মমিনুল ইসলাম রিপন রংপুর।। আজ চৈত্র সংক্রান্তি। রাত পোহালেই সোমবার বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন, বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। আর বাঙালি মানেই উৎসব প্রিয়। তাই জোরেসোরে প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলা নববর্ষ বরণের।
বাংলার নতুন বছর ১৪৩২ কে স্বাগত জানাতে উন্মুখ পুরো দেশ। সারাদেশের মতো প্রাণের উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় বিভাগীয় নগরী রংপুর। বাঙালি আমেজে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে চলছে বর্ষবরণের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
পহেলা বৈশাখের চিরন্তন উৎসবকে ঘিরে নতুন প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন, শিল্পকলা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক ঐক্য পরিষদ, রামবা, রবীন্দ্র সম্মিলনসহ বিভিন্ন সরকারী ও সাহিত্য সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ইতোমধ্যে বাংলার নতুন বর্ষকে বরণ করে নেওয়ার জন্য ঐতিহ্যবাহী জিলা স্কুল মাঠের বটতলা প্রস্তুত। শোভাযাত্রা, গ্রামীণ মেলা,ঘুড়ি উৎসব, মিলন উৎসব-প্রায় সবকিছুর প্রস্তুতি চলছে মহাসমারোহে। প্রতিবারের মতো এবারও এ আয়োজনকে ঘিরে র্যালি, ঘুড়ি উৎসব, চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, বৈশাখী মেলা, খেলার আসর ইত্যাদি।
জেলা প্রশাসন রংপুরের উদ্যোগে সকাল ৮ টায় জিলা স্কুল বটতলায় জাতীয় সংগীত, এসো হে বৈশাখ গান পরিবেশন ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এরপর ১০টায় শোভাযাত্রা বের হবে। শোভাযাত্রা নগরীর জাহাজকোম্পানী মোড় হয়ে পূণরায় জিলা স্কুলের মাঠের বটতলায় অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরই এক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী কাবাডি খেলা। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কারাগার, হাসপাতাল, শিশু পরিবারের উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
এদিকে, উত্তরাঞ্চলের সাহিত্য সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র টাউনহল চত্বরে বর্ষবরণে কয়েকদিন থেকে শুরু হয়েছে সাহিত্য সংস্কৃতি কর্মীদের প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে তারা। মাঠে পহেলা বৈশাখে সকাল থেকে শুরু হবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে তৈরী করা হয়েছে মঞ্চ। সকাল ৭ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসনের শোভাযাত্রায় অংশ নিবেন সাহিত্য সাংস্কৃতিক কর্মীরা। পরে টাউনহল মাঠে বিসিক ও জাতীয় ক্ষুদ্র-কুটির শিল্পী মেলার উদ্বোধন হবে। এরপর দিনব্যাপী চলবে বাঙলার ঐতিহ্যকে তুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বর্ষবরণ মঞ্চে রাত পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন।
অন্যদিকে, অতীতের থেকে ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্যদিয়ে নববর্ষ বরণের উদ্যোগ নিয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বর্ষবরণে দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠান হাতে নিয়েছে। আজকের দিনে চৈত্র সংক্রান্তিতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল সোয়া ৯ টায় আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে বেরোবি প্রশাসনের উদ্যোগে। এরপর বৈশাখী মেলার উদ্বোধন। বিকেলে ব্যপক আয়োজেন ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হবে ক্যাম্পাসে। এছাড়াও দিনব্যাপী চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এছাড়াও পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চিকলী ওয়াটার পার্ক, ভিন্নজগত, গ্রান্ড প্যালেসসহ অভিজাত হোটেল, বিনোদন পার্কসহ স্থানীয় অনেক এলাকার ক্লাবগুলো।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মার্কেটগুলোতে কেনাকাটাও চলছে ধুমধামে। সকাল থেকেই কেনাকাটাও করছেন অনেকে। কেউ কেউ ঈদের কেনাকাটার সময় কিনেছেন। এক্ষেত্রে নারী ও শিশুরাও পিছিয়ে নাই। স্বভাবতই বাংলা নববর্ষের পোশাক-পরিচ্ছদে প্রাধান্য দিয়ে কেনাকাটা করছেন তারা।
সংস্কৃতিকর্মী বাপন বলেন, বাংলা বর্ষবরণে টানা কয়েকদিন থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি এবারে বাংলা বর্ষবরণে।
সাংস্কৃতিক ঐক্য পরিষদ রংপুরের আহবায়ক মাহমুদুন নবী ডলার বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারেও বাংলা বর্ষবরণে ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বাঙালীর ইতিহাস ঐতিহ্য লালন ও ধারণ করে আমরা এই উৎসব পালন করি। আর উৎসবের মধ্যদিয়ে নতুন প্রজন্মের মাঝে বাঙালীর ইতিহাস তুলে ধরা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ব্যপক আয়োজন করা হয়েছে। তবে এবারের আয়োজনে স্বৈারাচার না থাকায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। মানুষের মাঝে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো: মজিদ আলী বিপিএম বলেন, বর্ষবরণ রংপুরবাসী যাতে নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পারে এ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি রয়েছে। পাবলিক লাইব্রেরী মাঠ ও শিল্পকলা পরিদর্শন করা হবে। তাছাড়া সাদা পোশাকে কাজ করছেন মাঠে একাধিক টীম।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, বাঙালীর ইতিহাস ঐতিহ্যের বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বরণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকদফায় প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। জিলা স্কুল বটতলায় বর্ষবরণের সকল প্রস্তুতি চলছে।