বিশেষ প্রতিনিধি,নীলফামারী॥ ধর্ষনের মিথ্যে গুজব ছড়িয়ে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার গোমনাতী মডেল একাডেমির অধ্যক্ষ মিজান আহমেদের (৪২) ওপর মব জাস্টিটের ঘটনা ঘটেছে। তার বস্ত্রহরন, মাথার চুল কেটে রং মাখিয়ে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে বেধরক গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যার চেস্টা করা হয়। পুরো ঘটনাটি হামলাকারীরা ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রসারন করে ওই শিক্ষককে স্কুলের ছাত্রীকে ধর্ষক প্রমাণের অপচেস্টা চালিয়ে প্রচারনা করতে থাকে। খবর পেয়ে ডোমার থানা পুলিশ ছুটি গিয়ে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে থানায় আনার পর প্রতিপক্ষের মব জাস্টির আসল ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ে। ফলে হামলাকারিরা পালিয়ে যায়। ওই শিক্ষক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এঘটনায় আহত শিক্ষক মিজান আহমেদ নিজে বাদী হয়ে মব জাস্টিস কারী গ্রীণ স্টার একাডেমির অধ্যক্ষ রকিবুল ইসলাম বাবুকে প্রধান আসামী করে নামীয় আটজন সহ আড়াইশত জনের নামে ডোমার থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাটি এলাকায় সাধারন মানুষজনের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃস্টি করেছে।
এবিষয়ে সোমবার(২১ এপ্রিল) ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতৃঅ (ওসি) আরিফুল ইসলাম জানান, শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরের এই ঘটনায় ওই শিক্ষক মব জাস্টিসের অভিযোগ এনে রবিবার রাতে(২০ এপ্রিল) ডোমার থানায় নামীয় আটজন সহ অজ্ঞাত আড়াইশত ব্যাক্তিকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। সকল আসামী আতœগোপন করলেও তাদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। ওসি জানান, প্রাথমিক তদন্তে গুজব ছড়িয়ে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে তারা মিথ্যে মব জাস্টিট তৈরী করে ওই শিক্ষককে গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা করেছিল। খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ওসি আরও জানান, যে ছাত্রীকে ধর্ষনের গুজব তোলা হয় সেই পরিবারের অভিভাবকরাও থানায় এসে মব জাস্টিস সৃস্টিকারীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে।
মামলা ও ঘটনার বিবরনে এলাকার সচেতন মহল জানান, ডোমারের গোমনাতী মডেল একাডেমির অধ্যক্ষ হিসাবে মিজান আহমেদের সুনাম ছড়িয়ে পড়লে ওই প্রতিষ্ঠানে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী লিখাপড়া করছে। ফলে একই এলাকায় গ্রীণ স্টার একাডেমির অধ্যক্ষ রকিবুল ইসলাম বাবু পরিকল্পিত ভাবে গোমনাতী মডেল একাডেমির অধ্যক্ষের সুনামক্ষুন্ন করার চেস্টা চালাতে থাকে। ঘটনার দিন শনিবার ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানী ও ধর্ষন করেছে গোমনাতী মডেল একাডেমির অধ্যক্ষ মিজান আহমেদ। এমন গুজব ছড়িয়ে গ্রীণ স্টার একাডেমির অধ্যক্ষ রকিবুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে লোকজন এসে গোমনাতী মডেল একাডেমিতে এসে হামলা চালাতে থাকে। এরপর অধ্যক্ষ মিজান আহমেদকে টেনে হেচড়ে বাহিরে বের করে বস্ত্রহরণ, মাথার চুল ও মুখের দাড়ি কেটে রং লাগিয়ে গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে বাজরে ঘুরাতে থাকে। যা ফেসবুকে সরাসরি ধর্ষক পরিচয় দিয়ে প্রচারনা চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে হত্যার চেষ্টায় গণহারে পিটাতে থাকলে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
এদিকে যে ছাত্রীকে ধর্ষনের অভিযোগে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় সেই ছাত্রীর অভিভাবকরা এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। ওই ছাত্রীর বাবাও নিজে এসে মব জাস্টিসকারীদের বিরুদ্ধে ডোমার থানায় লিখিত অভিযোগ করে জানান, আসামীরা আমার মেয়েকে ধর্ষন করা হয়েছে মর্মে গুজব ছড়িয়ে আমার ও আমার মেয়ের সম্মান হানী করেছে। তিনিও এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বা আমার পরিবারের পক্ষে ঘটনার দিন থানায় কেউ এসে অভিযোগ দেয়নি। তাহলে আমাদের পক্ষে থানায় মিথ্যা অভিযোগ কারা দিয়েছে, তাদের সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হউক।