আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৪ ● ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৪
 
 width=
 
 
 width=
 
শিরোনাম: নাসির উদ্দীনকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশন গঠন       আমরা কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে না- জাপা কো চেয়ারম্যান মোস্তফা       স্বামীর যে তিনটি আচরণে দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যায়       পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নামলো ১৪ ডিগ্রিতে       বেরোবিতে ”ক্লিন ক্যাম্পাস, গ্রিন ক্যাম্পাস” ইভেন্ট অনুষ্ঠিত       

 

মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন “ চিনি মসজিদ “

মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, দুপুর ১০:২৯

ফাইল ছবি

ইতিহাস ও ঐতিহ্য:  নীলফামারীর সৈয়দপুরে কয়েকটি প্রাচীন স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম চিনি মসজিদ। এটি মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। নীলফামারী জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগে এই মসজিদ অবস্থিত। 

এলাকাবাসী ও মসজিদ কমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৮৬৩ সালে হাজি বাকের আলী ও হাজি মুকু ইসলামবাগে ছন ও বাঁশ ব্যবহার করে মসজিদটি নির্মাণ করেন। শঙ্কু নামের এক ব্যক্তি দৈনিক ১০ আনা মজুরিতে নির্মাণকাজ শুরু করেন। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তাকে সাহায্য করেন। সে সময় মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৯ হাজার ৯৯৯ রুপি। 

১৯২০ সালে হাজি হাফিজ আবদুল করিমের উদ্যোগে ৩৯ ফুট বাই ৪০ ফুট আয়তনের মসজিদটির প্রথম অংশ পাকা করা হয়। তিনি নিজেই নকশা এঁকেছিলেন। পরে ১৯৬৫ সালে মসজিদের দক্ষিণ দিকে ২৫ বাই ৪০ ফুট আয়তনের দ্বিতীয় অংশ পাকা করা হয়। সম্প্রতি এটি আরও সম্প্রসারিত করা হয়েছে। বগুড়ার একটি গ্লাস ফ্যাক্টরি ১৯৬৫ সালে চিনি মসজিদের জন্য প্রায় ২৫ টন চীনা মাটির পাথর দান করে। এগুলো দিয়ে মোড়ানো হয় মসজিদের মিনারসহ বড় তিনটি গম্বুজ। মসজিদটির মূল অংশের বর্ণ অনেকটা লালচে হলেও, একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়, পরবর্তী সময়ে নির্মাণ করা অংশ অনেকটা সাদা। ১৯৮০-এর দশকে মসজিদের শেষ অংশ পাকা করা হয়। কারুকার্যের জন্য কলকাতা থেকে মর্মর পাথর ও চীনামাটির নকশা করা থালা আনা হয়। মসজিদের অধিকাংশ কারুকাজ চীনামাটির। কারিগরও কলকাতা থেকে আনা হয়েছিল। সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দেয়ালে চীনামাটির থালা ও কাচের টুকরা বসানো হয়। এ পদ্ধতিকে ‘চিনি করা’ বা ‘চিনি দানার’ কাজ বলা হয়। ধারণা করা হয়, এখান থেকেই এর নামকরণ হয় ‘চিনি মসজিদ’। 

 

মসজিদটি নির্মাণে মুঘল আমলের স্থাপত্যশৈলী অনুসরণ করা হয়েছে। মসজিদের দেয়ালে ফুলদানি, ফুলের তোড়া, গোলাপ ফুল, একটি বৃন্তে একটি ফুল, চাঁদ-তারাসহ নানা কারুকাজ করা হয়েছে। মসজিদটি নির্মাণে প্রচুর মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ২৭টি বড় মিনার, ৩২টি ছোট মিনার ও তিনটি বড় গম্বুজ রয়েছে। দোতলা মসজিদে প্রবেশ পথের পাশে আজান দেওয়ার জন্য মিম্বার রয়েছে। মসজিদে ২৪২টি শঙ্কর মর্মর পাথর আছে। মসজিদের বারান্দা সাদা মোজাইক করা। মসজিদের সম্পূর্ণ অবয়ব রঙিন পাথরে মোড়ানো। মসজিদে প্রবেশের জন্য উত্তরে ও দক্ষিণে একটি করে প্রধান দরজা আছে। দোতলায় একটি ভবনসহ একটি মেহমানখানা আছে। সেখানে পর্যটকদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।

 

বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে মুঘল শাসক ও অন্যান্য মুসলিম নবাবের হাতে নির্মিত অনেক মসজিদ কালের সাক্ষী হয়ে আছে। কিন্তু এটিই একমাত্র মসজিদ যা এলাকাবাসী ও সর্বসাধারণের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নির্মিত হয়ে ইতিহাসের অংশ হয়েছে।

 

চিনি মসজিদ কমিটির সভাপতি হিটলার চৌধুরী বলেন, দৃষ্টিনন্দন চিনি মসজিদ নির্মাণের পেছনে বহু মানুষের শ্রম-ঘাম রয়েছে। অনেকেই স্বেচ্ছাশ্রমে মসজিদের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকলে পরিসর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পরে মূল নকশা ও কারুকাজের সঙ্গে মিল রেখে মসজিদটি আরও ২৫ ফুট সম্প্রসারিত করা হয়।

 

সৈয়দপুর পৌরসভার কাউন্সিলর আনোয়ারুল ইসলাম মানিক নিয়মিত এই মসজিদে নামাজ আদায় করেন। তিনি বলেন, ‘এই মসজিদ আমাদের গর্বের স্থাপনা। ১৬০ বছর পরে এসেও তা ঠিক কতটা জীবন্ত! মসজিদটির দিকে একবার তাকালে মন জুড়িয়ে যায়। মসজিদটি টিকে থাকুক যুগ যুগ ধরে।’

উত্তর বাংলা/ র,ম 

মন্তব্য করুন


 

Link copied