শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর: দীর্ঘ ৪ মাস ৯ দিন পর বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে ভারত। এতে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি যেমন বাড়বে তেমনি দাম কমে আসবে বলে দাবি করেছেন বন্দরের আমদানিকারকরা।
এর আগে অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সংকট ও দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে রফতানি নিরুৎসাহিত করতে পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ ভাগ শুল্ক আরোপ করে ভারত।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক সন্তোষ কুমার সারঙ্গি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য ভারতীয় ব্যবসায়ীদের জানানো হয়। সেই বিজ্ঞপ্তির কপি বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পাঠানোর মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা সেটি কেটে যাবে বলেও জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম ও মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সংকট ও দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে দীর্ঘ ৫ মাস ধরে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে রেখেছিল ভারত। পরবর্তীতে চলতি বছরের ৪ মে পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলেও ৪০ ভাগ শুল্ক আরোপ করে ভারত সরকার। এরপর থেকে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হলেও দেশের বাজারে দাম কমেনি। শুল্ক আরোপের কারণে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আনা কমিয়ে দেন আমদানিকারকরা। পরে দেশের বাজারে দাম কিছুটা বাড়লে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি নিয়মিতভাবে শুরু হয়। কিন্তু সেই শুল্ক পরিশোধ করে বাড়তি দামে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। যার কারণে বিকল্প হিসেবে মিশর, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের দিকে ঝুঁকে পড়েন আমদানিকারকরা। মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি থেকে।’
তারা আরও জানান, এমন অবস্থায় গত কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল পেঁয়াজ রফতানিতে যে শুল্ক আরোপ করেছিল ভারত সেটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আরোপিত ৪০ ভাগ শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি বাংলাদেশি আমদানিকারকদের নিশ্চিত করেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই এটি কার্যকর হবে বলেও জানান তারা। শুল্ক প্রত্যাহার হলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি যেমন বাড়বে তেমনি দেশের বাজারে দাম কমবে বলে মনে করেন আমদানিকারকরা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৮ অক্টোবর রফতানি মূল্য বাড়িয়ে ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে ভারত। সে দামেই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করছিলেন আমদানিকারকরা। পরে বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ৭ ডিসেম্বর ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার পরিচালক জেনারেল সন্তোষ কুমার স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে।
এরপর থেকেই হিলিসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। গত ২৩ মার্চ সেই মেয়াদের সময়সীমা বাড়িয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। যা ৪ মে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নেয় দেশটির সরকার। কিন্তু রফতানিতে ৪০ ভাগ শুল্ক আরোপ করে রেখেছিল ভারত।