নিউজ ডেস্ক ; দ্রুত পাসপোর্ট করে দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী (ঝাড়ুদার) মো. মনির হোসেন হাওলাদার। তবে কাজ না করে দিয়ে উল্টো গালাগাল ও হুমকি দেন তিনি।
পরিচ্ছন্ন কর্মী হলেও চেয়ার-টেবিলে বসে অফিস করেন মনির। জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষকে জিম্মি করে নেন অতিরিক্ত টাকা।
টাকা না পেলেই শুরু করেন নানা হয়রানি ও টালবাহনা। ফাইল থেকে খুলে ফেলে দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।
কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এ ধরনের অপকর্ম হলেও এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে, ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মী অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
ঢাকায় রয়েছে অর্ধশতাধিক সিএনজি, ট্রাক ও ফ্ল্যাট বাসা।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ওই কর্মচারীর অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। পরিচ্ছন্নতাকর্মী মনিরকে ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে আটক করে স্থানীয়-জনতা। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে বিষয়টি মীমাংসার কথা বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন ওই অফিসের উপসহকারী পরিচালক মোজাম্মেল হক।
সাংবাদিকরা গেলে প্রবেশে স্যারের নিষেধাজ্ঞা আছে বলে জানায় অফিসের গেটম্যান। কিছুক্ষণ পর অনুমতি সাপেক্ষে সাংবাদিকরা প্রবেশ করলে উপসহকারী পরিচালক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
পাসপোর্ট করতে আসা রৌমারী উপজেলার পূর্ব খেদামারী গ্রামের ভুক্তভোগী শাহীন আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার কাছে মনির ইমারজেন্সিভাবে পাসপোর্ট করে দেওয়ার কথা বলে ১২ হাজার টাকা নেন। কিন্তু পাসপোর্ট আর দিচ্ছেন না তিনি। নানা হয়রানি শুরু করেছেন মনির।
আজ আমাকে নানা ধরনের গালাগাল ও হুমকি দিয়েছেন তিনি।’
পাসপোর্ট করতে আসা একই উপজেলার মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘মনিরকে দিয়েই আমি ৩ বছর আগে পাসপোর্ট করেছি। অহন পাসপোর্ট রিনিউ করতে আইছি। মনির হাওলাদার টাকা বেশি নিলেও ইমারজেন্সি কাজ করে দেন।’
চর রাজিবপুর উপজেলার বদরপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে মো. বাবুল মিয়া এক মাস আগে পাসপোর্টের প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দিলেও তার পাসপোর্ট হাতে পাননি তিনি।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে পাসপোর্ট করতে গেছি কিন্তু মাস পার হলেও তা পাচ্ছি না। কী যে কাহিনি তা আল্লাহই ভালো জানেন।’
স্থানীয় আতাউর রহমান ও আলম মিয়া ছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো একাধিক ব্যক্তি জানান, ‘অফিসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মনিরের মাধ্যমে অফিসাররা প্রতিটি পাসপোর্ট থেকে ভাগ নেন। এ জন্য মনির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হলেও তার ভাবখানা যেন অফিসের বস। অফিসের কর্মকর্তারা বদলি হলেও তার বদলি হয় না। পুরো অফিসকে জিম্মি করে রেখেছেন মনির।’
সাংবাদিক আসা টের পেয়ে মনিরকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন কর্মকর্তারা। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অফিসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মনিরের অনিয়ম ছাড়া আমার অফিসে আর কোনো অভিযোগ বা অনিয়ম নেই। যেহেতু তার বিরুদ্ধে আজ অভিযোগ পেয়েছি সুতরাং আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’ এর বাইরে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াদ আশরাফকে একাধিকবার ফোন দিলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।