হাসান আল সাকিব: রংপুরে জনপ্রিয় ‘হাড়িভাঙ্গা আমের’ বাম্পার ফলন হয়েছে। জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে হাড়িভাঙ্গার দখলে রয়েছে রংপুরের বাজারগুলো।তবে কঠোর লকভাউনে দূরপাল্লার বাস, ট্রেনসহ ব্যক্তিগত যােগাযােগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাঁড়িভাঙ্গার মূল উৎস মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জে আমের বাজারে ধস নেমেছে।পাইকারি গ্রাহক না থাকায় ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
১ জুলাই থেকে চলছে কঠোর লকডাউন । গ্রাহক না থাকায় মৌসুমি আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে গত বছর প্রতি মণ আম দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এবার তার অর্ধেক দামেও বিক্রি করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে । প্রতি বছর হাঁড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করে রংপুরের চাষিরা আয় করেন প্রায় ২০০ কোটি টাকার উপরে। এবার সেই চিত্র ভিন্ন। আম চাষিরা চলতি মৌসুমে আম বিক্রি করে ১০০ কোটি টাকা আয় করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার (২ জুলাই) সকালে পদাগঞ্জ হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্লাস্টিকের ক্যারেটে থরে থরে সাজানো হাড়িভাঙ্গা আম। গ্রাহকের অভাবে আম নিয়ে অপেক্ষায় দিন পার করছেন শত শত আম চাষি। বিক্রির অভাবে আড়তে স্তুপ করে রাখা হয়েছে আম।
আম বাগান ক্রয় করা মেহেদী হাসান নামে এক ব্যবসায়ী উত্তর বাংলাকে বলেন, "দিন দিন যেভাবে দাম কমে যাচ্ছে তাতে মনে হয় এবার হাড়িভাঙ্গা আমে লোকসানের সম্ভাবনা বেশী রয়েছে।তিনি আরও বলেন,লকডাউনে হয়তো ২০ টাকা বা তার কমে কেজি দরে এবার আম বিক্রি করতে হবে।"
অনলাইনে আম ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, "অনলাইনে অর্ডার নিয়ে সেই অনুযায়ী কুড়িয়ারের মাধ্যমে আম পাঠাতাম।কিন্তু লকডাউনে তো ক্রেতা কুড়িয়ার থেকে এসে আম তুলতে পারবে না।"
আম ব্যবসায়ী মহাসিন মিয়া উত্তর বাংলাকে বলেন, 'লকডাউনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা আম কিনতে চাচ্ছেন না। কারণ, ঢাকায় নিয়ে তারা কার কাছে আম বেচবেন।"
আম চাষি রফিক ইসলাম জানান,গত বছর এই সময় তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হাড়িভাঙ্গা আমের মণ গেছে।কিন্তু এবছর সেই আম ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা করে যাচ্ছে।তিনি আরও জানান,বাজারে দাম না থাকায় বাগানেই আম পেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি অফিসার আনােয়ার হােসেন উত্তর বাংলাকে বলেন, উপজেলায় এক হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১২ থেকে ১৩ টন আম উৎপাদন হয়েছে।তিনি আরও বলেন, হাড়িভাঙ্গা আমের বাম্পার ফলন হলেও লকডাউনে দেশের এমন পরিস্থিতিতে আমাদের তেমন কিছু করার নেই।তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।