ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হবেন এক মাত্র ছেলে সন্তান আবু রায়হান। সেভাবে তাকে ছোট বেলা থেকে গড়ে তুলেছেন তার পরিবার৷ প্রাথমিক থেকে প্রথম স্থান অধিকারী রায়হান দাখিল পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৫৷ সদ্য প্রকাশিত আলীম পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে আবু রায়হান। স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ছুঁতে পারলোনা তার পরিবার৷ কৃতিত্বের সাথে ফলাফলে উত্তীর্ণ হলেও অধরা রয়ে গেল তাদের স্বপ্ন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে ঘাতকদের অগ্নিসংযোগে শহীদ হোন আবু রায়হান৷
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ফজলে আলম ও রেহেনা বেগম
দম্পতির সন্তান আবু রায়হান৷ বাড়ির পাশ স্কুল থেকে প্রাথমিক শেষ করে উত্তর হরিহরপুর মাদরাসা থেকে দাখিলে জিপিএ -৫ ও আলীমে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন রায়হান৷ মেধাবী আবু রায়হান ছিল পরিবারের এক মাত্র বাতিঘর৷
শুধুমাত্র পরিবারের বাতিঘর ছিলেন না আবু রায়হান৷ আত্নীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছে সম্ভাবনার আরেক নাম ছিল এ মেধাবী শিক্ষার্থী। শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের সাথে তার ফলাফলে তাকে নিয়ে গর্ব করতেন প্রতিবেশীরা। তবে রায়হান থাকলে আরো আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতেন তারা৷
এর আগে সন্তানের ফলাফলের কৃতিত্বে মিষ্টি মুখে মুখরিত ছিল পরিবার ও প্রতিবেশীরা৷ এবারের ফলাফলে সন্তানের স্মৃতি দেখে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন পরিবার, স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তবুও শহীদ সন্তানের বাবা-মা পরিচয়ে ভুলে থাকার চেষ্টা করেন ছেলের অনুপস্থিতি৷ সন্তানের শহীদের বিনিময়ে হলেও আর কোন প্রাণহানি ও বৈষম্য চাননা রায়হানের বাবা-মা৷
প্রতিবেশি শাহরিয়ার আলম বলেন, আমার থেকে দু বছরে ছোট হলেও বেড়ে ওঠা আমাদের একসাথে। তার মত মেধাবী ও ভদ্র ছেলে গ্রামে খুব কম রয়েছে৷ তাকে নিয়ে সবার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবে৷ আজকের ফলাফলে সে থাকলে অনেক খুশি হত৷
আরেক প্রতিবেশী জাহেদা খাতুন বলেন, এলাকার ভাতিজা হয় রায়হান৷ তার মেধা দেখে সবাই তাকে ডাক্তার বলে ডাকতাম। সে বেঁচে থাকলে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হত। আমরা একজন এলাকার গর্বিত ডাক্তার পেতাম৷
শহীদ আবু রায়হানের মা রেহেনা বেগম বলেন, আমার সন্তানকে নিয়ে কেউ কটু মন্তব্য করতে পারবেনা৷ সে অনেক ভদ্র ও ভালো ছিল। আমাকে বলত মা তোমার স্বপ্ন পূরণ করব ডাক্তার হয়ে৷ আমার ছেলে তো জিপিএ-৫ পেয়েছে৷ আর তো কোন ছেলে নেই আমার৷ কে স্বপ্ন পূরণ করব এখন৷ কি হবে আমার পরিবারের৷
শহীদ আবু রায়হানের বাবা ফজলে আলম রাশেদ বলেন, আজকের আনন্দের দিনে এতটুকু ভেবে আনন্দ লাগছে যে, আমার মেধাবী সন্তান শহীদ হয়েছেন দেশের জন্য। আমি একজন গর্বিত শহীদের বাবা। তাকে একজন মানবিক চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন পূরণ হয়নি৷ তবে তার রেখে যাওয়া নতুন বাংলাদেশ আবার নতুন করে সাজবে এই প্রত্যাশা৷
উল্লেখ্য, গত ৫ ই আগষ্ট আবু রায়হান সহ আরো ৩ জনকে ঠাকুরগাঁও রোড এলাকায় একটি বাসায় আগুন দেওয়া হয়। পরে এলাকাবাসি তাদের উদ্ধার হাসপাতালে। পরে চিকিৎসাধিন অবস্থা তার মৃত্যু হয়।