নিউজ ডেস্ক : ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তাঁর সাবেক আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। তাঁর মালিকানায় রয়েছে বিলাসবহুল আটটি গাড়ি। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছে তাঁর আর্থিক সম্পৃক্ততা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাচার করেছেন ৩০০ মিলিয়ন (প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) ডলার। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। তবে এফবিআইয়ের প্রতিবেদনকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল মার্কিন বিচার বিভাগের অপরাধ বিভাগের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে এসব তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেয় এফবিআই। ওই প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি গত ডিসেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা।
এফবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তে জয়ের মালিকানায় আটটি বিলাসবহুল গাড়ি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ম্যাকলারেন ৭২০এস মডেলের গাড়ির বাজারমূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার ৫৭৮ ডলার (প্রায় ৩ কোটি ৪ লাখ ৭৪ হাজার ২৯৮ টাকা), মার্সিডিজ বেঞ্জ এএমজি জিটির মূল্য ১ লাখ ৯ হাজার ৮০৬ ডলার (প্রায় ১ কোটি ৩৩ লাখ ৫৪ হাজার ১৬৮ টাকা), মার্সিডিজ বেঞ্জ এস-ক্লাসের মূল্য ৫১ হাজার ৮ ডলার (প্রায় ৬২ লাখ ৩ হাজার ৩৮৯ টাকা), এসএল শ্রেণির মার্সিডিজ বেঞ্জের মূল্য ৭৩ হাজার ৫৭০ ডলার (প্রায় ৮৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৯০ টাকা), লেক্সাস জিএক্স ৪৬০ মডেলের গাড়ির মূল্য ৩০ হাজার ১৮২ ডলার (প্রায় ৩৬ লাখ ৭০ হাজার ৬১৪ টাকা), রেঞ্জ রোভারের মূল্য ৩৭ হাজার ৫৮৬ ডলার (প্রায় ৪৫ লাখ ৭১ হাজার ৫৯ টাকা), জিপ গ্র্যান্ড চেরোকির মূল্য ৭ হাজার ৪৯১ ডলার (প্রায় ৯ লাখ ১১ হাজার ২৫ টাকা) ও গ্র্যান্ড চেরোকির বাজারমূল্য ৪ হাজার ৪৭৭ ডলার (প্রায় ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৪ টাকা)।
এ ছাড়া পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে এফবিআই। এর মধ্যে রয়েছে ওয়াজেদ কনসাল্টিং, ইকম সিস্টেমস, এমভিয়ন ও ইন্টেলিজেন্ট ট্রেড সিস্টেমস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলোর গোপন তথ্যদাতা জয়ের দুই সহযোগীর নামও জানিয়েছে এফবিআই। তাঁরা হলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান ও নিজাম চৌধুরী।
প্রতিবেদনে এফবিআই জানায়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা হংকং ও কেম্যান আইল্যান্ডে সজীবের ব্যাংক হিসাব পেয়েছে। স্থানীয় একটি মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির মাধ্যমে ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক ও লন্ডনে সন্দেহমূলক অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি জানা গেছে। জয়ের সন্দেহমূলক কার্যকলাপ খতিয়ে দেখতে এফবিআই যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। স্পেশাল এজেন্ট লা প্রিভোটের সঙ্গে মার্কিন বিচার বিভাগের সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলসের যোগাযোগ হয়েছে। এর আগে তিনি বাংলাদেশ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার চুরি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাচারসংক্রান্ত একটি মামলায় ওয়াশিংটন ফিল্ডের সহায়তা চেয়েছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্র ও কেম্যান আইল্যান্ডে অর্থ পাচার করেছেন। বিচার বিভাগের সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ বা মানি লন্ডারিং বিভাগ এসব তহবিল খুঁজে বের, সংযত ও জব্দ করতে ওয়াশিংটন ফিল্ডের সহায়তা চেয়েছিল। তদন্তে ওয়াজেদ কনসাল্টিং ইনকরপোরেটেড নামে সন্দেহমূলক কার্যকলাপও পাওয়া গেছে। ওয়াজেদ কনসালট্যান্ট বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অনেক ব্যবসায় নিয়োজিত এবং বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্পে যুক্ত ছিল। এসব আর্থিক লেনদেনের বৈধতা নির্ধারণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সতর্কতার সঙ্গে যাচাইবাছাই ও তদন্তের দাবি রাখে।
এফবিআই আরও বলেছে, তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য যাচাই এবং যে কোনো সম্ভাব্য অবৈধ কার্যক্রম মোকাবিলায় সহযোগিতা করার জন্য দুদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ও ভার্জিনিয়ায় সজীবের স্ত্রী ক্রিস্টিনের সঙ্গে সন্দেহমূলক ব্যাংক কার্যক্রমের তথ্যও পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘এফবিআইয়ের প্রতিবেদনে দুর্নীতির যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। আমরা কখনো কোনো সরকারি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। অবশ্যই এ দুই দেশে আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তবে আমাদের কোনো অফশোর অ্যাকাউন্ট নেই। যে পরিমাণ অর্থের কথা বলা হচ্ছে, তা আমরা কেউ কখনো দেখিনি।’