বেরোবি প্রতিনিধি: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ হাজার গাছের মিউজিয়ামে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে অতি দুর্লভ কর্পূর গাছ। ধর্মীয় আচারে ব্যবহারসহ নানান গুণের এই গাছটি বিলুুপ্তির পথে। গাছের পাতা-ফল ও ফুল সব স্থানে এক ধরনের গন্ধ রয়েছে।
এ গাছটি সম্পর্কে জানা গেছে, কর্পূর গাছ ২০ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত গাছটির উৎপত্তি চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ জাপান, কোরিয়া ও ভিয়েতনামে। প্রায় ২০০ বছর আগে এসেছে ভারত উপমহাদেশে। কর্পূর গাছ মাটির প্রায় কাছাকাছি থেকে ডালপালাগুলো চারপাশে সমান্তরালভাবে ছড়িয়ে থাকে। গাছটি দৈহিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দূর থেকেই চেনা যায়। ফাল্গুন- চৈত্র মাসে ছোট ছোট সবুজাভ ফুল ফোটে। এরপর জাম-আকৃতির ফল আসে।
একটি পরিণত গাছ থেকে ৪-৫ কেজি কর্পূর পাওয়া যায়। গাছ থেকে মোমের মতো যে রস বের হয় তা থেকেই কর্পূর তৈরি হয়। তবে এর কান্ড, পাতা, ডাল সব কিছুতেই কর্পূর পাওয়া যায়। কর্পূরের স্বাদ তেতো, তবে সুগন্ধি, রং সাদা। সাধারণত গাছের বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়। শক্ত ও নরম কাঠের ডাল কেটে কলম করেও চারা তৈরি করা যায়। এর ঔষধি গুণের মধ্যে রয়েছে ত্বকে এলার্জি সমস্যা দূর করা, পানিতে কর্পূরের তেল ফেলে গোসল করলে এলার্জি কমে যায়। নখে ফাঙ্গাস সংক্রমণও ঠেকায়, ক্যান্ডিডা প্যারাপসিলোসিস, ট্রাইকোফাইটন মেন্টাগ্রোফাইটস জাতীয় ছত্রাকের সংক্রমণ দূরে রাখে। একজিমা কমানোর লোশন-ক্রিমে ব্যবহৃত হয়। বালিশে এক ফোঁটা কর্পূর তেল ফেলে রাখলে ভালো ঘুম হয়। শ্বাসনালিতে ঘা, সর্দি কাশিও দূর করে।
ধর্মীয় মতে কোনো অপবিত্র পদার্থ অপসারণের জন্য শরীর ধুয়ে ফেলা হয় কর্পূর দিয়ে। মৃত ব্যক্তির দেহে কর্র্পূর ব্যবহার করা হয়। এর গন্ধে ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী এ প্রজাতির গাছটি সংরক্ষিতের তালিকায় রয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ হাজার গাছ লাগানোর কারিগর বাংলা বিভাগের প্রধান ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, কর্পূরগাছ অতি দুর্লভ প্রজাতির। বেরোবি ক্যাম্পাসে শতাধিক দুর্লভ গাছ রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। বর্তমানে গাছটি ফল ধরার অপেক্ষায় রয়েছে। তিন বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে এই গাছের চারা এনে ক্যাম্পাসে লাগিয়েছিলেন তিনি।