মমিনুল ইসলাম রিপন: রংপুরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলা কালে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে মহানগর পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের পশুরাম থানা সভাপতি সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় ও তার সঙ্গি সবুজকে হত্যা করার ঘটনায় অবশেষে রংপুর মেট্রোপলিটান কোতয়ালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার বাদী হয়েছেন নিহত হারাধন রায়ের স্ত্রী কনিকা রানী। মামলার এজাহারে অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনের কথা উল্লেখ করা হলেও কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে মামলা দায়ের করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেট্রোপলিটান কোতয়ালী থানার ওসি আতাউর রহমান।
থানায় দায়ের করা এজাহারে নিহত হারাধন রায়ের স্ত্রী কনিকা রানী অভিযোগ করেন তার স্বামী রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পর পর তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর এবং রংপুর মহানগর পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক এবং মেট্রোপলিটান পশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
গত ৪ আগষ্ঠ দেশ ব্যাপি চলমান নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সকাল অনুমান ১০ টার দিকে তার স্বামী হারাধন রায় ও তার সঙ্গি সবুজ (৫০) পিতা মোকসেদ আলী ঠিকানা জলছত্র চৌধুরী পাড়া রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। ওই দিন সন্ধা ৬ টার সময় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে তার স্বামী হারাধন রায় ও তার সঙ্গিকে দুস্কৃতিকারীরা তাদের হত্যা করেছে তাদের মৃত দেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। এরপর আমি ও আমার স্বজন ও এলাকাবাসি হাসপাতালে গিয়ে তাদের মৃত দেহ সনাক্ত করি। সেখানে উপস্থিত লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি ৪/০৮/২৪ইং তারিখে দুপুর অনুমান সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর মহানগর কোতয়ালী থানাধিন বেতপট্টি মোড়ে আমার স্বামী হারাধন রায় তার সঙ্গি সবুজ আওয়ামী লীগের মিছিলে যোগদান করেছিলো। সে সময় ৪/৫শ বিক্ষুব্ধ জনতা ও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। সে সময় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা পিছু হটলে অনুমান ৪/৫শ বিক্ষুব্ধ জনতা আমার স্বামী হারাধন রায় ও তার সঙ্গি সবুজকে বেতপট্টি চার মাথা মোড়ে পেয়ে লাঠি , সোডা , লোহার রড, চাকু সহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে কুপিয়ে জখম করে নৃশংস ভাবে হত্যা করে।
বিকেল অনুমান সাড়ে ৩ টার দিকে আমার স্বামী হারাধন রায় ও তার সঙ্গি সবুজের মৃত দেহ ডিশের লাইনের তার পেচিয়ে তাদের লাশ ছেচরিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের সামনে ওভার ব্রীজের সামনে নিয়ে এসে পাকা রাস্তার উপর ফেলে রাখে।
পরবর্তীতে রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহবুবার রহমান টিটু ও ৫ ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোকলেসুর রহমান তরু সহ আরো কয়েকজন তাদের মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর সিটি করপোরেশনের এ্যাম্বুলেন্স যোগে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষনা করে। পরের দিন ৫ আগষ্ঠ তাদের মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে আমার স্বামীর মরদেহ ফকিরগজ্ঞ শ্মসানে দাহ করে এবং নিহত পারভেজের মরদেহ নগরীর বুড়িরহাট চব্বিশ হাজারী কবরস্থানে দাফন করে।
এজাহারে তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীর মৃতুতে আমি শারীরিক ও মানসিক ভাবে অসুস্থ থাকায় এবং আমার স্বামীর শবদেহের ধর্মীয় আনুষ্ঠনিকতা শেষে মামলা করতে বিলম্ব হলো।
এদিকে মামলাটি ২/১০/২৪ইং তারিখে রংপুর মেট্রোপলিটান কোতয়ালী থানায় দায়ের করা হলেও বিষয়টি আজ শুক্রবার জানাজানি হয়ে যায়। পরে বিষয়টি নিয়ে কোওয়ালী থানায় যোগাযোগ করা হলে থানার ওসি আতাউর রহমান মামলা দায়ের করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন মামলা নম্বর ৬ তারিখ ২/১০/২৪ইং ধারা দন্ড বিধি আইনের ১৪৩/১৪৮/৩০২ দন্ড বিধি।
অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সাথে শুক্রবার সন্ধা সোয়া ৭ টার দিকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার কাউন্সিলর হারাধন রায় ও একজনের লাশ সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের সামনে পড়ে থাকার খবর পেয়ে দুই কাউন্সিলর সহ অন্যান্যদের সহায়তায় সিটি করপোরেশনের এ্যাম্বুলেন্স মারফত লাশ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে জানান।