আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ ● ১৭ মাঘ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
 
 width=
 
 
 width=
 
শিরোনাম: রংপুর কে হারিয়ে প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রাখল খুলনা       গরিব মানুষ সবচেয়ে বেশি বরিশালে, কম চট্টগ্রামে       সরকারি চাকরিজীবীরা পাচ্ছেন নতুন সুখবর       ‘৪০০ কোটি টাকার মালিক’ সেই পিয়নের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা       কৃষক জেলাপ্রশাসকের কাছে চাইলেন হেলিকপ্টার, তারপর...      

 

অনলাইন জুয়া ও ভিসা প্রতারণা করে কোটিপতি তাঁতী লীগ নেতা সাহাবুল গ্রেপ্তার

বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫, রাত ০৯:৩২

নীলফামারী কিশোরীগঞ্জ উপজেলা তাঁতী লীগ নেতা ও অনলাইন জুয়া ও ভিসাচক্রের মূল নিয়ন্ত্রক সাহাবুল ইসলাম

বিশেষ প্রতিনিধি॥ এক সময় কিছুই ছিল না দিনমুজর যুবক সাহাবুল ইসলামের। নুন আনতে পান্থা ফুরাতো তার। এমনকি নিজের কুঁড়ে ঘরের ভাঙ্গা চাটাই মেরামতের টাকাও ছিল না। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন তাঁতীলীগে নাম লিখায় সে। ব্যাস আর কি লাগে এবার। সাহাবুল যেন এবার হাতে পেয়ে যায় আলাদ্দিনের চেরাগ। মাত্র কয়েক বছরে দিনমজুর থেকে হয়ে উঠে কোটি কোটি টাকার মালিক। টাকা আয়ের প্রধান উৎস ছিল অনলাইন জুয়া থাই লটারি ও ভিসা প্রতারণা। শুধু তাই নয় কখনও সাংবাদিক, ওসি, পুলিশ সুপার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ডিসি-ইউএনও প্রশাসনের উচ্চ পদের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা করেছেন সাহাবুল। 
অবশেষে কোটিপতি হওয়া সেই তাঁতী লীগ নেতা সাহাবুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যার নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলা বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 
আজ বুধবার(২৯ জানুয়ারি) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলা হাজতে পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেন কিশোরীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফুল ইসলাম। 
এদিকে তার গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে কিশোরীগঞ্জ উপজেলা জুড়ে বাতাসে আনন্দ ও উল্লাসের জোয়ার ভাসছে। তার প্রতারণার শিকার হওয়া অনেকে বিতরণ করেছে মিষ্টি। এলাকাবাসী জানান, ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পতন হলেও সাহাবুলের পতন হয়নি। দাপটের সাথে তার প্রতারনা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল এলাকায়। অবশেষে তারও পতন হলো। 
পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন থাই লটারি বিজয়ী করে দেওয়া ও উচ্চবেতনের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে কোটিপতি হন সাহাবুল। এছাড়া কিশোরীগঞ্জ উপজেলা জুড়ে থাই গেম ও ভিসাচক্রের মূল নিয়ন্ত্রক। তার অধীনে চক্রটির সদস্য কয়েক শতাধিক ব্যক্তি। আশপাশ এলাকায় তার অর্থের দৌরাত্ম্যে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হতো। এছাড়া সাংবাদিক, ওসি, পুলিশ সুপার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন ডিসি-ইউএনও প্রশাসনের উচ্চ পদের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে অনেককে জিম্মি করেও অপরাধ ও প্রতারণা কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন সাহাবুল। 
ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, সাহাবুল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে থাই গেম ও ভিসা প্রতারণার মূল নিয়ন্ত্রক। তার অধীনে কয়েক শতাধিক ব্যক্তি এই চক্রের সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে সে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওসি আরো জানান, থাই ও ভিসাচক্রের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কখনও লটারি পেয়ে দেওয়া আবার কখনও ভুয়া ভিসা প্রদর্শনপূর্বক প্রবাসীদের নিঃস্ব করে অর্থ হাতিয়ে সেই অর্থ আশপাশ এলাকায় অর্থের দৌরাত্ম্যে অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারসহ স্থানীয় শান্তিকামী সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে রাজত্ব কায়েম করেছিল সে। 
জানা যায়, নীলফামারী জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের নিতাই কাছারীপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদ এর ছেলে সাহাবুল। তার বাবা বেলতলি বাজারে ফুটপাতে বসে কাঁচামালের ব্যবসা করতেন। এতে যা আয় হতো তা দিয়ে কোন রকমে চলত এক ছেলে ও দুই মেয়েসহ পাঁচ পরিবারের সংসার। বড় ছেলে সাহাবুল ইসলাম ছিল ছিছড়া প্রকৃতির। মানুষের জমিতে কামলাও খেটেছে। আর এখন দাম্ভিকের সাথেই সাহাবুল চলছে সব কিছু যেন ম্যানেজ করেই। গাড়ী-বাড়ী হৈহৈ-রৈরৈ। এলাকার সাধারন মানুষজন সাহাবুলকে বাঘের মতো ভয় করেন। 
এলাকাবাসীর অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগের ক্ষমতার সময় থেকে সাহাবুলের ভিসা প্রতারণা শুরু হয়। ডলার দিয়ে মধ্য প্রাচ্যের ইমু নম্বর কিনে মোবাইলে সেটআপ দেন। নিজস্ব ফেসবুক পেজে ভিডিও বুষ্ট দিয়ে প্রবাসীদের মাঝে থাই গেমের বিজয়ী নম্বর ও ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বের ভিসা দেয়ার প্রলোভণ দেখিয়ে প্রবাসীদের ইমু ও হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেন। এতে বাংলাদেশী প্রবাসীরা যোগাযোগ করলে তাদেরকে নানা প্রলোভণ দিয়ে জাল পাসপোর্ট ও ভিসা দিয়ে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। টাকা নেয়া শেষ হলে তাদের নম্বর ব্লক করে দেন। সাহাবুল এভাবে প্রতারণার জাল বিস্তার করে হাজারো প্রবাসীকে নিঃস্ব করেছেন। এছাড়াও তিনি ভুয়া ডিবি সেজে মানুষদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। 
কথা হলে না প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা জানান, উপজেলা তাঁতীলীগের যুক্ত হওয়ার পর থেকে সাহাবুল জেলা উপজেলা নেতাদের সাথে ভালো সম্পক তৈরি করে। আগের উপজেলা কমিটিতে সাহাবুল সদস্য হিসেবে ছিল। কিন্তু গত বছর(২০২৪) উপজেলা তাঁতীলীগের আহবায়ক কমিটিতে ৬ নম্বর ক্রমিকে তার নাম আসে। ফলে ক্ষিপ্ত হয় অনেকে। এমনকি তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করলেও প্রভাবশালী নেতাদের সখ্যতা থাকায় সহজেই ছাড়া পেয়ে যেত। শুধু তাই নয় মাত্র কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক, দুই গাড়ি ও বাড়ি যেন ভরপুর সে। 
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, থাই গেমে শুধু প্রবাসীরা প্রতারণার শিকার হয়ে স্বর্বশান্তই হচ্ছে না, থাইগেমাররা এলাকার পরিবেশও নষ্ট করে দিচ্ছে। অসম অর্থের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। মুল্যবান এবং সম্মানিতো লোকজনদের তুচ্ছ তাচ্ছিলো করা হচ্ছে, সব জায়গায় অর্থের অহংকার দেখানো, সামাজিক অবক্ষয় শুরু হয়ে গেছে। এটা নির্মূল করা অতি জুরুরী হয়ে পড়েছে। সাহাবুল তাঁতীলীগের উপজেলা কমিটির নেতা হওয়ার পর থেকে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছে। শুধু সাহাবুল নয় প্রশাসনকে অবশ্যই এর সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারে মুখোমুখী করতে হবে এবং এদের স্বমূলে নির্মূল করতে হবে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied