ডেস্ক: পরীক্ষা দিতে এসে গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা। তারা হলেন সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বেগম রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফি শাহরিন আরিয়ানা এবং আইবিএর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও আইবিএ অনুষদ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈকত রায়হান।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) তারা পরীক্ষা দিতে এলে বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তাদের প্রক্টর দপ্তরের মাধ্যমে মতিহার থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আটক সৈকত রায়হান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনের ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। আর আলফি শারিন আরিয়ানা আন্দোলনরত মেয়ে শিক্ষার্থীদের তালিকা করে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কাছ পাঠাতেন এবং হুমকি দিতেন।
আলফি শাহরিনের বিষয়ে সমাজকর্ম বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শেখ কবির উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘সে পরীক্ষা দিতে এসেছিল। তার বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ থাকায় শিক্ষার্থীরা তাকে পরীক্ষায় বসতে বাধা দেয়।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে পুলিশের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নিজ দায়িত্বে তাকে নিয়ে যায়। তার পরের পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।’
সৈকত রায়হানের বিষয়ে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সে পরীক্ষা দিতে এসেছিল। পরীক্ষা চলাকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কিছু ছাত্র এসে তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার দাবি করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী আমি তখন প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতা চাই। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসে মতিহার থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পুলিশ এসে পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। পরীক্ষা শেষে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরবর্তী পরীক্ষাগুলো নেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর দেখা যায়, তাদের একজন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। পরে মেয়েটির বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করে দুজনকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় যেটা করা দরকার পুলিশকে সেটা করতে বলেছি।’
পরবর্তী পরীক্ষাগুলো নেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরবর্তী পরীক্ষাগুলো নেওয়ার বিষয়ে বিভাগগুলো সিদ্ধান্ত নেবে। তারা যদি জামিন পেয়ে আসতে পারে, তাহলে পরীক্ষা দেবে বা যদি চায় জেলখানায় বসে পরীক্ষা দেবে সেটাও করা যাবে। এর আগেও অনেক ক্ষেত্রে এমন হয়েছে। আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও দাবি অনুযায়ী তাদের ছাত্রত্ব বাতিলের বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’
মতিহার থানার ওসি আব্দুল মালেক বলেন, ‘তারা দুজন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। সৈকত সম্প্রতি করা একটা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে চালান দেওয়া হয়েছে। আর আলফিকেও আজকে করা মারধর, সিট বাণিজ্য, ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শনের একটা নতুন মামলায় গ্রেপ্তোর দেখিয়ে চালান দেওয়া হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নামে গত ৮ অক্টোবর রাবি শাখা ছাত্রদলের এক নেতার করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হলেন সৈকত রায়হান। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার মতিহার থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর, দুজন সহকারী প্রক্টরসহ ছাত্রলীগের ৬১ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।