে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলিতে বেপরোয়া এসব চক্র। যখন-তখন এরা চুরি-ছিনতাই-ডাকাতিতে লিপ্ত হচ্ছে। এদের হাতে আহত হয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে দুর্বিষহ জীবন। এদের হাতে প্রাণ হারানো বা নির্মম ঘটনার শিকার এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। একটু বল প্রয়োগ করতে গেলে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় থাকে। ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা, মুঠোফোন বা স্বর্ণালংকারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেড়ে নিচ্ছে।
বেশির ভাগ অপরাধীই নেশাগ্রস্ত। নেশার টাকা জোগাতে তারা এ পথ বেছে নেয়। সচেতন মহলের ধারণা, মাদকের চালান আটকাতে না পারলে মাদকাসক্তদের চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই থেকে ফেরানো অসম্ভব। কারণ যখই মাদকাসক্তরা নেশাদ্রব্য গ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করে তখনই তাদের প্রয়োজন হয় টাকার। আর হরহামেশাই এসব কর্মকা করে সে চাহিদা পূরণ করতে পারে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনা কমাতে হলে সামাজিক নজরদারি বাড়ানোসহ একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চুরি-ডাতাতি-ছিনতাই প্রতিরোধে আরও বেশি তৎপর হতে হবে।
১১ এপ্রিল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানে দুই চলন্ত বাসে ডাকাতি হয়েছে। এ সময় ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে যাত্রীদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে। বেলা ১২টার দিকে সাভারের ব্যাংক টাউন ব্রিজ এলাকায় সাভার পরিবহন এবং সোয়া ১২টার দিকে সিএন্ডবি এলাকায় রাজধানী পরিবহনের বাসে এ ডাকাতি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে। পরে যাত্রীদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়। এনিয়ে গত তিন মাসে সাভারে চলন্ত বাসে পাঁচটি ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
৭ এপ্রিল রাতে মুগদার গ্রিন মডেল টাউন সোসাইটির ডি-ব্লকের ৩ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর বাড়ির চারটি ফ্ল্যাটে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা নগদ টাকা ও সোনার অলংকার লুট করে। ডাকাতদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ভবনের চারজন আহত হয়। জানা গেছে, ১০-১৫ জন ডাকাত ওই ভবনে আসে। তারা ভবনের নিরাপত্তাকর্মীকে অস্ত্র দেখিয়ে জিম্মি করে। এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটের চারটির দরজা ভেঙে ডাকাতি করে। তাদের মুখ কাপড় ও মাস্ক দিয়ে ঢাকা ছিল। এ ঘটনায় মুগদা থানায় একটি মামলা হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, নগরীতে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি প্রতিরোধে র্যাব সর্বদা তৎপর রয়েছে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, রাতের ঢাকায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতের তৎপরতা রোধে চেকপোস্ট, ফুট পেট্রোলিং, টহলসহ গোয়েন্দা নজরদারি করে থাকে পুলিশ। এগুলো সক্রিয় ও কার্যকর করতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি ও মাঠপর্যায়ে গিয়ে মনিটরিং করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি নগরবাসীকে আতঙ্কিত করে তুলছে। কেউ যখন বিপদে পড়ে তখন কেউ প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসে না, এটা একটা বড় সমস্যা।