আর্কাইভ  শুক্রবার ● ৩১ জানুয়ারী ২০২৫ ● ১৮ মাঘ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
 
 width=
 
 
 width=
 
শিরোনাম: নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জামায়াতের আল ফারুক সভাপতি-বিএনপির আল মাসুদ সাধারণ সম্পাদক       ভারতে পাচার হওয়া ১৬ কিশোর-কিশোরীকে বেনাপোল দিয়ে হস্তান্তর       রংপুরে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী গ্রেপ্তার       রংপুর প্রেসক্লাবের কমিটি বিলুপ্ত করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে নিয়োগ       বাটলার কোচ থাকলে খেলবেন না সাবিনারা, গণ অবসরের হুম      

 

ফিরে দেখা ২০২৪: ‘আপনি প্লিজ উত্তেজিত হবেন না’

শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, রাত ০৮:৫৬

উত্তর বাংলা ডেস্ক : ২০২৪ সালের বিদায়ঘণ্টা বেজে উঠেছে। বাংলাদেশের জন্য এ বছরটি ছিল ঐতিহাসিক এবং বৈশ্বিক মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে দেশ নতুন স্বপ্নপূরণের পথে যাত্রা শুরু করেছে। বছরজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা, আন্দোলন, সংগ্রাম এবং বিতর্কিত মন্তব্যগুলো দৃষ্টি কেড়েছে সবার। মাঠ-ঘাট থেকে শুরু করে নেটদুনিয়া—সর্বত্রই বেশকিছু রাজনৈতিক ব্যক্তির বক্তব্য এবং মন্তব্য ছিল আলোচনার শীর্ষে। চলুন, ফিরে দেখি সেই সমস্ত মন্তব্য, যা রাতারাতি রাজনীতিবিদদের নতুন পরিচয়ে উপস্থাপন করেছে।

খেলা শেষ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি, শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘খেলা শেষ।’ তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বিএনপি একটা ভুয়া দল। তাদের আন্দোলন ভুয়া, কর্মসূচি ভুয়া, একদফা ভুয়া।’

এই বক্তব্য বিদায়ী বছরের শুরুতেই তুমুল আলোচনায় আসে। নিজের বক্তব্যের শুরুতে ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, ‘বক্তৃতা করব না। নির্বাচনের খেলা শেষ। এখন শুরু হবে রাজনীতির খেলা। খেলা হবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, খেলা হবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে।’

তিনি আরও বলেন, ‘৭ জানুয়ারিতেই খেলা শেষ। বিএনপি ভুয়া দল। তাদের কর্মসূচি ভুয়া। তাদের নেতা ভুয়া। তাদের ভবিষ্যৎও ভুয়া এবং কেবল অন্ধকার।’

এই বক্তব্যের পর থেকেই ‘খেলা হবে’ ডায়লগটি নতুন করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বছরের অন্যতম আলোচিত বাক্য হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে।

 

আমি ফেসবুকের এমপি

২০২৪ সালের আরেকটি বহুল আলোচিত বক্তব্য এসেছে বিগত সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছ থেকে। ৬ ফেব্রুয়ারি, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ফেসবুকের এমপি, শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের ফসল।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ডিজিটাল বাংলাদেশের ফসল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।’ সেদিনের আলোচনায় ব্যারিস্টার সুমন জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন দেখা হয়, তিনি বলেছিলেন— তুমি তো ফেসবুকের মাধ্যমে এমপি হয়ে গিয়েছ। আমি এটা পরিষ্কার করতে চাই যে, আমি ফেসবুককে ব্যবহার করেই এমপি হয়েছি।’

 

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশকে ডিজিটাল রূপান্তরিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী, যার ফলে আমি ফেসবুকে ৭ মিলিয়ন ফলোয়ার তৈরি করতে পেরেছি। এই বিবেচনায় আমি ফেসবুকের এমপি। তবে শেখ হাসিনাই আমাকে ফসল হিসেবে তুলে ধরেছেন।’

ব্যারিস্টার সুমনের এই মন্তব্যে উপস্থিত সকলেই, এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হাসিতে মেতে ওঠেন। তার এই বক্তব্য দ্রুতই ভাইরাল হয়ে বছরের অন্যতম আলোচনায় পরিণত হয়।

রাজাকারের নাতি-পুতি

চলতি বছরের চীন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ বলে অভিহিত করেন। তার এই বক্তব্যের প্রতিকৃয়ায় সেদিন রাতেই উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার। কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার।’ তার এই বক্তব্যের প্রতিকৃয়ায় সেদিন রাতেই উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার। কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার।’

শিক্ষার্থীদের এই স্লোগানকে ইস্যু করে একে একে উস্কানীমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী ‎মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, তথ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতসহ অনেকেই।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার এক বক্তব্য বলেন, ‘এসব রাজাকারদের প্রতিহত করতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট।’

আমার সঙ্গে রাবিশ কথা বলবেন না

২০২৪ সালে 'টু দ্য পয়েন্ট' নামের একটি টকশোর একটি পর্ব নেটদুনিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলে। এই পর্বে উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরী এবং সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা দেখা যায়। আলোচনার এক পর্যায়ে বিচারপতি মানিক দীপ্তির উদ্দেশ্যে বলেন, "আমার সঙ্গে রাবিশ কথা বলবেন না।" উত্তরে দীপ্তি শান্তভাবে জবাব দেন, "আপনি প্লিজ উত্তেজিত হবেন না।" এই সংলাপ বিনিময় মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় এবং বছরজুড়ে এটি নিয়ে নানা আলোচনা ও মিম তৈরি হয়। দীপ্তির পেশাদারিত্ব ও ধৈর্যশীল আচরণ বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়।

এই ঘটনার পর দীপ্তি চৌধুরী গণমাধ্যমে বলেন, "যে মানুষটি অতিথি হয়ে আসেন, তিনি আমার জন্য সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তি। তাকে আমি সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে তার আচরণ আমাকে কখনও প্রভাবিত করে না, করেনি। সবসময় চেষ্টা করি আমি যেন নিজের জায়গাতে ঠিক থাকতে পারি।"

এই টকশো পর্বটি চ্যানেল আইয়ের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়, যা দর্শকদের মধ্যে তুমুল আগ্রহের সৃষ্টি করে।

ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে

২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত 'জুলাই বিপ্লব' চলাকালে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার বিষয়ে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের একটি মন্তব্য বিশেষভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হয়। তিনি বলেন, "সরকার দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করেনি, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে।"

এই মন্তব্য তিনি ২৭ জুলাই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডাক ভবনে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৪তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত 'শান্তির জন্য বৃক্ষ' অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, "আমরা কোথাও ইন্টারনেট বন্ধ করিনি। বন্ধের কোনো নির্দেশও দেইনি। কোথাও কোথাও ইন্টারনেটের সমস্যা হচ্ছে।"

তবে, অন্তর্বর্তী সরকারের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল।

পলকের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন মহলে সমালোচনার মুখে পড়ে। এমনকি, ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও প্রক্রিয়াধীন।

এছাড়া গত ১৭ ডিসেম্বর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরা শেষে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রিজন ভ্যানে ওঠার সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, "দোয়া করবেন ভাই, বোবা হয়ে আছি, বোবা!"

সাংবাদিকরা তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আপনারা মুক্ত আছেন তো, আমরা বোবা।"

এ সময় তিনি হাতের একটি আঙুল মুখে চেপে ধরে চুপ থাকার ইঙ্গিত দেন।

পরে ধীরে ধীরে হেঁটে তিনি প্রিজন ভ্যানে ওঠেন।

আমাকে আটকে রাখলে দেশেরই ক্ষতি

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এর পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেপ্তার শুরু হয়। ১৩ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, 'আমাকে আটকে রাখলে, আমার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৮০ হাজার লোক বেতন পাবে না। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেওয়া হয়েছে সেই ঋণের কিস্তি দিতে পারব না। এতে দেশেরই ক্ষতি হবে। তাই আমাকে ছেড়ে দিন। আমি দেশ ঠিক করে দেব।'

ডিবি কর্মকর্তা জবাবে বলেন, 'আপনি ঠিক করলে এখানেই করুন। কোর্টে গিয়ে কথা বলুন। কিন্তু আপনাকে ছাড়া হবে না। একের পর এক মামলায় কমপক্ষে এক বছর আপনাকে রিমান্ডে থাকতে হবে।'

রিসেট বাটন

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত অক্টোবরে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘রিসেট বাটন’ শব্দ দুটি ব্যবহার করেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে চলে নানা বিশ্লেষণ। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার এ শব্দ দুটি ব্যবহারের বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন প্রেসসচিব।

সেখানে তিনি বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন যে তিনি রিসেট বাটন টিপছেন। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি থেকে নতুন করে শুরু করা, যা বাংলাদেশের সব প্রধান প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে, অর্থনীতিকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে এবং ১০ লাখ মানুষের ভোটের অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা হরণ করেছে।

‘রিসেট বাটন পুশ করেছি; এভ্রিথিং ইজ গন’ এ কথার মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের গর্বিত ইতিহাস মুছে দিতে চাননি বলেও জানান শফিকুল আলম।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যখন আপনি রিসেট বাটনটি টিপবেন, আপনি আবার সব শুরু করার জন্য সফটওয়্যার রিসেট করবেন।

এটি হার্ডওয়্যার পরিবর্তন করে না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের হার্ডওয়্যার সৃষ্টি করে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied