উত্তর বাংলা ডেস্ক: গৃহবন্দী নয় বরং রাষ্ট্রীয় অতিথির মত মর্যাদা নিয়ে দিল্লিতে দিন কাটাচ্ছেন পলাতক আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। পাচ্ছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদমর্যাদার ভিভিআইপি দের জন্য নির্ধারিত জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা।
দিল্লিতে থাকা মেয়ে সায়মা আর যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ছেলে সজীব ওয়াজিদের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই যোগাযোগ করছেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নেয়ার অনুমতিও আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর। এমনকি ইচ্ছেমত অ্যাক্সেস করতে পারেন ইন্টারনেট। ভিনদেশে বসে তাহলে কি হাসিনা নিচ্ছেন মাঠে নামার প্রস্তুতি? কড়া গোপনীয়তার মাঝে তাকে আশ্রয় রাখার কারণ কি শুধুই পুরনো বন্ধুত্ব?
৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা যখন পালিয়ে ভারতে যান দিল্লি কর্তৃপক্ষ মনে করেছিল সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতি করেছেন তারা। পরবর্তীতে গাজীয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটি থেকে তাকে সরিয়ে নেয়া হয় দিল্লির কোন গোপন ঠিকানায়। ১৯৭৫ মুজিব পরিবারের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে শহরটির অভিজাত এলাকা পান্ডারা রোডের ম্যারামি এক সরকারি ফ্ল্যাটে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৫ বছর এমন গোপনীয়তার মাঝেই বসবাস করেছেন মুজিব কন্যা। সেই সময়ের মতো এবারও অতি গুরুত্বপূর্ণ অতিথির জন্য রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিকিউরিটি প্রটকল।
শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর থেকেই তার স্ট্যাটাস ও অবস্থানের বিষয়টি নিয়ে চরম গোপনীয়তা রক্ষা করে আসছে নয়া দিল্লি। পুরনো মিত্রের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোনো রকম ভুল করার দায় দিতে চাইছে না মোদি প্রশাসন। সারাক্ষণ তাকে চোখে চোখে রেখেছে সাদা পোশাকের কমান্ডরা। এমন পরিস্থিতিতে দিল্লির নদী গার্ডেন কিংবা নিজামুদ্দিন আওলিয়ার দরগায় হাসিনার যাওয়ার বিষয়টিকে নিতান্ত গুনজন বলে মনে করেন ভারতের সংশ্লিষ্টমহলের কর্মকর্তারা। পঁচাত্তরে দিল্লিতে বহুদিন বসবাস করেছেন শেখ হাসিনা সেই সময় রাজনীতি ও কুটনীতির বাইরেও নিজস্ব মিত্রদের একটি সার্কেল গড়ে তুলেছিলেন তিনি। পুরনো পরিচিত এসব ঘনিষ্ঠ জনদের অনেকেই এর মধ্যে হাসিনার সঙ্গে সামনা সামনি দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা বিবিসি।
ভারতে কোন কোন পর্যবেক্ষণ মনে করেন দলের নেতাকর্মীদের সাথে কথাবার্তা হওয়ার সুযোগও করে দিচ্ছে দিল্লি। হাসিনা যাতে প্রস্তুতি নিতে পারেন মাঠে নামার তৈরি করে দেয়া হচ্ছে সেইক্ষেত্র। বরাবরই সতর্ক অবস্থানে থেকে হাসিনা পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে নয়া দিল্লি। ভারতের মাটিতে বসে প্রকাশ্য রাজনৈতিক বিবৃতি না দেয়ার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছে দেশটির প্রশাসন। তারপরও বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে হাসিনাকে পুনরুবাসনও তাকে ক্ষমতায় বসানোর পায়তারা করছে মোদি প্রশাসন। নানা কারণে উঠেছে এমন গুনজন।
তবে অন্য অনেকের মতো আশাবাদী হতে রাজি নন ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার বিনাক্রঞ্জন চক্রবর্তী। তিনি মনে করেন হাসিনার বয়স ১০ বছর কম হলে দেশে ফিরে দলের হাল ধরতে পারার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব না। হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার গত ১০০ দিনে সামনে এসেছে তার চট করে দেশে ঢুকে যাওয়া সহ বিভিন্ন আলাপ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেত্রীর প্রত্যাবর্তন নিয়ে আশাবাদী হয়েছেন বহু নেতাকর্মী। দিল্লির একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি জানায় বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ এখনো গরম তাই লুজ বলের মতো সুযোগের অপেক্ষায় আছে নয়া দিল্লি । তার এমন মন্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে একসময়ের প্রতাপশারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হয়তো চলতে হবে ভারতের ইশারায়।