আর্কাইভ  বুধবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ● ৩ বৈশাখ ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২৫

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ” ফেসুবকে ” ফেক আইডির ভয়ংকর চক্র

সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, রাত ০৩:০৪

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনপ্রবাসী কন্যা জাইমা রহমানের নাম ও ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে অসংখ্য ভুয়া আইডি, পেজ ও গ্রুপ খোলা হয়েছে। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই খুঁজলে মিলছে এসব অ্যাকাউন্ট। এসব অ্যাকাউন্টে জাইমা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আইডিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এসব ভুয়া আইডি থেকে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপপ্রচার করা হচ্ছে। এডিট করে শেয়ার করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট। কোনো কোনো আইডি থেকে রাজনৈতিক বিষয়ে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। আবার কেউ কুৎসা রটানো রিলস ও ভিডিও পোস্ট করছেন। বিভ্রান্ত ছড়িয়ে দেওয়া এসব পোস্টে সাধারণ ব্যবহারকারীরা মন্তব্য করছেন, কেউ সমর্থন জানাচ্ছেন, আবার কেউ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এর ফলে সবার কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। নানা প্রশ্নে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও বিব্রত হচ্ছেন। যেহেতু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কন্যা, সে কারণে মুখ ফুটে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না।

শুধু জাইমা রহমান নয়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এমনকি সরকারের উপদেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকাসহ আলোচিত পরিচিত ব্যক্তিদের নামে ফেসবুকে অসংখ্য ভুয়া আইডি রয়েছে। এসব আইডির মাধ্যমে একটি কুচক্রী মহল ভয়াবহ অপপ্রচার করে ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, এখনই এসব ভুয়া আইডি দমন না করলে সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ পাবে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটবে, অবিশ্বাস জন্ম নেবে। এখনই এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আগামী নির্বাচনের সময় এনিয়ে দেশের মধ্যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ফেসবুকে ‘জাইমা রহমান’, ‘ব্যারিস্টার জাইমা রহমান’, ‘জাইমা রহমান সমর্থক গোষ্ঠী’- এমন বিভিন্ন নামে অসংখ্য পেজ ও গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এসব পেজে নিয়মিত রাজনৈতিক বিষয়সহ নানা ধরনের কনটেন্ট শেয়ার করা হচ্ছে। যেখানে ব্যবহারকারীরা সক্রিয়ভাবে মতামত দিচ্ছেন। এসব আইডি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই নয়, বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালানো হয়ে থাকে।

তবে বিএনপি জানিয়েছে, জাইমা রহমান বর্তমানে কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় নন। তাঁর ব্যক্তিগত বা অফিশিয়াল কোনো অ্যাকাউন্ট বা কোনো প্ল্যাটফর্মেই তিনি নেই। এ কারণে জাইমার নামে তৈরি এসব পেজ ও আইডির সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছে দলটি।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাইমা রহমানের নামে ফেসবুকে যেসব আইডি ও পেজ চালু রয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া। এসব অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়েছে শুধু জনগণকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে। নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো কুচক্রী মহল অসৎ উদ্দেশ্যে আইডি খুলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় চিত্র নায়িকার নামে ২০টি ফেক আইডি খোলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রিয় এই নায়িকা বলেন, আমি নিজেই কনিফিউসড হয়ে যাই আমার নিজের আইডি নিয়ে। আমি বারবার অভিযোগ করেও এর কোনো সুরাহা করতে পারিনি। ফেক আইডির কারণে আমার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। কাছের মানুষও আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে গেছে।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ফেক আইডি খোলা অপরাধ। এ ছাড়া ক্ষতিকারক উপাদান (মন্তব্য, সংবাদ, ছবি, ভিডিও, অডিও) প্রকাশ করা ও এতে মন্তব্য, শেয়ার কিংবা লাইক দেওয়াও অপরাধ। এসব করলে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব। দেশে যেসব কনটেন্টকে (সংবাদ মন্তব্য ভিডিও, অডিও) ক্ষতিকারক হিসেবে বলা হয়, সেগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে হচ্ছে- পর্নোগ্রাফি, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে অসত্য সংবাদ, গুজব, ঘৃণা ছড়ানো ও জঙ্গি উপাদান। এ তিন ধরনের কনটেন্টে লাইক দেওয়া, শেয়ার করা, মন্তব্য করা কিংবা এ-সংক্রান্ত স্ট্যাটাস আপলোড করা অপরাধ। পর্নোগ্রাফি আইন ও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অধিকাংশ অপরাধই অজামিনযোগ্য। এসব ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে মামলা নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও সমাজ অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে ভুয়া আইডি তৈরি করার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব আইডি ব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুজব ছড়ানো, বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হতে পারে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, দেশের আইনে কেউ সিমকার্ড কিনতে গেলে এনআইডি দিতে হয়। অর্থাৎ ১৮ বছরের নিচের কেউ সিমকার্ডের মালিক হতে পারে না। কিন্তু ফেসবুকের নীতি অনুযায়ী, কেউ ১৩ বছরের ওপরে হলেই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ১৮ বছর বয়স হওয়া বাধ্যবাধকতা ও এনআইডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেন তিনি।

মন্তব্য করুন


Link copied