আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৪ ● ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৪
 
 width=
 
 
 width=
 
শিরোনাম: কিশোরীগঞ্জে যুবলীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার       রংপুরে ভূকম্পের আঘাত       সেনাকুঞ্জে কুশল বিনিময় করলেন ‍মুহাম্মদ ইউনূস-খালেদা জিয়া       সেনাকুঞ্জে পৌঁছেছেন বেগম খালেদা জিয়া       ‘সুন্দর বেডরুম বানিয়ে লাভ কী, যদি অন্যকিছু নোংরা থাকে’- অপি করিম      

 

ঠাকুরগাঁও প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও সড়ক, ড্রেনেজ ও বর্জ্যব্যবস্থাপনা বেহাল অবস্থা

শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সকাল ০৯:০১

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও পৌরসভার প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে ১২টি ওয়ার্ডের সড়কের পিচ ঢালাইসহ ইটের খোয়া ওঠে গিয়ে খানাখন্দকে তৈরি হয়েছে মরণ ফাঁদ। শুধু তাই নয় সঠিক বর্জ্যব্যবস্থাপনা না থাকায় শহরের প্রবেশদ্বার সড়কের ধার সহ, বাসাবাড়ির আশপাশ যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তুপ করায় পরিবেশ পরেছে হুমকির মুখে। এছাড়াও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে নাজেহাল অবস্থা পৌরবাসীসহ সড়কে চলাচলকারী জনসাধারণের। 

১৯৯৭ সালে ৩ ফেব্রুয়ারীতে ঠাকুরগাঁও পৌরসভাকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। পৌরসভার ১৩৫ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে পাকাকরণ করা হয়েছে ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা ও ৫০ কিলোমিটার রাস্তা এখনো কাঁচা রয়ে গেছে। ৮৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক হলেও এসব রাস্তার প্রায় ৮০ শতাংশরই অবস্থা বেহাল। 

চলতি বর্ষা মৌসুমে দেখা যায়, সড়ক গুলো দীর্ঘ দিন থেকে সংস্কার না করায় ও যান চলাচলে রাস্তা গুলোর পিচের ঢালাই ও ইট উঠে গিয়ে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টিতেই রাস্তার গর্ত গুলোতে কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানি জমে থাকে। গাড়ি নিয়ে এসব রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন অনেকে। এছাড়াও পানি জমে থাকার কারণে রাস্তায় চলাচলকারীদের শরীরে কাদা পানি ছিটকে পোশাক নষ্ট হচ্ছে।

এছাড়াও পানি নিষ্কাশনের জন্য ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জজ কোর্ট চত্বরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আর সেই পানি বাসাবাড়িতেও ঢুকে যায় বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। অন্যদিকে শহরের প্রবেশদ্বার সড়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়কের ধারে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তুপের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ জনসাধারণ। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে দীর্ঘ ১০-১৫ বছর ধরে পৌরসভার রাস্তাঘাটের অবস্থা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন হয়নি। এতে চলাচল করতে দুর্ঘটনার শিকারসহ সামান্য বৃষ্টিপাতে সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি ও ড্রেনের পানি বাসাবাড়িতে প্রবেশ করে। এমন অপরিচ্ছন্ন ও নোংড়া পরিবেশে বসবাসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এবিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষকে অবগত করলেও নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। 

ইসলাম বাগ এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি বিগত ১০-১৫ বছর ধরেই দেখছি রাস্তাঘাটের একই অবস্থা। শহরের রাস্তা গুলো দিয়ে চলাচল করতে আমাদের খুবই অসুবিধা হচ্ছে। যখন তখন দুর্ঘটনার কবলে পরতে হচ্ছে আমাদের। এছাড়াও ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজে নিয়ে যেতেও অনেক সমস্যায় পরতে হয়। বিশেষ করে রাস্তার ধারে যেখানে সেখানে ময়লার স্তুপের দূর্গন্ধ পরিবেশ নষ্ট করছে। গন্ধে রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া যায় না। 

রাহেলা বেগম নামে গৃহবধূ বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় ঘাটে পানি জমে থাকে। এতে আমরা কোথাও ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারি না। রাস্তার এমন অবস্থা যে অটোরিকশা গুলোও যেতে যায় না। এছাড়াও ড্রেনগুলো ময়লা ও আবর্জনা পরে ভর্তি হয়ে গেছে। আকাশের পানি হলেও ড্রেনের পানি বাসায় এসে ঢুকে পরে। এবিষয়ে একাধিকবার পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। 

এদিকে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার ভাগারে পরিবেশ দূষণ হওয়ার পাশাপাশি দূর্গন্ধ ও ভাঙ্গাচোড়া ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে সাধারণ মানুষসহ বিদ্যালয় ও কলেজে যেতে শিক্ষার্থীদেরও পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। 

পৌর শহরের রাস্তার থেকে গ্রামের রাস্তাও অনেক ভালো আছে জানিয়ে মাজেদ অটোচালক বলেন, সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে দুর্ঘটনার শিকারসহ গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দ্রুত নষ্ট হচ্ছে ও রাস্তা ভাঙ্গা এবং গর্তের জন্য যাত্রীরাও গাড়িতে ওঠতে চায় না। 

এছাড়াও আরও অন্যান্য ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ও সড়কে চলাচলকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে রাস্তা সংস্কার এবং ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অনুরোধ জানান পৌর কর্তৃপক্ষকে। 

তবে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে ও সড়ক সংষ্কারের জন্য ইতিমধ্যে ৬৩ কোটি টাকার এস্টিমেট তৈরি করা হয়েছে। সেটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থাসহ দ্রুত সড়ক গুলো সংষ্কার করার কথা জানিয়ে পৌরসভার দায়িত্ব প্রাপ্ত নতুন প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, আমি যোগদানের পর দেখি যে, পৌরসভার রাস্তা গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। ইতিমধ্যে আমরা রাস্তা গুলো সনাক্ত করেছি ও সংষ্কার এবং নির্মাণ কাজের সাম্ভাব্য ব্যয়ের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে। এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আমরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে যেন কাজ গুলো করতে পারি সেটি চেষ্টা করছি। 

এছাড়াও তিনি বলেন, আমি দেখেছি অনেক জায়গায় সড়কের পাশে ময়লা আবর্জার ভাগার রয়েছে। পৌরসভার কিছু গাড়ি নষ্ট হওয়ায় ও জনবল কম থাকার কারণে কার্যক্রম বিঘ্ন হয়েছে। ড্রেনেজ ও বর্জ্যব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গাড়ি গুলো মেরামত করা হচ্ছে। সেগুলো ঠিক হলে পৌরসভাকে মানসম্মত অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।  

মন্তব্য করুন


 

Link copied