লালমনিরহাট প্রতিনিধি।। কিছুদিন আগেও যে তিস্তা নদীতে ছিল থৈ থৈ পানি। সেই প্রমত্তা তিস্তা নদী এখন ধু ধু বালু চর। তিস্তা নদী শুকিয়ে এর বুকে জেগে উঠেছে চর। যে দিকেই তাকাবেন শুধু চর আর চর। আর এই চরেই আলু, পেয়াজ, রসুন ও মিষ্টি কুমড়াসহ রোপন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিস্তা পাড়ের কৃষকরা। তিস্তার চরে ব্যাপক পরিসরে চাষাবাদ হওয়ায় তিস্তা চরের নারী পুরুষদের কর্মসংস্থানও বেড়েছে। লালমনিরহাট জেলা কৃষি নির্ভর হওয়ায় চরাঞ্চলের নারী পুরুষদের বেশির ভাগ সময় এই কৃষি কাজেই ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। বাকী সময়টা তাদেরকে কাজ বিহীন অবস্থায় বসে থাকতে হয়।
কৃষকরা বলছেন কিছুদিন আগে ভারত থেকে হঠাৎ কাঁদা যুক্ত পানি এসে তিস্তা নদীর জেগে উঠা চর গুলোতে পলি জমেছে। তাই তারা মনে করছেন এবার তাদের ভাগ্য খুলে গেছে। এসব জমে উঠা পলি জমিতে ভাল আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের তিস্তার পাড়ে গেলে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে।
জানা যায়, তিস্তা নদীর উৎস ভারতের উত্তর সিকিমের হিমালয় পর্বতমালার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মিটার উচ্চতায় সোলামো হ্রদে অবস্থিত। হ্রদটি শেসচেনের কাছে ডোংখা গিরিপথের উত্তরে অবস্থিত। তিস্তা নদী ছাঙ্গু, ইউমথাং ও ডোংকিয়া লা পর্বতশ্রেণী থেকে উৎপন্ন ছোট ছোট নদীর জলে পুষ্ট।
নদীটি হাতীবান্ধার গড্ডিমারী ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ হয়ে কালীগঞ্জের ভোটমারী, তুষভান্ডার ও কাকিনা ইউনিয়ন, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়ন দিয়ে কুড়িগ্রাম জেলায় প্রবেশ করে। বাংলাদেশ অংশে এই তিস্তা নদীর দৈর্ঘ ১১৫ কিলোমিটার।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তিস্তা চরে এবার ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের ফলন হয়েছে। যা লক্ষমাত্রার থেকে দ্বিগুন প্রায়। লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ভুট্টার আবাদও ৩১ হাজার ৯শত হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়। এছাড়াও জেলায় এবার ১২ শত হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষমাত্রা মির্ধারন করা হয়েছে। ২শত হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ অর্জিত হয়েছে। এখনো পেয়াজ ও রসুনের পরিসংখ্যান পায়নি কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ জানায়, লালমনিরহাটের বিভিন্ন চরাঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার কৃষি আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে আলু, পেয়াজ, রসুন ও ভুট্টা বেশি আবাদ হয়।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের কৃষক শ্রী মনো রঞ্জন রায় জানান, তিস্তার চরে আমার আড়াই একর জমি আছে। বর্ষার পর এসব জমিতে চর জেগে উঠলে তিনি আলু, পেয়াজ, রসুন ও মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করেন। এসব সবজি বিক্রির পর খরচ বাদ দিয়ে তার প্রায় অর্ধেকের বেশি মুনাফা হয়। এবার মুনাফাটা একটু বেশি হওয়ার আশা করচেন। কারন কিছুদিন আগে ভারত থেকে হঠাৎ কাঁদা যুক্ত পানি এসে তিস্তা নদীর জেগে উঠা চর গুলোতে পলি জমেছে। আর এই পলি যুক্ত জমিতে আলু, পেয়াজ, রসুনসহ যেকোন ফসলের ফলন ভাল হয় বলে তিনি জানান।
গোকুন্ডা ইউনিয়নের কৃষক সামসুক হক বলেন, তিস্তার চরে তার দেড় একর জমি রয়েছে। তিনি অত্যান্ত আনন্দিত কন্ঠে বললেন, এবার ভাগ্যটা বুঝি একটু হবে। তিস্তায় তার জেগে ওঠা জমিতে প্রচুর পলি দেখতে পেয়েছেন। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবার তিনি তার সম্পুর্ন জমিতে আলু আবাদ করবেন।
একই কথা বললেন, খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল জলিল। তার জমির পরিমান মাত্র দুই বিঘা। এই দুই বিঘা জমিতে তিনি প্রতিবছর পেয়াজ ও রসুন আবাদ করেন। কিন্তু এবার তিনি আরো কিছু জমি বর্গা নিয়ে বলু আবাদ করবেন। এবার আলুর আবাদ ভাল হবে বলে তিণি মনে করছেন। তাছাড়া এবার আলুর দামও চড়া।
সব থেকে উপকার হয়েছে তিস্তা পাড়ের নারী-পুরুষ শ্রমিকদের। লালমনিরহাট জেলার নেশিরভাগ শ্রমিক কৃষি কাজে ব্যস্ত থাকে। কৃষি নির্ভর জেলা হওয়ায় চরাঞ্চলের নারী পুরুষদের বেশির ভাগ সময় এই কৃষি কাজেই ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। বাকী সময়টা তাদেরকে কাজ বিহীন অবস্থায় বসে থাকতে হয়।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ হামিদুর রহমান বলেন, এবার চরাঞ্চলের জমি গুলোতে পলি জমায় ধান ও ভুট্টার আবাদ লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়াও আলু, পেয়াজ, রসুন ও মিষ্টি কুমড়ার ফলনও ভাল হবে। এজন্য কৃষি অফিস থেকে চরাঞ্চলের কৃষকদের এসব ফসল আবাদে পরামর্শ ও বিনামুল্যে বীজ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।