মমিনুল ইসলাম রিপন: সারাদেশের মতো রংপুরেও ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা। এবার রংপুরে জেলা ও মহানগর মিলে ৮৩৫টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দূর্গা উৎসব পালিত হচ্ছে। পূজায় আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যের আইন সহায়তার জন্য রংপুরে ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালন করবে ১৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট। সেই সাথে ১০ প্লাটুন সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবেন এবারের পূজায়।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তরা আসতে শুরু করেন। ভক্তদের বাসনা পৃথিবী থেকে সব অশুভ বিনাশ করে শান্তির বার্তা দিবেন দুর্গতিনাশিনী সেই প্রত্যাশায় শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা। দুর্গতিনাশিনী মর্তলোকে দোলনায় আগমনের পর হাতির পিঠে চড়ে রোববার দশমীর বিজয়যাত্রার মাধ্যমে কৈলাসে স্বামীর সংসারে ফিরে যাবেন দশভুজা দুর্গা।
পূজা উদযাপন কমিটি সুত্রে জানা যায়, এবার রংপুরে ৮৩৫টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দূর্গা উৎসব পালিত হচ্ছে। এরমধ্যে রংপুর নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে ১৫২টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গা উৎসব পালিত হচ্ছে। নগরীর বাহিরে জেলার ৮ উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ৬৮৩টি পূজা মন্ডপ হয়েছে । যার মধ্যে কোতয়ালী থানাধীন ৬৮টি, গঙ্গাচড়ায় ৯৫টি, তারাগঞ্জে ৪৭টি, বদরগঞ্জে ১২৩টি, মিঠাপুকুরে ১০৬টি, পীরগঞ্জে ১০৫টি, পীরগাছায় ৭৩টি ও কাউনিয়ায় ৬৬টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। মন্ডপের আশেপাশে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। প্রতিটি পূজা মন্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। পূজা মন্ডপে আইনশৃঙ্খলায় পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্য এবং স্থানীয়ভাবে স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ। তাছাড়া রংপুর জেলার ৮ থানায় ৮ প্লাটুন এবং মহানগরীতে ২ প্লাটুন সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবেন এবারের পূজায়। সেই সাথে যেসব পূজা মন্ডপ ঝুকিপূর্ণ সেই সব পূজা মন্ডপে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে মোতায়েন।
দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যের আইন সহায়তার জন্য রংপুরে ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালন করবে ১৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট। তারা ৯ অক্টোবর থেকে আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা ও মহানগরের পূজার যাবতীয় তথ্য আদান-প্রদানে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ২১০ নং কক্ষে সহকারী কমিশনার গোলাম সাকিব খান এর সার্বিক দায়িত্বে রোষ্টার অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন ১৪ জন কর্মচারী।
রংপুর মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, উত্তর জনপদের সম্প্রীতির রংপুরে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব ধর্মালম্বীদের সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এমন কোন আশঙ্কা নেই। তাছাড়া প্রতিটি পূজা মন্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। সেই পুলিশ আনসারের পাশাপাশি মন্ডপের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে। নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সহেযাগিতার হাত বাড়িয়েছেন। শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপিত হবে এই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। এসময় তিনি রংপুরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা: শাহনাজ বেগম বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে উদযাপনের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পুলিশ আনসার সদস্যের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে। এবারের পূজায় ১০ প্লাটুন সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবেন । এছাড়াও যেসব পূজা মন্ডপ ঝুকিপূর্ণ সেই সব পূজা মন্ডপে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। সেই সাথে ১৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালন করবেন এবং ২৪ ঘন্টা সার্বক্ষনিক মনিটরিং করার জন্য নিয়ন্ত্রন কক্ষ খোলা হয়েছে। সেখানে ২৪ ঘন্টাই দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে আইনশৃঙ্খলার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।