রংপুর ; রংপুরের ৫ জেলায় তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, দুধকুমারসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে শুকনো মৌসুমে জেগে ওঠে বিস্তীর্ণ চর। এবছর প্রায় এক লাখ হেক্টরের বেশি জেগে ওঠা চরে এক হাজার কোটি টাকার বেশি ফসল উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এসব ফসল কৃষকদের বাড়তি আয়ের পাশাপাশি এই অঞ্চলের অর্থনীতির গতি সচল রেখেছে।
প্রতি বছর এ অঞ্চলে বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে শত শত মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েন। আবার শুকনো মৌসুমে জেগে উঠে চর সবুজে সবুজে ভরে উঠে কৃষকদের মাঝে স্বস্তির নিশ্বাস এনে দেয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, ঘাঘট, চারালকাটাসহ অন্যান্য নদ-নদীগুলোতে ৭৩৫টি চর রয়েছে। এসব চরের জমির পরিমাণ একলাখ ৪ হাজার ৫৫৪ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ যোগ্য জমি রয়েছে ৮১ হাজার ৩০১ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার ফসল উৎপাদন হলে মোট ১২০০ কোটি টাকার ফসল চরের কৃষকরা ঘরে তুলবেন।
জেগে উঠা এসব চরের জমিতে আলু, ভুট্টা, গম, বাদাম, তিল, তিসি, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুন, করলা, সরিষা, সূর্যমুখী, গাজরসহ বিভিন্ন শাকসবজি আবাদ হচ্ছে। ফলে এখন চরের যেদিকেই তাকানো হয়, সে দিকেই দেখা যায় সবুজের সমারোহ। চর এখন সবুজের বাগানে ভরে উঠেছে।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে এসব চরে আলু প্রতি হেক্টরে ২৪-২৫ মেট্রিক টন, ভুট্টা ১২-১৩ মেট্রিক টন, গম তিন থেকে সাড়ে ৩ টন, শাক সবজি প্রতি হেক্টরে ১৫ থেকে ২০ টন উৎপাদন হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে এসব ফসল ফলায় কৃষকরা বন্যার সময় প্লাবিত হওয়ার দুঃখ কিছুটা ভুলে যাচ্ছেন। নদী পানি শূন্য হয়ে পড়ায় সেগুলো এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়ে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন করছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি ইউনিয়নের আবুল কালাম, মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, বন্যার সময় তিস্তাে দুইপাড় প্লাবিত হলেও শুকনো মৌসুমে ফসলের আবাদ করে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য আসে। চরের অধিকাংশ মানুষ এখন বিভিন্ন প্রজাতির ফসল উৎপাদন করে দরিদ্রতা দূর করছেন।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার চারালকাটা নদীর চরের কৃষক মাহাবুব মিয়া, রবিউল ইসলাম বলেন, চরে পিঁয়াজ, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল ফলিয়ে তাদের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, রংপুর অঞ্চলের চরে ৮০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়েছে। চরের জমিতে ফসল ফলিয়ে কৃষকরা গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছে।