আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৪ ● ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৪
 
 width=
 
 
 width=
 
শিরোনাম: কিশোরীগঞ্জে যুবলীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার       রংপুরে ভূকম্পের আঘাত       সেনাকুঞ্জে কুশল বিনিময় করলেন ‍মুহাম্মদ ইউনূস-খালেদা জিয়া       সেনাকুঞ্জে পৌঁছেছেন বেগম খালেদা জিয়া       ‘সুন্দর বেডরুম বানিয়ে লাভ কী, যদি অন্যকিছু নোংরা থাকে’- অপি করিম      

 

উত্তরের সড়কে ভোগাতে পারে ফিটনেসহীন গাড়ি

বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩, সকাল ০৯:২৫

ডেস্ক: ঈদে উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে নতুন যন্ত্রণা হিসেবে দেখা দিয়েছে ফিটনেসহীন হাজার হাজার গাড়ি। চলাচল অযোগ্য এসব গাড়িতে রং করে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে দূরপাল্লার যাত্রী বহনে। এ মুহূর্তে সড়ক নির্মাণ সমস্যার চেয়ে এসব যানবাহনকেই ‘গলার কাঁটা’ বলছেন সড়ক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা। তাঁরা মনে করছেন, শুরু থেকেই অবৈধ এই গাড়ি চলাচল বন্ধ করা না গেলে ঈদে যানজটে লেজেগোবরে পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। কারণ পাঁচ দিনের ছুটি পাওয়ায় এখন অনেকেই গ্রামের বাড়িতে ঈদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 বগুড়া শহরতলির চারমাথার ভবেরবাজারে ‘ভাই ভাই গ্যারেজ’। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো বেশ কয়েকটি গাড়ি রং করে নতুন অবয়ব দেওয়া হচ্ছে। ঠিক করা হচ্ছে বডির ভেঙে যাওয়া অংশ।

মালিক সোলায়মান আলী জানান, এগুলো ঈদে যাত্রী পরিবহন করবে। এ কারণে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে। তিনি এ পর্যন্ত ২০টির বেশি গাড়ি রং করে ডেলিভারি করেছেন। তাঁর গ্যারেজের মতোই একাধিক গ্যারেজে এভাবে পুরোনো গাড়িতে নতুন রূপ দেওয়া হচ্ছে। ফিটনেসহীন গাড়ি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আমরা গাড়ি চিহ্নিত করার কেউ না। এই কাজ পুলিশ ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের। তাঁরা নিজেদের কাজ ঠিকমতো করুক। তাহলে মহাসড়কে এই যন্ত্রণা আর থাকবে না।’

জানা গেছে, ভোগান্তি কমাতে ২০১৯ সালে এই মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু করে সড়ক বিভাগ, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের এপ্রিলে। দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে এই প্রকল্পের কাজ এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। তবে এখনও বেশ কয়েকটি স্থানে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় কাজ শেষ হয়নি। এখনও দুই লেনের যানবাহন চলছে এক লাইনে। এ ছাড়া গোবিন্দগঞ্জ অংশে এখনও নতুন সড়কের কাজ শুরু করা যায়নি। সেখানে সরু সড়কে এক লেনে চলাচল করছে যানবাহন। একইভাবে পলাশবাড়ী অংশে ফ্লাইওভার নির্মাণ করার কাজেও কোনো অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত সেখানে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করা যায়নি। এ কারণে রংপুর বিভাগে যাতায়াতকারী সব যানবাহনকে এই অংশে যানজটের কবলে পড়তে  হতে পারে বলে মনে করছেন চালক ও মালিকরা।

   এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক হামিদুল হক বলেন, এখন কাজ দ্রুত চলছে। ঈদে আমরা বগুড়া অংশে চারমাথা এবং বারপুর অংশের আন্ডারপাসটি খুলে দেব। এটার কারণে যানজট অনেক কমে যাবে। তবে মহাসড়ক থেকে ফিটনেসহীন অবৈধ গাড়ি কমানো না গেলে যানজট ঠেকানো সম্ভব নয়। কারণ এই গাড়িগুলোই সড়কের মধ্যে বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি করে।

গত ঈদের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, গতবার সড়কে ৫৬টি এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপরে ১৮টি গাড়ি বিকল হয়েছিল। এসব গাড়ির বেশিরভাগই মহাসড়কে চলার মতো উপযুক্ত নয়। একটি গাড়ি বিকল হলে সামনে-পেছনে বড় যানজট দেখা দেয়।

এদিকে ঈদে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশ থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ১৪ স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ। সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা করেছি। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গেও সমন্বয় করে কাজ করা হবে। আশা করছি, ঝুঁকিপূর্ণ অংশে কোনো ঝুঁকি থাকবে না। এ ছাড়া অবৈধ যানবাহন চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। একইভাবে উত্তরবঙ্গ, রাজশাহী ও পাবনা অভিমুখী যে পয়েন্টগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হবে, সেগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হবে।

বাস চালকরা বলছেন, এলেঙ্গা পর্যন্ত সড়ক চার লেন থাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলো এই পথটুকু নির্বিঘ্নে আসতে পারে। তবে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়কটি দুই লেনের। আবার সেতুও দুই লেনের। ফলে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনে আসা গাড়িগুলোকে এখানে এসে বাধ্য হয়েই ধীরগতিতে চলতে হয়। এখান থেকেই শুরু হয় যানজট।

বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজা সূত্র জানায়, বছরে প্রতিদিন সেতু পার হয় ২০ থেকে ২২ হাজার যানবাহন। ঈদের আগে তা বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার পর্যন্ত পৌঁছায়। গতবার ঈদযাত্রায় এক দিনে ৫৪ হাজারের বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছিল। স্বাভাবিকের চেয়ে যানবাহনের আধিক্য থাকায় দুই লেনের সড়কে যানজট লেগে যায়।

হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিওয়নের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনামাফিক কাজ করছি। সড়কে অবৈধ যান ও ফিটনেসহীন গাড়ি যাতে না চলে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি, এবার সমস্যা হবে না।’

এদিকে মঙ্গলবার বগুড়ার প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ঈদে উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে বগুড়ার চান্দাইকোনা বাজার, শেরপুর ও শাজাহানপুরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে সার্বক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। ঈদের সাত দিন আগে ও সাত দিন পরে মহাসড়কে অটোরিকশা ও থ্রি হুইলার চলাচল করবে না। মহাসড়কের বিভিন্ন ওভারপাস পয়েন্টের মুখ খুলে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌর মেয়র, পুলিশ প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে সজাগ থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

মন্তব্য করুন


 

Link copied