নিউজ ডেস্ক: নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে রোকেয়া দিবস পালন উপলক্ষে তার স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই শতাধিক শিশুশিক্ষার্থীকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাদের এ অপেক্ষা ছিল অতিথিদের আগমনের জন্য। প্রচণ্ড শীতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনায় জেলাজুড়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে তার জন্মস্থান রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে অস্থায়ীভাবে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আশপাশের বিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক শিশুশিক্ষার্থী সকাল ৮টা থেকে স্কুলড্রেস পরে বসে থাকে। তাদের বলা হয়েছিল, রংপুর থেকে অতিথিরা আসলে তাদের সঙ্গে সেখানে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে।
সকাল ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হয় দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। দীর্ঘ সময় অবস্থান করার কারণে অনেক শিশু অসুস্থ হওয়ার উপক্রম হয়।
এদিন স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদনে আসা শিশুশিক্ষার্থী লাইজা ইয়াসমিন, আফনান মোস্তফা, আমিনুল ইসলামসহ অন্যান্যরা জানায়, দুপুর সাড়ে ১২টায় শ্রদ্ধা নিবেদন করতে তাদের সাড়ে ৪ ঘণ্টা আগ থেকে ফুল হাতে বসিয়ে রাখা হয়।
আফনানের মা মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে সকালের নাস্তা না খেয়ে চলে এসেছিল। আমরা ভাবতেই পারিনি আমাদের এত দীর্ঘ সময় শুধু অতিথিদের আগমনের জন্য বসিয়ে রাখা হবে। এমন মহীয়সী নারী (বেগম রোকেয়া) পায়রাবন্দ তথা নারী জাতির গর্ব। অন্তত দিবসটির মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হলেও অতিথিদের সময় মেনে চলা উচিত ছিল। শিশুদের এত দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে বরং বেগম রোকেয়াকেই অসম্মান করা হয়েছে।’
ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিভাবকরা
শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা রোকয়া অনুরাগীদের অভিযোগ, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে নিয়ে আজও বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। তারা বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার জীবন সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা যে সমতার কথা শিখেছি, সেই আদর্শ অনুষ্ঠানের আয়োজনে সমতা প্রতিফলিত হওয়া উচিত ছিল।’
যদিও আয়োজকরা বিলম্বের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘শহরে নানা প্রোগ্রামের কারণে অতিথিদের আসতে দেরি হয়েছে।’
এদিকে, দুপুর সাড়ে ১২টায় রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মসূচিতে থাকায় তার আসতে দেরি হয়েছে জানিয়ে বলেন, ‘এটা অনিচ্ছাকৃত দেরি।’ তবে অনুষ্ঠানে কারা অতিথি ছিলেন তার তালিকা দুপুর ১২টা ৪০ পর্যন্ত গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষানুরাগীরা বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার মতো ব্যক্তিত্বের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এমন পরিস্থিতি নতুন প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, প্রতিবারের মতো এ বছরও দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করছে সরকার। দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি পালন করছে।