দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ১ নং খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়নে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব দুস্থ ও অসহায় মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফের ১৮শ’ নামের ভুয়া তালিকা করে ১৮ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ৫ আগষ্টের পরে এাই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব গ্রহণ মোঃ ছদরুল শামিম স্বপন। গত ঈদুল ফিতরে ভিজিএফ'র ভুয়া তালিকা প্রণয়ন করে অন্তত ১৮শ’ জনের নামে চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন, যার পরিমাণ প্রায় ১৮ টন চাল। এমন কি মৃত ব্যক্তির নাম ভিজিএফের তালিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই ঘটনায় ওই ইউনিয়নের প্রায় ৩শ’জন গরীব দুস্থ ও অসহায় মানুষ ভিজিএফ'র চাল না পেয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে জানানো হয়, তালিকায় একজনের নাম একাধিকবার ব্যবহার, মৃত ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা এবং এক ওয়ার্ডের লোকজনকে অন্য ওয়ার্ডের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার মতো নানা অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়নের মংলা গ্রামের বাসিন্দা তাহাজ্জত আলী জানান, আমার প্রতিবেশী রবিউল ইসলামের নাম ভিজিএফ'র তালিকায় রয়েছে। কিন্ত ওনি তিন বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। এমন আরও অনেক মৃত মানুষের নাম পাওয়া গেছে তালিকায়।
মাধবপাড়া গ্রামের কাশেম আলীর স্ত্রী বেগম জানান, ভিজিএফ তালিকায় তার সিরিয়াল ২৩৭৬ থাকলেও, চাল নিতে গেলে তাকে জানানো হয় তার নাম নেই। শুধু তিনি নন, এমন অভিযোগ করেছেন শত শত নারী।
ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার মাস্টার রোলের নম্বর ২১০, কিন্তু তালিকায় আমার নাম নেই। গরীবের চাল যদি চেয়ারম্যান খেয়ে ফেলে, তাহলে আমরা কোথায় যাব।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগকারী সাইমুমুর রহমান ডলার জানান, ১নং ওয়ার্ডের ৮৬ জনের, ২নং ওয়ার্ডের ৭৫ জনের, ৩নং ওয়ার্ডের ৬৩ জনের, ৪নং ওয়ার্ডের ৫৬ জনের, ৫নং ওয়ার্ডের ১১১ জনের, ৬নং ওয়ার্ডের ১৩১ জনের, ৭নং ওয়ার্ডে ৯২ জনের, ৮নং ওয়ার্ডের ১০৯ জনের ও ৯নং ওয়ার্ডের ৮৩ জনেরসহ মোট ৮০৬ জনের নাম অন্য ওয়ার্ডের মাস্টার রোলের সিরিয়ালে একাধিকবার ব্যাবহার করা হয়েছে। ওই নামের বিপরীতে বরদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ করেছে চেয়ারম্যান ও তার ঘনিষ্ঠরা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন ইউপি সদস্য জানান, ওই ইউনিয়নের দায়িত্বরত প্যানেল চেয়াররম্যান ছদুরুল শামিম স্বপন, ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শাহানুর রহমান, ৭নং ইউপি সদস্য আবুল কাশেম ও ৮নং ওয়ার্ড সদস্য জাহঙ্গীর আলম যোগশাজোসে ১৮শজনের ভুয়া ভিজিএফ তালিকা করে চাল আত্মসাৎ করেছেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামিম স্বপন মুঠোফোনে বলেন, পূর্বের চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। ভিজিএফের চাল বিতরণের দিন তদারকি অফিসার সহ ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে চাল বিতরণ করেছি। কোন অনিয়ম হয়নি।
অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (হাকিমপুরের অতিঃ দ্বাঃ) মোঃ সুজন মিয়া মুঠোফোনে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় স্যারের মাধ্যমে অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। চলতি সপ্তাহে তদন্তের কাজ শুরু করেছি এবং তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট জমা দিবো। এবিষয়ে আর কিছু আমি বলতে বা মন্তব্য করতে পারবো না।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন, উপজেলার ১ নং খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়নে ভিজিএফ'র চাল বিতরণ অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন জনের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য (অতিঃ দ্বাঃ) উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুজন মিয়াকে দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।