নিউজ ডেস্ক: গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। গত আট মাসেও প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। সম্প্রতি ব্যাংককে দুই দেশের সরকারপ্রধানের সাক্ষাতের পর ধারণা করা হচ্ছিল সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পথে এগোবে। তবে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য এবং অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। সঙ্গে বাণিজ্য ইস্যুতেও সম্পর্কে সৃষ্টি হয়েছে অস্বস্তি। এর ফলে নতুন করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সবশেষ ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের 'পূর্ণ নিরাপত্তা' নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। এর প্রক্রিয়ায় দিল্লি বলছে, 'অযৌক্তিক' ও 'গোপন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' মন্তব্য না করে বাংলাদেশের বরং নিজেদের সংখ্যালঘুদের রক্ষায় আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত।
নতুন করে বাগযুদ্ধের শুরুটা মূলত ভারত থেকেই। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ওয়াকফ সংশোধন বিল ইস্যুতে মুর্শিদাবাদের দাঙ্গার জন্য বাংলাদেশিদের ওপর দায় চাপান। দেশটির এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকালা বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) একটি প্রতিক্রিয়া দেন।
সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসকে শফিকুল আলম বলেন, মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বাংলাদেশকে জড়ানোর যেকোনো চেষ্টাকে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি। বাংলাদেশ সরকার মুসলিমদের ওপর হামলা এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তা হানির ঘটনার নিন্দা জানায়।
শফিকুল আলম বলেন, আমরা ভারত সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।
শুক্রবার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি পোস্ট করা হয়। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের বরাত দিয়ে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের ঘটনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করা মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করছে ভারত। রণধীর জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের সমান্তরাল একটা রূপ দেয়ার প্রচ্ছন্ন ও গোপন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চেষ্টা এটি। বাংলাদেশে এই ধরনের অপরাধের (সংখ্যালঘু নির্যাতন) জন্য দায়ীরা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অযৌক্তিক মন্তব্য এবং ভালো সাজার চেষ্টা না করে, বাংলাদেশ তার নিজ সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার দিকে মনোনিবেশ করলে বরং আরও ভালো করবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে টানাপোড়েন ক্রমশ স্পষ্ট হতে থাকে। জনসাধারণ পর্যায়েও সম্পর্কের একটা বড় অবনতি হয়েছে। একদিকে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংখ্যালঘু এবং হিন্দুদের ওপর হামলা এবং অত্যাচারের নানা রকম তথ্য, অপতথ্য এবং গুজব ব্যাপকভাবে প্রচার হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, অভ্যুত্থানকারী ছাত্রনেতা এবং বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায় ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তিগুলো থেকে ভারত যে যে বার্তা পেয়েছে সেটি নিয়ে তাদের অস্বস্তি আছে। এছাড়া, সীমান্ত ইস্যু, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য বা সেভেন সিস্টার্সসহ বিভিন্ন দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য বিবৃতিও চলে আসছে। সেসবের ধারাবাহিকতায় নতুন উপাদান যুক্ত করলো সংখ্যালঘু ইস্যুতে দুই দেশের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য।
এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। এরপর বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বাণিজ্য ইস্যুতেও দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির নতুন উপলক্ষ্য তৈরি হয়েছে। তবে ভারত কোনো বাণিজ্যযুদ্ধে জড়াতে চায় না বলে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ভারতের বন্দরগুলোতে যানজট তৈরি হচ্ছে। পণ্য পরিবহন করতে বহু সময় লেগে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ওই জট কাটাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
রণধীর মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও নেপাল-ভুটানে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। অর্থাৎ ওই দুই দেশে ভারতের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য করতে পারবে বাংলাদেশ। শুধু তা-ই নয়, এরপর রণধীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকেও জানিয়েছেন, ভারত চায় বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্ক। আমরা গণতান্ত্রিক, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা বাংলাদেশ গঠনের পাশে আছি।