আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৪ ● ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৪
 
 width=
 
 
 width=
 
শিরোনাম: কিশোরীগঞ্জে যুবলীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার       রংপুরে ভূকম্পের আঘাত       সেনাকুঞ্জে কুশল বিনিময় করলেন ‍মুহাম্মদ ইউনূস-খালেদা জিয়া       সেনাকুঞ্জে পৌঁছেছেন বেগম খালেদা জিয়া       ‘সুন্দর বেডরুম বানিয়ে লাভ কী, যদি অন্যকিছু নোংরা থাকে’- অপি করিম      

 

অগ্নিকাণ্ডের দায় এবং খেজুরে  পরিবর্তে বরই পরামর্শ - নজরুল মৃধা 

বুধবার, ৬ মার্চ ২০২৪, বিকাল ০৬:১৩

রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১০টার দিকে ভবনটিতে আগুন লাগে। এ ধরনে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি কারও কাম্য নয়। আইন না মেনে করায় এই দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনার জের ধরে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে বহুতল ভবন, রেস্তোরা বন্ধ এবং গ্রেফতারের ঘটনা ঘটছে।  অনিয়ম করে কিছু করলে তাদের শস্তি পাওয়া উচিত এটা প্রতিটি নাগরিকের কাম্য।  তবে অভিযানের নামে কিছুটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে এমন দাবি করেছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। এছাড়া অনিয়মগুলো যাদের দেখার কথা ছিল তারা দুর্ঘটনার আগের কোথায় ছিলেন এমন প্রশ্নও উঠেছে।   

আমাদের দেশে একটি কালচার রয়েছে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার পরেই সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ে। এর আগে সংশ্লিষ্টরা  কী করেন এমন প্রশ্ন করা যেতেই পারে।  যে সব সরকারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম তদারকি করার দায়িত্বে থাকেন তারা  সারা বছর কী করেন । ঘটনা ঘটার পরে কেন তারা নড়েচড়ে বসেন।  দুর্ঘটনার দায় কী তারা এড়িয়ে যেতে পারেন। ভবন কিংবা রেস্তোরার তদারকিতে যে সব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদের কি কৈফিয়তের আওতায় আনা যায় না । এমন প্রশ্নও উঠেছে। কারণ তাদের তদারকি যদি ঠিকঠাক মত চলত তা হলে অনেক দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন মহল।  যেমন  সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী  তারা যদি তাদের দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করত তাহলে এমন দুর্ঘটনা নাও ঘটতে পারত।  অনেকের মতে এসব সংস্থাকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। 

একটি রেস্তোরাঁ স্থাপনে ১০টি সংস্থার প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের অনাপত্তিপত্র, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেস্তোরাঁ লাইসেন্স, সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের লাইসেন্স নিবন্ধন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দোকান লাইসেন্স, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স,  সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ফায়ার লাইসেন্স, সিটি করপোরেশনের পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্র প্রয়োজন।  এসব ছাড়পত্র যারা প্রদান করেন তারা কতটুকু দায়িত্বশীল এমন প্রশ্নও উঠেছে।

অনেকে মনে করেন ঢালাও ভাবে  হোটেল রোস্তারা বন্ধ না করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা যারা ছাড়পত্র দিয়ে থাকেন তাদের মোটিভেশন প্রয়োজন।  কারণ  অনেক সময় ওইসব সংস্থা  বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করেন।  আবার কোন কোন সংস্থা অবৈধভাবে কিছু আর্থিক সুবিধার জন্য অসংগতিগুলো দেখেও না দেখার ভান করেন। ফলে ঘটে বিপর্যয়।  বিপর্যয় কিংবা দুর্ঘটনা ঘটার আগে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সমন্বয় করে কাজ করলে হয়তোবা ৪৬ জনের প্রাণহানির বিষয়টি এড়ানো যেত। কিন্তু সংস্থাগুলোর মধ্যে একে অপরের সমন্বয়হীনতার কারণে বারবার ঘটছে দৃর্ঘটনা।  দুর্ঘটনার পরে মাঠে নামে সংস্থাগুলো। তারা যদি আগে থেকে সতর্ক এবং কঠোর হত তবে আইন মেনেই সব কিছু হত।  সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা এবং উদাসিনতার কারণেই বারবার দুর্ঘটনা।  এসব দুর্ঘটনার দায় সংশ্লিষ্ট সংস্থা কোন ভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না।  তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত বলে মনে করছেন সচেতন মহল।  এছাড়া কোন দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমে করা হয় একাধিক তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি  তদন্তে কি পেল এটার কোন ফলোআপ দেশবাসি জানতে পারেন না।  তাই অনেকে মনে করেন তদন্ত কমিটি মানে ধামাচাপা দেয়ার একটি কৌশল।  তদন্ত কমিটর উচিত  যে সংস্থার উদাসিনতায় এমন ঘটনা ঘটেছে তাদের কাছে জবাব চাওয়া।  কারণ তারা কী নাকে তেল দিয়ে ঘুমান।  আইন না মেনে ভবন নির্মাণ, আইন না মেনে রেস্তেরা করা।  এসব প্রথম থেকে দেখলে  অনেক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।  
এদিকে অরেকটি বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে তা হল শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন আঙ্গুর, খেজুরের পরিবর্তে বরই পেয়ারা দিয়ে ইফতার করার জন্য জেলা প্রশাসকসহ দেশের সাধারণ জনগণকে পরামর্শ দিয়েছেন। আঙ্গুর- খেজুর নয়, বরই- পেয়ারা দিয়ে ইফতার করুন। সম্প্রতি রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, আপেল লাগে কেন? আঙুর লাগে কেন? আর কিছু নেই আমাদের। ইফতারে পেয়ারা খান, আমাদের যা আছে সেগুলো ব্যবহার করুন। ইফতারের প্লেট সেভাবে সাজান। শিল্পমন্ত্রীর এ ধরনের পরামর্শ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এছাড়া সাধারণ মানুষও মন্ত্রীর এমন বক্তব্য নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। আমাদের দেশের অনেক মানুষ ধর্মীয় ভাবে  খেজুরকে পবিত্র খাবার বলে মনে করেন। ধনি-গরিব সবাই ইফতারে এক টুকরো হলেও খেজুর খাওয়ার চেষ্টা করেন।  খেজুর পরিহার করার জন্য মন্ত্রী পরামর্শে অনেকেই মর্মহত হয়েছেন। 
চিকিৎসকদের মতে খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত একটি ফল। যা ফ্রুকটোজ এবং প্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর হয়।  খেজুরে  রয়েছে প্রচুর ভিটামিন বি। যা ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।  চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ দশমিক ৮ গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও খেজুরের রয়েছে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান। তাই খেজুরের বিকল্প কখনই বরই হতে পারে না।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

মন্তব্য করুন


 

Link copied