সেলাই মেশিনের সাহায্যে পোশাক সেলাই করার ইতিহাস মাত্র ২৬০ বছর আগের কাহিনী । সেলাই মেশিনের প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে, ১৭৫৫ সালে ইংল্যান্ড এর চার্লস ফ্রেডরিক প্রথম যান্ত্রিক সেলাই মেশিন আবিষ্কার ও প্যাটেন্ট করেন, যা দ্বারা হ্যান্ড স্টিচের ন্যায় স্টিচ উৎপন্ন করা যেত। বাণিজ্যিকভাবে সফল সেলাই মেশিন আবিষ্কৃত হয় ১৮৫১ সালে যার আবিষ্কার ইসাক মেরিট সিঙ্গার ।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেলাই মেশিন প্রস্তুতকারী হিসেবে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে নামকরা জাপানের জুকি কোম্পানি, ১৯৪৫ সালে জাপানের টোকিওতে স্থাপিত হয়। এবং ১৯৪৭ সালে তারা তাদের প্রথম সেলাই মেশিন তৈরি করে।
রেডিমেড পোশাক তৈরির ইতিহাস মাত্র ১৮০ বছরের প্রাচীন কাহিনী। ইংরেজি ১৮২৯ সালে ৮০টি সেলাই মেশিন নিয়ে প্যারিসে বিশ্বের প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপিত হয় এবং এ ফ্যাক্টরিতে মিলিটারিদের ইউনিফর্ম তৈরি করা হতো। গ্রেট ব্রিটেনের লিডস শহরে ১৮৫৬ সালে জন বেরেন ৩ টি সেলাই মেশিন নিয়ে প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চালু করেন ।
বাংলাদেশে প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপিত হয় ১৯৬০ সালে ঢাকার উর্দুরোডে যার নাম রিয়াজ গার্মেন্টস। প্রাথমিকভাবে রিয়াজ গার্মেন্টস এর উৎপাদিত পোশাক স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করা হতো। ইংরেজি ১৯৬৭ সালে রিয়াজ গার্মেন্টস এর উৎপাদিত ১০,০০০ পিস শার্ট বাংলাদেশ হতে সর্বপ্রথম বিদেশে (ইংল্যান্ডে) রপ্তানি করা হয়।
গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক ও গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে প্রকৃতপক্ষে ১৯৮১-৮২ সালে ০.১ বিলিয়ন টাকার রেডিমেইড গার্মেন্টস রপ্তানি করে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পদচারনা আরম্ভ হয়। উক্ত সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গার্মেন্টস শিল্পের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না। অথচ মাত্র ১০ বৎসরের ব্যবধানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমান ১৯৯২-৯৩ সালে ১৪৪৫ মিলিয়ন ইউ.এস ডলারে উন্নীত হয়।
এরপর থেকে বাংলাদেশকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। দিনকে দিন পোশাক রপ্তানির পরিমান বেড়েই চলেছে। যেখানে ২০১১-১২ অর্থবছরে সর্বমোট পোশাক রপ্তানির পরিমান ছিল ১৯,০৮৯.৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সেখানে তা ২০১২-১৩ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১,৫১৫.৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এর পরিমান ৯,৬৫৩.২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রপ্তানি আয় বাড়ার সাথে সাথে বাংলাদেশে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির সংখ্যাও দিনকে দিন বাড়ছে । বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫০০০ এর উপর গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি রয়েছে। যেগুলো থেকে প্রচুর পরিমানে পোশাক উৎপন্ন করা হচ্ছে।
দেশের অর্থনৈতিক চাহিদেকে আরও বেগবান করতে পোশাক শিল্পের কোন বিকল্প নেই একথা এখন খুব সহজেই বলা যায়। তাইতো আমাদের উচিত এই শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করে দেশের অর্থনিতীতে অগ্রণী ভুমিকা পালন করা।