নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বিকেল তিনটার দিকে শুরু হয়ে কয়েক ঘণ্টা চলে সংঘর্ষ। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে চারজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের ঘটনা নতুন নয়। প্রায়শই এই দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব, ছাত্রীদের কটু কথা ছাড়াও নানা কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দুই কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো অধ্যক্ষকেই এ নিয়ে দৃশ্যমান কাজ করতে দেখা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল তিনটার দিকে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয় পক্ষ লাঠিসোঁটা ও লোহার রড নিয়ে একে অপরকে ধাওয়া করে, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে কয়েকজন আহত হয়। এ সময় সায়েন্সল্যাব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা সেখানে অবস্থান নেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার তরিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা কলেজের দুইটি বাস ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
ঢাকা মেডিক্যাল রিপোর্টার জানান, দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে শাহরিয়ার (২১), নূর হোসেন (১৮), তুষার (১৯), সিজন (১৯), তানিম (২১), দেওয়ান নাঈম (২৩), নিরব (২১), আরাফাতসহ (২১) আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের অধিকাংশই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহতরা বলেছেন, বুধবার ঢাকা কলেজের ১৮৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠান শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে বাসযোগে সব শিক্ষার্থী বের হয়ে যান। তিনটি বাস সায়েন্সল্যাব মোড়ে পৌঁছালে সিটি কলেজের ছাত্ররা সেই বাসগুলো থামিয়ে ছাত্রদের মারধর করে। তবে এই হামলার কারণ সম্পর্কে এখনো কেউ নিশ্চিত হতে পারেননি।
ঢাকা মেডিক্যাল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন ছাত্র হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সায়েন্সল্যাবে ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আড়াই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দিলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হয়নি। পুলিশের টিয়ারশেলে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরাও। কিছুক্ষণের মধ্যে ঢাকা কলেজের কিছু শিক্ষার্থী সিটি কলেজে প্রধান ফটকে এসে ভাঙচুর শুরু করেন।
নিচ থেকে সিটি কলেজের ভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। ক্ষুব্ধ হয়ে ভবনের ভেতরে আটকাপড়া সিটি কলেজ শিক্ষার্থীরা ওপর থেকে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল ছোড়ে। এতে কলেজটির সামনে থাকা পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যম কর্মী, অভিভাবক ও উৎসুক অনেকে আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কলেজের ভেতরে ঢুকতে চাইলেও শিক্ষার্থীরা তাদের প্রবেশ করতে দেননি।
অন্যদিকে কলেজের ভেতরে আটকাপড়া অনেক শিক্ষার্থীর বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে সিটি কলেজের সামনে অবস্থান নেন। তারা সন্তানকে নিতে এসেছেন। অনেকের সন্তান ভেতরে সুস্থ আছেন জানালেও অনেকে তাদের সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।
সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আশপাশে খণ্ড খণ্ড হয়ে জড়ো হন। অন্যদিকে কলেজের ভেতরে অবস্থান নিয়েছেন সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা ভবনের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে জানালা ও করিডর দিয়ে ইট-পাটকেল ছুড়ছেন।
সূত্র জানায়, বাসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা কেন্দ্র করে দুপুর আড়াইটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সায়েন্সল্যাব মোড়ে সিটি কলেজ শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজের বাসে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন। অন্যদিকে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালিয়েছেন।
এদিকে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিপাকে পড়েন অফিস থেকে বাসামুখী কর্মজীবীরা। সংঘর্ষের কারণে সায়েন্সল্যাব মোড়ের আশপাশের সড়কে যানজট লেগে যায়। যানজট ছড়িয়ে পড়ে মিরপুর সড়ক থেকে শাহবাগ পর্যন্ত। এর ফলে কাওরানবাজার-ফার্মগেট এলাকার সড়কেও তীব্র যানজট দেখা গেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এবিএম রেজাউল করীম জনকণ্ঠকে বলেন, দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়টি জেনেছি। এটি নিয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছি। ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলার বিষয়। সে কারণে একাধিক বাহিনী সেখানে কাজ করছে। এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। এ নিয়ে দুই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, মতবিনিময় বা এমন উদ্যোগ কেন নেওয়া হয় না এমন প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, এটি একটি ভালো প্রস্তাব। দুই কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে এমন উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেব।