অনলাইন ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে জনরোষ থেকে বেঁচে গেলেও বিপদে পড়েছেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও নেতাকর্মীরা। সরকার পতনের পর আত্মগোপন করেছেন রংপুরের এমপিরাও।
গত পাঁচ বছরে রংপুরে আওয়ামী লীগের সব এমপির অর্থ ও সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। কারো নগদ অর্থ বেড়েছে, কারো বেড়েছে ব্যাংকে জমা, কেউ কিনেছেন জমি, কেউ গড়েছেন অট্টালিকা।
আন্দোলনের ঘটনার পর গত দুই মাস রংপুর-৬ আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় সংসদের স্পিকার নিজ এলাকায় আসেননি। চারটি আসনের সাবেক এমপিসহ দলের জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এখন গ্রেপ্তার ও প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধাসহ ডজনখানেক করে মামলা দেওয়া হয়েছে।
এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও। বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদে জেলার সংসদীয় ছয়টি আসনের পাঁচটিতেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা ও একটিতে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির এমপির বিরুদ্ধে রংপুরে এখনো মামলা হয়নি।
আত্মগোপনে থাকা রংপুরের সাবেক এমপিরা হলেন রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও আংশিক সিটি করপোরেশন) আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু, রংপুর-২ (বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ) আসনে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, রংপুর-৪ (পীরগাছা ও কাউনিয়া) আসনের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক টিপু মুনশি, রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিমা জামান ববি। তিনিও হত্যা মামলার আসামি।
গত ৪ আগস্ট গঙ্গাচড়ায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল হয়। ওই দিন আন্দোলনকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হন রংপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য বাবলু।
তিনি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। রংপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ডিউকের বাসায় তিন দফা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে মালামাল লুট করা হয়। এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী সুইট, পৌর মেয়র টুটুল চৌধুরী, সাবেক মেয়র উত্তম কুমার সাহা, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক পলিন চৌধুরীসহ সান্টু চৌধুরী ও লিটন চৌধুরীর বাড়িতেও হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও ছিলেন এলাকাছাড়া। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মিঠাপুকুরের আগের সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমানের বাড়িতেও আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে রংপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও সদ্য বিলুপ্ত সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী স্থানীয় না হওয়ায় পীরগঞ্জে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি। সরকার পতনের দিন শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি হিসেবে পরিচিত পীরগঞ্জে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে।
এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল ও সংরক্ষিত আসনের এমপি নাসিমা জামান ববির বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তুষার কান্তিকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এখন তিনি রংপুর জেলখানায়।
রংপুরের মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ছিলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং সাবেক এমপি আশিকুর রহমান। বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির অভাব নেই তাঁদের। জানা গেছে, রংপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য টিপু মুনশি বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে রংপুর-ঢাকা ও বিদেশে বাড়িগাড়ি ও হাসপাতাল করেছেন তিনি।
অপরদিকে রংপুর-৫ আসনের সাবেক এমপি আশিকুর রহমানের মালিকানায় মেঘনা ব্যাংক, বিদেশে কয়েকটি বাড়ি ও ঢাকায় দেড়-ডজন বাড়ি আছে। তিনি টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম ও লুটপাট করে অনেক টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলা ও হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। যারা এসব ঘটনায় জড়িত, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খবর-দৈনিক কালের কন্ঠ