রংপুর ।। বিজ্ঞানসম্মতভাবে নদী খনন, দুই পাড় সংরক্ষণসহ সঠিক পরিচর্যা না হওয়ায় মরতে বসেছে খরস্রোতা তিস্তা। চারদিকে জেগে উঠেছে ধু-ধু বালুচর। নদীর আশপাশ এলাকায় পানি অনেক নিচে নেমে গেছে। অকেজো হয়ে পড়ার উপক্রম দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্প।
তিস্তার উজানে ছোট ছোট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করায় তিস্তাপাড়ের মানুষের কপালে চিন্তার ছাপ দেখা দিয়েছে। তাদের মাঝে দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। এমনিতে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্সা থেকে বঞ্চিত রংপুর অঞ্চলের মানুষ। প্রকৃতিতে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। শুকনো মৌসুমে একটু পানির জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে তিস্তার দুই পাড়ের মানুষ। অন্যদিকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে নদীপাড়ের মানুষ আন্দোলন- সংগ্রাম করে এলেও বিগত সরকার বিষয়টি আমলে নেয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি উঠলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি।
নদী নিয়ে কাজ করেন এ ধরনের একাধিক ব্যক্তি বলেন, তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী। এ নদীতে কিছু করতে হলে আন্তর্জাতিক আইন মেনে করা উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোনো আইন মানা হচ্ছে না। এমনকি পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনাও মানছে না। বাংলাদেশের কথা কেউ চিন্তা করছে না।
তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা সুজন মিয়া, মিজানুর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তাঁরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, শুকনো মৌসুমে পানি পাওয়া যায় না। ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। নদীবিষয়ক গবেষক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘তিস্তা আন্তর্জাতিক একটি নদী। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে খাল খনন করছে। এটা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। ভারতের বৈরী আচরণের পরেও যদি সঠিক পরিচর্যা করা যায় তাহলে তিস্তায় প্রাণ ফেরানো সম্ভব। জানা গেছে, ডালিয়ায় তিস্তা নদীর পানি সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের প্রথম পরিকল্পনা হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর দুই দেশে এ প্রকল্প আলাদাভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ অঞ্চলে প্রথম সম্ভাবনা যাচাই সমীক্ষা হয় ১৯৬০ সালে। দ্বিতীয় সমীক্ষা প্রতিবেদন ১৯৬৯-৭০ সময়ে সমাপ্ত হয়। পাকিস্তান আমলে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি পরিকল্পনা স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমি সেচ চাষের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পানিপ্রবাহ ঠিক না থাকায় প্রতিটি মৌসুমে হাহাকার ওঠে। ডালিয়া পয়েন্টের উজানে ভারত গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে একতরফা পানি প্রত্যাহার করায় সব সময় এ প্রকল্পে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে যথেষ্ট পানি সরবরাহ নিশ্চিত হলে এ প্রকল্পের এখনো বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।