আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ● ৫ আশ্বিন ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
 
 width=
 
 
 width=
 
শিরোনাম: ঢাবিতে পিটিয়ে হত্যা: ছয় শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার       আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে বেরোবিতে ক্লাস শুরু       গাইবান্ধায় অপহরণের পর হাত-পা বাঁধা স্কুলছাত্র উদ্ধার       কুড়িগ্রামে ধরলা নদীতে গোসল করতে গিয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র নিখোঁজ       ড.মুহাম্মদ ইউনুসকে সম্মান দেয়নি, মামলা দিয়েছিল জেলে রাখার জন্য- মির্জা ফখরুল      

 width=
 

আবু সাঈদের আত্মত্যাগের চিত্র তুলে আনা এনটিভির দুই সাংবাদিক সংবর্ধিত

বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দুপুর ০৪:৫৮

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের আত্মত্যাগের বিরল মূহূর্ত সরাসরি সম্প্রচারে সাহসী ভূমিকা রাখায় এনটিভির দুই সাংবাদিককে সংবর্ধনা দিয়েছে রংপুর প্রেসক্লাব। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

গত ১৬ জুলাই দেশজুড়ে আলোচিত আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ওইদিন আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হবার মূহুর্তটি তুলে আনা এনটিভির দুই সাংবাদিক হলেন রংপুরের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এ কে এম মঈনুল হক এবং স্টাফ ক্যামেরাপারসন আসাদুজ্জামান আরমান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোনাব্বর হোসেন মনা, সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী, সহ সভাপতি মমিনুর ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের বাপি,
কোষাধ্যক্ষ একেএম শরিফুজ্জামান বুলু, ক্রীড়া সম্পাদক জিতু কবির, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফরহাদুজ্জামান ফারুক, দপ্তর ও যোগাযোগ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, কার্যনির্বাহী সদস্য সদরুল আলম দুলু, সাইফুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, আব্দুর রউফ সরকার ও এসএম পিয়াল। 

অনুষ্ঠানে রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোনাব্বর হোসেন মনা বলেন, আবু সাঈদকে এভাবে সরাসরি গুলি করে হত্যার দৃশ্য দেখার পরে কোনো কথা বলার মতো ভাষা থাকে না। আমাদের প্রেসক্লাবের সদস্য একেএম মঈনুল হকের মাধ্যমে এনটিভিতে সরাসরি প্রচারিত ভিডিও সারাবিশ্ব দেখেছে। আবু সাঈদ বন্দুকের নলের কাছে মাথা নত করেনি। বরং বুক চেঁচিয়ে সকল অন্যায় অবিচার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। এখন আমরা যেন দেশ বিরোধী কোনো কাজ দেখে চুপ না থাকি, আমার যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলি। এটাই আবু সাঈদের আত্মত্যাগ থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রেরণা। 

সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সৌভাগ্যের অংশীদার হতে পেরেছে এনটিভির একেএম মইনুল হক ও সহকর্মী আসাদুজ্জামান আরমান। আবু সাঈদের আত্মত্যাগের বিরল মূহূর্ত তারা সরাসরি সম্প্রচারে সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে। গণমাধ্যম কর্মীরা যে সব সময় দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে কাজ করে, করছে এবং করবে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের মঈনুল হকের মতো মানুষেরা। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের প্রত্যেককে এভাবেই কাজ করতে হবে। এনটিভিতে আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হবার ভিডিওচিত্র সরাসরি সম্প্রচার করায় আমাদের দুই সহকর্মীকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। শুধু এনটিভি নয়, সাংবাদিক সমাজসহ পুরো দেশের মানুষের গর্ব করার মতো ঘটনা।

এনটিভির ক্যামেরাম্যান আসাদুজ্জামান আরমান ও রংপুর প্রতিনিধি এ কে এম মঈনুল হক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সেদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কীভাবে ঘটনাটি তুলে ধরেছেন তার আবেগঘন বর্ণনা দেন। এসময় সবার চোখ ভিজে যায়।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে আরমান বলেন, আবু সাঈদ যখন গুলিবিদ্ধ হয় তখন আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হচ্ছিল; যাতে আমরা ঘটনার ছবি বা ভিডিও না নিতে পারি। কিন্তু আমার টার্গেট ছিল যেভাবেই হোক ছবি বা ভিডিও নিতে হবে। পুলিশ কীভাবে এতো নির্মমভাবে গুলি করতে পারে তা সেদিন আমি নিজের চোখে দেখেছিলাম। পুলিশ যখন গুলি করে আমি ক্যামেরা সেদিকে ধরে রেখেছিলাম। বার বার নিষেধ করার পরও আমি ক্যামেরা সরিয়ে নেইনি। জীবনের ঝুঁকি ছিল। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল, টিয়ারশেল আসছিল। তারপরও আমরা সেই ভিডিও লাইভ করেছিলাম।

রংপুর প্রেসক্লাবের সম্মানিত সদস্য ও এনটিভির সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট একেএম মঈনুল হক বলেন, চব্বিশের ছাত্র জনতার আন্দোলনে বেশ কিছু স্মৃতি রয়েছে যা সত্যি সৌভাগ্যের। বিশেষ করে আবু সাঈদের জীবন উৎসর্গের মূহুর্তে নিজেকে ক্যামেরার সামনে রেখে বিশ্বকে সেদিনের নির্মমতা দেখানো। এসব স্মৃতি বা অর্জন আমাদের জীবনের মাইল ফলক হবে কিনা জানিনা তবে আমাদের সাংবাদিকতা জীবনে অসম্ভব এক মাত্রা যোগ করেছে। ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত বিপ্লবের সারথি হতে পেরেছি, আমাদের ভিডিও ফুটেজ ঘাতকের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিতে বিপ্লবীদের অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিল, সেটাই তো আমাদের জীবনের সেরা পাওয়া। আমি এনটিভি থেকে যে সম্মাননা পেয়েছি তা চব্বিশের সকল শহীদদের উৎসর্গ করেছি। ভালো থাকুক আমার দেশ, মা-মাটি-মানুষ, মনে রাখুক শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধদের কথা।

পুরো অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন প্রেসক্লাবের দপ্তর ও যোগাযোগ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করা হয়। পরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদসহ সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রেসক্লাবের সম্মানিত সদস্য মাহবুবুল ইসলাম, জাভেদ ইকবাল, আব্দুর রহমান মিন্টু, জাকির হোসেন, বিএম রাফিক উল হাসান গোর্কি, রাজু আহমেদ, আবেদুল হাফিজ, জাহাঙ্গীর আলম বাদল, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।  

মন্তব্য করুন


 

Link copied